অথ: মথা কথন

 অথ: মথা কথন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এরাজ্যের বুকে মাত্র বছর তিনেক আগে জন্ম নেওয়া তিপ্ৰা মথা কি তাদের দলের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে? গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের দাবি থেকে কি সরে এসেছে তিপ্ৰা মথা ? বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে মথার চেয়ারম্যান তথা সর্বময় কর্তা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু কাটছে না রাজ্যবাসীর মনে। প্রবল সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে গত এডিসি নির্বাচনের মাত্র কিছুদিন আগে জন্ম নেয় রাজ্যের বুকে তিপ্রা মথা পার্টি। যার চেয়ারম্যান রাজবাড়ির সদস্য প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। অ্যাজেণ্ডা একটাই, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড। উপজাতি অঞ্চলে ব্যাপক সমর্থন আদায় করে এই স্লোগান এবং দাবিকে সামনে রেখে প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ এডিসির ক্ষমতা দখল করে। প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ ঘোষণা দেয় তার পরবর্তী লক্ষ্য ত্রিপুরার রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য স্থান করে নেওয়া। বিধানসভা নির্বাচনে কিংমেকার হতে চান প্রদ্যোত।এই স্লোগানকে সামনে রেখে গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলেছিল তিপ্ৰা মথা। ইস্যু একটাই, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড অথবা এর সাংবিধানিক সমাধান নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গেলো যে কিং মেকার তো দূর, তিপ্রা মথা থেমে গেলো মাত্র ১৩-তে।বাম-কং জোট তিপ্রা মথাকে দায়ী করলো তাদের ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। ফলস্বরূপ বিজেপি দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার স্বাদ পায় এ রাজ্যে।প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন কিংমেকার হয়ে গ্রটার তিপ্রাল্যাণ্ডের জন্য কেন্দ্রকে চাপ দেবেন আর কেন্দ্র তা দিয়ে দেবে। তিনি আগে এ ঘোষণাও করেছিলেন,যে তাকে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেবে তার সাথেই তিনি জোটে যাবেন।শেষ পর্যন্ত কারোর সাথে মথার জোট হয়নি। না-ই কিংমেকার হতে পারলেন প্রদ্যোত।নির্বাচন পরবর্তীতে ইন্টারলোকেটর নিয়োগ নিয়ে আরেক খেলা শুরু হলো।মথা সুপ্রিমো বার কয়েক ঘোষণা দিলেন যে ইন্টারলোকেটর অর্থাৎ গ্রটার তিপ্রাল্যাণ্ড কিংবা সাংবিধানিক সমাধান নিয়ে যিনি মধ্যস্থতা করবেন তার নাম ঠিক হয়ে গেছে এবং তিনি খুব শীঘ্রই রাজ্যে আসবেন। কিন্তু আজও তার দেখা নেই। ফলে স্বভাবতই হতাশ মথা। মথা এবার কি তাহলে বুঝতে পারছে যে বিজেপি তাদের সাথে গেম খেলেছে আদতে।তাই বিজেপির বিরুদ্ধে এবার মাঠে নেমেছে মথা। এবার মথার নয়া ইস্যু ককবরকে রোমান হরফ। মথা এই দাবিতে গত প্রায় একমাসের মধ্যে এ নিয়ে দুবার রাজভবন অভিযান করলো। যদিও দুবারই রাজভবন অভিযানে অনুপস্থিত থেকেছেন প্রদ্যোত কিশোর। মাঝে একদিন অবশ্য রাজ্যপাল নিবাসের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন প্রদ্যোত কিশোর।তাহলে মথা কি বুঝতে পারছে যে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড নিয়ে আর কিছু হওয়ার নেই। নির্বাচনও শেষ। কিছু আসন জেতাও হয়ে গেছে। এবার তাই অন্য ইস্যু নিয়ে চল রাজ্য গরম করা যাক।এবার তাই রোমান হরফে ককবরক চালুর দাবিতে পরপর দুদিন রাজভবন অভিযান করল মথা। শুধু তাই নয়, মথার মহিলা শাখা শনিবার রোমান হরফে ককবরক চালুর দাবিতে যে রাজভবন অভিযান করে তাতে ভাষণ দিতে গিয়ে, বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা রাজ্য সরকারের মেয়াদ নিয়ে কথা বলেছেন। অনিমেষবাবু বলেছেন, এই সরকারের মেয়াদ আর কিছুদিন। এরপরই রাজ্যে নয়া সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। অনিমেষবাবু কীসের ভিত্তিতে এই কথা বললেন? তাহলে কি মথার অন্য কোনও গেম প্ল্যান রয়েছে?তাহলে কি ধরে নিতে হবে একের পর এক ইস্যু পরিবর্তন,গেম প্ল্যান পরিবর্তন করে উপজাতিদের শুধু ধরে রাখার কৌশল নিচ্ছে মথা ? মথা বুঝতে পারছে যে, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড কিংবা সাংবিধানিক সমাধান, ইন্টারলোকেটর নিয়োগ ইত্যাদি ইস্যুতে আর উপজাতিদের বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব নয় ৷ এবার তাই রোমান হরফে ককবরক চালুর ইস্যু হঠাৎ করে জাগিয়ে তোলেছে মথা। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের ডাক। মথা আসলে কী চাইছে তা সাধারণের বোঝা দুষ্কর। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের আগে তিপ্রাল্যাণ্ডের ডাক দিয়েছিলো আইপিএফটি এবং গত পাঁচ বছর এবং বর্তমানেও আইপিএফটি সরকারের শরিক। কিন্তু সরকারে এসে একদিনের জন্যও তিপ্রাল্যাণ্ড শব্দটি তাদের মুখে শোনা যায়নি। আইপিএফটি নেতৃত্ব ভালো করেই জানত যে, তিপ্রাল্যাণ্ড নিয়ে কিছু হবার নয়। আসলে উপজাতিদের ব্যবহার করার এটি একটি কৌশল মাত্র। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের প্রণেতারা তা-ই। এজন্যই বারবার স্ট্যাণ্ড এবং ইস্যু বদল। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড ছেড়ে এবার রোমানে ককবরক চালুর দাবি। সরকার পরিবর্তনের দাবি। সময়ই এর উত্তর দেবে মথার এই ইস্যুগুলি গিয়ে কোথায় ঠেকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.