অগ্নি নির্বাপকে অসন্তোষ চরমে, ফুঁসছে ফায়ারম্যান।
অনলাইন প্রতিনিধি :-চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজ্য অগ্নি নির্বাপক দপ্তরে। হাতেগোনা দু-একজন ফিল্ড স্টাফের দৌলতে রাজ্যের জরুরিভিত্তিক এই দপ্তরটিতে এখন কর্মসংস্কৃতি লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে । আগমার্কা বাম যুবনেতা হিসেবে যাদের পরিচয়, সেই তারাই এখন সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। পদস্থ কর্তাদেরও সেই অনুযায়ী বুঝিয়ে হাসিল করে নিচ্ছেন দপ্তরের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলিতে এনিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলেই অভিযোগ রয়েছে দপ্তর অভ্যন্তরে। শুধু তাই নয়, দপ্তর অভ্যন্তরে এমন আরও বহু দুর্নীতি এখন জাঁকিয়ে বসেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে নিষ্ঠাবান কর্মীরা এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকার পন্থা নিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও।
অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের একাংশ কর্মীর অভিযোগ, শোচনীয় অবস্থায় পরিণত হচ্ছে গোটা দপ্তরটি। একদিকে রয়েছে কর্মী স্বল্পতা, অন্যদিকে রয়েছে অপারেশন কর্মীদের যথাযথভাবে কর্মক্ষেত্রে না লাগানো। পর্যাপ্ত মিনিস্ট্রিয়াল স্টাফ থাকা সত্ত্বেও ফায়ারম্যান দিয়েই যতো সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। খোদ রাজধানী আগরতলার অধিকর্তা অফিস থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যের প্রায় সব স্টেশনগুলিতেই এখন এই অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি স্টেশন একাধিক অফিসার থাকার পরও নিয়মিতভাবে কেনইবা অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ করানো হচ্ছে (ফিল্ড স্টাফ) ফায়ারম্যানদের দিয়ে? কী-ই বা স্বার্থ লুকিয়ে থাকতে পারে এতে ? প্রশ্ন উঠেছে এনিয়েও। এক্ষেত্রে অফিসার সহ যাদের দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এমন সব কাজ করানো হচ্ছে, তাতে কার্যত তারা সকলেই একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। দুইয়েরই স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে বলেও অভিযোগ আনেন ফায়ারম্যানদের অনেকেই।যতদূর জানা যায়, এতে অফিসাররা যেমন একদিকে কাজের চাপ কমিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়ই আরামে আয়েসে কাটান, তেমনি যে সব ফায়ারম্যানরা অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন তারাও সুযোগ বুঝে নিজেদের অনুকূলে রাখছেন বদলি সহ চাকরি সংক্রান্ত নানা সুযোগ সুবিধাগুলি । এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে ময়দানে নামার প্রয়োজন দেখা দিলেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জরুরি এই দপ্তরটির কর্মীস্বল্পতার বিষয়টি। রাজধানী আগরতলার আশপাশ এলাকায় থাকা বিভিন্ন স্টেশনগুলি ছাড়াও এই গ্রাম পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকাগুলিতে। নানা সময়ে এ ধরনের বহু অভিযোগও উঠে আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আর এতে তীব্র ক্ষোভ ধুমায়িত হচ্ছে প্রায় সব কর্মীদের মধ্যে ।উদাহরণ হিসেবে সর্বাগ্রে তুলে ধরা হয়েছে রাজধানী আগরতলার অধিকর্তা কার্যালয়ে গত কয়েক বছর যাবৎই সংঘরাজ কায়েম করে চলা এক জুনিয়র অপারেটরের নাম । যার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলাও চলছে সম্প্রতি। অথচ এই মামলা চলাকালীন সময়ে বহু আগেই এক অর্ডার মূলে অফিসের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। এমনকী অর্ডার জারি করা না হলেও এমন অনেকেই রয়েছেন যারা অলিখিতভাবে নিজেদের আখের গোছাতে দপ্তরের অধিকর্তাকে একপ্রকার ভুল বুঝিয়ে একাধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। সহকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে গোটা দপ্তরটিকেই এখন এক প্রকার কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে যাদের দিয়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে, সেই তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা রয়েছে আদালতে।
অভিযোগকারীরা জানান, অধিকর্তা ওএস, হেড ক্লার্ক থেকে শুরু করে প্রায় সব পোস্টে কর্মী রয়েছেন, অথচ নিয়োগ থেকে শুরু করে বদলি, টেণ্ডার, এমনকী প্রমোশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলিও অপারেশন স্টাফদের দিয়ে করানো হচ্ছে। এতে দপ্তরের একাংশ স্টাফ এখন কোনও কাজেই আর আগ্রহ দেখাতে চাইছে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করার কিংবা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেও নানাভাবে বদলির ভয় দেখানো হচ্ছে তাদেরকে। অভিযোগকারীরা জানান, দুর্নীতি এতোটাই চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে জনগণের সেবায় নিয়োজিত থেকে দপ্তরের পক্ষ থেকে যেসব পুরুস্কার প্রদান করা হয়,সে সব পুরস্কারও এখন বগলদাবা করে নিয়েছেন তারা। এনিয়েও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দপ্তর অভ্যন্তরে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে দপ্তরের মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার দৃষ্টিআকর্ষণ করে অভিযোগকারীরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি তুলেন। যতদূর জানা যায়, শতাধিক সিনিয়র ফায়ারম্যানকে বঞ্চিত করে ইতিমধ্যেই জুনিয়র অপারেটর পদে প্রমোশন বাগিয়ে নিয়ে এখন দিব্যি আরামে আয়েসে দিন কাটাচ্ছেন তারা। যদিও এ সংক্রান্ত একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।