অগ্রাধিকারের বিষয়!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সম্ভল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং একই সঙ্গে চলতি সঅর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের আয় তথা জিডিপির হার ৫.৪ শতাংশ বিন্দুতে নেমে যাওয়ার মধ্যে কোনও কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কি না, সে নিয়ে অযথা মাথা ঘামানো নিষ্প্রয়োজন। শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রশাসনের কাছে এই মর্মে আপিল করেছে যেন সম্ভল জামা মসজিদ জরিপ বা সর্বেক্ষণের প্রশ্নে যথাসম্ভব শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে হবে। আদালতের বক্তব্য, সর্বোচ্চ আদালত চায় না যে বিষয়টি নিয়ে অন্য কিছু হোক, তাই আমাদের সবাইকে এ নিয়ে অতি সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা প্রকৃতই এক অদ্ভুত সময়ের সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছি। যেখানে গণতান্ত্রিক দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আসীন একটি রাজ্যের প্রশাসনকে নতুন করে রাজধর্ম স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতকে। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে জামা মসজিদের তলায় হিন্দু মন্দির আছে দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে এক আবেদন জমা পড়েছিল। আবেদনের আর্জি ছিল, মসজিদে জরিপ করা হলেই দাবির সত্যতা নিরুপণ করা সম্ভব হবে। সেই আবেদন গ্রহণ করে নিম্ন আদালত জরিপের নির্দেশ দিলে এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সংঘর্ষ এবং পুলিশের গুলীতে এগারোদিন আগে পাঁচজন নিহত হন। তারপর থেকে সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নাস্তি এবং থমথম করছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। বস্তুত, গত বছরের আগষ্টে কাশীর জ্ঞানবাপী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রেখে, সেখানে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ দপ্তরের (এএসআই) সমীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মসজিদ কমিটির আবেদনটি খারিজ করে দেওয়ার পরেই গোটা দেশে মসজিদের তলায় মন্দির খোঁজার বিষয়টি কার্যত মান্যতা পেয়ে গেছে। ভারতের ইতিহাস যে সমস্ত উদাহরণকে ঐতিহ্য ও ঐক্যের প্রতীক হিসাবে স্থান দিয়েছে, সংখ্যাগুরুবাদী রাজনীতির চোখে সে সবই ‘হিন্দু ভারতের পরাধীনতার লজ্জাজনক নিদর্শন’। ইতিহাসের এই স্মৃতি অপসারণের অভিযানকে ‘আইনসম্মত’ করে তুলতে ১৯৯১ সালের উপাসনা আইনকেই বাতিল করার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। নরসিমহা রাও সরকারের আমলে পাস হওয়া এই আইনে বলা হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট, অর্থাৎ স্বাধীনতার পর ধর্মীয় উপাসনাস্থলের কোনও পরিবর্তন করা যাবে না (শুধু অযোধ্যাকে ব্যতিক্রম)। উপাসনাস্থলের চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখার ভাবনা থেকে বলবৎ হয় ‘দ্য প্লেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট’।
গত সাত মাসের সময়কালে দেশের জিডিপির এমন অবনমন আগে হয়নি। এমতাবস্থায় দেশের সামনে অগ্রাধিকার কী, প্রতিটি মসজিদের তলায় মাটি খুঁড়ে মন্দির খোঁজা নাকি অর্থব্যবস্থার হাল শুধরানো? ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ, বিশেষত ৬ ডিসেম্বর দিনটি ভারতবর্ষে তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ভারতে হিন্দু রাজ যদি কখনও বাস্তব হয়ে ওঠে, তা হলে তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয় – স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনাকালে এ কথা বলেছিলেন সংবিধান রচনা সমিতির সভাপতি ও পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের প্রথম বিধি ও ন্যায় মন্ত্রী ভীমরাও আম্বেদকর। ১৯৯২-এর আগে ৬ ডিসেম্বরের প্রধান পরিচয় ছিল আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবস।কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে দিনটির নতুন পরিচয় যুক্ত হয়, যাকে আম্বেদকরেরই ভাবনার সূত্র ধরে ‘বিপর্যয়ের আগমন-বার্তা দিবস’ বললে খুব ভুল হয়কি!অযোধ্যা। কাশী। মথুরা। এবার সম্ভল। অফুরান বিতর্ক। মথুরার শাহি ইদগা, কাশীর জ্ঞানবাপী, সম্ভলের জামা মসজিদ সর্বত্রই আইনি লড়াই চলছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং
রাজস্থানে।ভোজশালা আর আজমের শরিফে। ভোজশালায় বিতর্কের হেতু, সরস্বতী মন্দির ভেঙে না কি তৈরি হয়েছে কামাল মওলা
মসজিদ।একইরকম বিতর্ক আজমের শরিফেও। সেখানে খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির দরগা নির্মিত হয়েছে শিব মন্দিরের উপর। আর এভাবেই ভারত এক নতুন ধর্মীয় সংঘাতের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যা দেখে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘মসজিদের নিচে মন্দির খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন? ইতিহাস তো সকলের জানা। মুসলিম শাসকেরা অনেক মন্দির ধ্বংস করেছিল। তাই বলে আজ কী দেশের মসুলিমদের সাজা দেওয়া যায়?
এখন স্পষ্ট যে, মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতির সুর আরও চড়বে। এতদিনে এও স্পষ্ট যে, ভারতীয় রাজনীতি থেকে ধর্মের মুদ্রাদোষ যাওয়ার নয়। প্রশ্ন হল, ধর্মভিত্তিক বিভাজনকারী রাজনীতি যখন দারিদ্র, ক্ষুধা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থানের অব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, এমন সমস্ত মৌলিক সমস্যার মূলোৎপাটন করতে পারে না, তখন পুরো বিষয়টিকে শুধুমাত্র ‘ধর্মের মুদ্রাদোষ’ হিসাবে চিহ্নিত করাটা সবদিক দিয়ে বোধহয় সমীচিন নয়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

9 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

10 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

11 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

12 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

12 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

13 hours ago