অগ্নিগর্ভ পথ

 অগ্নিগর্ভ পথ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সশস্ত্র সেনা হইবে পেশাদার। দেশের জন্য সে প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকিবে। সেই পেশাদারিত্বে থাকিবে দেশপ্রেম। আর এই প্রেম তখনই জন্মিবে বা সুনিশ্চিত হইবে যখন সে বুঝিতে পারিবে তাহার অনুপস্থিতিতে তাহার প্রিয়জন অভুক্ত মরিবে না। প্রিয়জন, পরিজনেরা পাইবে রাষ্ট্রের সুশীতল ছায়া। পাইবে বাঁচিয়া থাকিবার নিশ্চয়তা এবং প্রাক্তন কিংবা বলিপ্রদত্ত সেনার পরিজন হিসাবে রাষ্ট্রের অনুকম্পা। ভারত দেশে প্রথম হইতে প্রথাতেই চলিয়াছে সেনা বাহিনী। কিন্তু মোদি সরকার অগ্নিপথে নামিয়া সেনা বাহিনীকে ঠিকা নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানায়। অর্থাৎ এখন হইতে সেনাবাহিনী হইবে ভাড়াটে।

ভাড়াটিয়ার মনে তার বসতিস্থল লইয়া যেমন দরদ বা দায় থাকে না তেমনি ভাড়াটে সৈন্যের ক্ষেত্রেও দেশপ্রেমহীন এক চাকরি অবশিষ্ট থাকিবে মাত্র। এই অবশেষ লইয়া যুদ্ধক্ষেত্রে কাহাতক যুঝিতে পারিবে দেশীয় বাহিনী?
আমাদের দেশের বীর সেনানী লইয়া আমাদের মনের মণিকোঠায় যে শ্রদ্ধা রহিয়াছে, ভারতীয় সেনা বাহিনীর যে গৌরব রহিয়াছে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে, তাহা কি ঠিকা প্রথায় রক্ষিত হইবে? অগ্নিপথ কি তাহা হইলে সকলই প্রশাসনিক ব্যয় কমাইবার এক উপায় মাত্র? মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পে ঢাকঢোল পিটাইয়া ঘোষণা করা হইল।

সেনা বাহিনীতে সরকার এই প্রকল্প অনুযায়ী ১৭ বছর বয়েসীদের নিয়োগ করিবে। বেতন হইবে মাসিক ত্রিশ হাজার টাকা। চার বছর চাকরির পর তাহাদের চাকরি শেষ হইয়া যাইবে এবং অনুকম্পা বশত কয়েক লক্ষ টাকা হাতে দিয়া তাহাদের বিদায় করিয়া দেওয়া হইবে।
অর্থাৎ সরকার এক যুবকের জীবনের সেরা চারটি বছর রাষ্ট্রের কাজে লাগাইবে কিন্তু বিনিম্ময়ে তাহাকে বা পরিবারকে কিছুই দেবে না। চার বৎসরের মধ্যে যুদ্ধে বা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী মোকাবিলা করিতে যাইয়া তাহার মৃত্যু না হইলে দেখা যাইবে ওই যুবক ২১ বৎসর বছরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা হিসাবে বেকার কাটাইতেছে। জীবনের সূচনাতেই তাহাকে কর্মহীন করিয়া দিল সরকার। এই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকে আর কে কোথায় চাকরি দেবে?

তাহা হইলে সরকার কি আর কোনও দিন পেশাদারি সেনা বাহিনী বলিয়া পরিচিত ভারতীয় সেনায় স্থায়ীভাবে লোক নিয়োগ করিবে না? তাহা হইলে বিশাল সংখ্যক বেকার যাহারা সেনা বাহিনীতে যোগদানের প্রস্তুতি লইতেছে তাহাদের কি হইবে? এই সকল প্রশ্ন কিন্তু বিজেপির অভ্যন্তরেও দেখা দিয়াছে।
দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, সরকারের এই আমলে শাসক বিরোধী কাহারও সুখ নাই। প্রতিনিয়ত মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে নতুন কোনও নিয়োগ হইতেছে না। ফলে সকলেই এক বাক্যে অসুখী। এর মধ্যে সরকারের অগ্নিপথ এর প্রকাশ আগুনে ঘৃতাহুতি করিল।

আগুন পথে পথে। কি করিয়া এমন অগ্ন্যুতপাত তাহা বুঝিতে পারিতেছে না সরকার এবং শাসক দল। তাহারা বুঝিতেই পারেন নাই, এই অগ্নিপথ শাসক বিজেপির সমর্থকদিগের পেটের আগুনকেও উস্কাইয়া দিবে। ফলে রাজ্যে রাজ্যে ছড়াইয়া পড়িয়াছে ক্ষোভের আগুন। এইবার দমকল ডাকিবার পালা সরকারের। লক্ষ লক্ষ চাকরি দিবার পরিকল্পনা লইয়াছিলেন যে সকল নীতিপ্রণেতারা তাহারা চাকরি লইয়া এইরকম রসিকতার খেসারত দিবেন তাদেরই দায়িত্ব আগুন নিভাইবার।
আগুন লইয়া খেলিতে গেলে হাত পুড়িবার শঙ্কা থাকিয়া যায়। হাত পুড়িলেও মুখ যাহাতে না পুড়ে সেইদিকে খেয়াল রাখা একান্ত আবশ্যক। তাই অগ্নিপথের আগুন নিভাইবার গরজ শাসকদলেরই থাকিবে। কারণ ভোট আসিতেছে। ২০২৪ শাসকদলের শিরে সংক্রান্তি হইয়া দাঁড়াইবে এখনই বেকারের চাকরির প্রত্যাশার মুখে ছাই ঢালিবার যে আয়োজন সেটি বন্ধ না করিলে।

দেশব্যাপী যে তুমুল রোষ এবং মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিল ইহাতে সন্দেহ নাই অগ্নিপথ আসলে কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত নহে এই পথা শাসকদলের সম্মুখে যাইবার পথ। বেকারত্ব, কর্মহীনতা আজ সারা দেশে তীব্র হইয়া উঠিয়াছে। মোদি সরকারের প্রতি মানুষ যে বিশ্বাস রাখিয়াছিলেন তাহা আগামীদিনে অটুট থাকিবে কি না তা এখন প্রশ্ন। কারণ প্রতিশ্রুতি মতন কিছুই পাওয়া যায় নাই। বেকারেরা পরপর দুইটি মেয়াদ অতিক্রম করিয়া চলিয়াছেন। দিত্বীয় মেয়াদ শেষে তাহাদের ধৈর্য বুঝি ফুরাইয়া গিয়াছে। নানা রাজ্যে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, আত্মহত্যা, মৃত্যু, রেলস্টেশন, ট্রেন জ্বালাইয়া দিয়া সরকারী সম্পদের অপচয় এই নজির মোদি সরকারের আট বৎসর এই বারই প্রথম ঘটিল। এই ঘটনা কোনও অগ্নিগর্ভ পথের ইঙ্গিত করিতেছে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.