অকালের মর্যাদার লড়াই

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্য রাজনীতিতে রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখা গেলো অনেক দিন পর । সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সময়ে কারাবাস আর দুর্নীতির মামলা , অভিযোগের শিকার প্রাক্তন মন্ত্রী বাদল চৌধুরীকে হাসপাতালে গিয়া দেখিয়া আসিলেন , খোঁজখবর লইলেন সদ্য শপথ লওয়া মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা । এই সৌজন্যতা যে সদ্য প্রাক্তন দেখান নাই এমন নহে । কেশব মজুমদারের চিকিৎসার খবর লইতে হাসপাতালে গিয়াছিলেন সদ্য প্রাক্তন । যদিও জেল হইতে ছাড়া পাইবার পর বার কয়েক অসুস্থ হইয়া হাসপাতালে গিয়াছিলেন বাদলবাবু , কিন্তু তাহার খবর লইতে যান নাই সদ্য প্রাক্তন। দেখা করিতে গেলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী । ইহাই শেষ নহে , বরং শুরু বলা যায় । সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বারংবার তিনি রাজনৈতিক সৌজন্যতা আর সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের কথা বলিতেছেন । যাহা অনেকদিন পর শোনা যাইতেছে শাসক দলের তরফে । ভোট লইয়া ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গে যেই প্রকার মারামারি হইয়া থাকে তাহা ভূ – ভারতে বিরল । একসময় এই ঘটনার জন্য বাম রাজনীতিকে দায়ী করা হইত। যেইহেতু এই দুই রাজ্যেই বামেদের উপস্থিতি ছিল । কালের আবর্তে বামেরা আজ দুই রাজ্যের কোথাও নাই । বঙ্গে বামেদের প্রভাব কমিয়া গিয়াছে এক দশকেরও অধিক কাল আগে । তবুও রাজনৈতিক মারামারির সংস্কৃতি সমানে চলিতেছে । ত্রিপুরাতেও গত চার বৎসর যাবৎ বামেরা ক্ষমতা হইতে দূরে রহিয়াছে , তবুও হিংসা কমে নাই ।

আবার অন্যদিকে কেরলে বামেরা এখনও প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখিয়াছে , কিন্তু ওই রাজ্যে কোনওকালেই রাজনীতি লইয়া মারামারি বা খুনখারাবির খবর শুনিতে হয় না । তাহা হইলে বুঝা যায় এই সংস্কৃতি অনেকটাই মাটির বা জলের দোষ । ইহা লইয়া মাথাব্যথা দেখাইতেছেন একজন সদ্য চেয়ারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী । ইহা নিঃসন্দেহে সুখের বিষয় এই রাজ্যের মানুষের জন্য । যদিও আমরা বিশ্বাস করিতে পারি না তিনি চাহিলেই রাজনীতি হিংসামুক্ত হইবে । তবে সৌজন্যতার বিনিময়ে সৌজন্যতাও দেখা যাইতেছে । মুখ্যমন্ত্রী মানিকের বক্তব্যের জবাবে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার প্রকারান্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত বৃত্তের মানুষ বলিয়াই সম্বোধন করিলেন । প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়াইয়া বলিলেন , মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সহিত সিপিএম পার্টির ঘনিষ্ঠতা পুরানো । একসময় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সহোদরকে পুর নিগমের মনোনীত কাউন্সিলার করিবার সুপারিশ করিয়াছিল সিপিএম এবং তিনি কাউন্সিলার হইয়াছিলেন । কথায় আছে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখিলে চমকাইয়া উঠে । ত্রিপুরার মানুষেরা নিজেদের অভিজ্ঞতায় জানেন , ভোট মানে সিন্দুর বরণ মেঘ নহে ইহা আগুনই । ঘর পুড়িবে , লোক মরিবে । বাইক বাহিনী , হেলমেট বাহিনী , হার্মাদ বাহিনী নানান নাম শোনা যাইবে বিরোধীদের মুখে । প্রশ্ন আসিবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লইয়া । সেই অর্থে ত্রিপুরাবাসী এই সময়ে লাল মেঘ কিংবা ধিকধিক কোনও আগুনের শিখাই দেখিতেছেন । কারণ রাজ্যে উপভোট আসিয়াছে ।

নির্ঘন্ট ঘোষণার পর এইবার প্রার্থী ঘোষণার পর্ব । সিপিএম তাহার প্রার্থী জানাইয়া দিবার পর এইবার কংগ্রেস , বিজেপিও প্রার্থী ঘোষণা করিবে সহসাই । চার আসনের দুইটিতে মর্যাদার লড়াই এই ভোটে । বড়দোয়ালী আর আগরতলা । এই দুই কেন্দ্রের বিধায়ক যথাক্রমে আশিস সাহা এবং সুদীপ রায় বর্মণ দলত্যাগ করায় উপনির্বাচন ডাকিতে হইলো । তাঁহারা দুইজন এই দুই কেন্দ্রে লড়াই করিয়া বিধানসভায় ফিরিয়া আসিয়া প্রমাণ করিবেন , রাজ্যের রাজনীতির ময়দানে তাহাদের প্রতি উপেক্ষা ভোটাররা মানিয়া লন নাই । এই লড়াই প্রথম হইতেই তাহাদের জন্য কঠিন ছিল । বলা যায় ত্রিপুরার রাজনীতির ইতিহাসে সর্বকালের কঠিন এবং জটিল একসময়ের সামনে দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন এই দুই নেতা । রাজনীতিতে , যুদ্ধে জয় পরাজয় কোনটাই অসম্মানের নহে । বিশেষ করিয়া গত চার বৎসরে নানান নির্বাচন , বিশেষ করিয়া পুর নিগম নির্বাচন যেই প্রকারে পরিচালনা করা হইয়াছে , ইহার পর ভোটে দাঁড়াইয়া বিরোধী দলের কেহ হারিয়া গেলে সেই পরাজয় লইয়া আর উপহাস চলিবে না । অন্তত মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সৌজন্যতার রাজনীতির কথা উচ্চারণের আগে অবধি তাহাই ছিল শতভাগ সত্য । কিন্তু প্রশ্ন হইলো , মুখ্যমন্ত্রীকেও জিতিয়া আসিতে হইবে । জীবনে এই প্রথম জনগণের সামনে যাইয়া ভোটের জন্য হাত পাতিবেন । উপভোটে জিতিয়া আসিয়া তিনি রাজ্যসভার সদস্যপদ হইতে পদত্যাগ করিবেন । মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়া ২০২৩ – এর নির্বাচন অবধি সকল ঝড় ঝাপটা হইতে দল এবং সরকারকে সুরক্ষিত রাখিবেন ।

কিন্তু কোন্ কেন্দ্রের প্রার্থী হইবেন তিনি ? দল যতক্ষণ অবধি ঘোষণা না করিতেছে ততক্ষণ অবধি সাসপেন্স থাকিয়া যাইতেছে । সাধারণ হিসাবে তিনি যেইহেতু বড়দোয়ালী বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা এবং ভোটার , হয়তো তিনি এই কেন্দ্রেই প্রার্থী হইবেন । তাহা ছাড়া আগরতলার অভিজাত পরিবারের সন্তান এবং চিকিৎসক হিসাবে রাজধানীর এই অঞ্চলে বেশি পরিচিতি তাঁর । আবার যেইহেতু এর আগে তিনি কোনও আসনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তাই চার আসনের তিনটির যে কোনওটিতে প্রার্থী হইতে পারেন । একটি আসন সুরমা যেইহেতু তপশিল জাতি সংরক্ষিত তাই আগরতলা , যুবরাজনগরেও তিনি প্রার্থী হইতে পারেন । ফলে হাইভোল্টেজ মর্যাদার লড়াই কেবল বড়দোয়ালী কিংবা আগরতলাতেই নহে , হইতে পারে যুবরাজনগরেও । তবে সবই নির্ভর করে বিজেপির সিদ্ধান্তের ওপরে ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

21 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

21 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago