অধিকার ও অভিজ্ঞতা

 অধিকার ও অভিজ্ঞতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচন কমিশন হিংসামুক্ত নির্বিঘ্ন এবং সর্বোচ্চ ভোটদানের দুইখানি মিশন রাখিয়াছে। দুইটি মিশন একে অন্যের পরিপূরক। একটি করিতে পারিলে দ্বিতীয়টিও করা যাইবে অর্থাৎ পরিবেশ হিংসামুক্ত হইলে ভোটদান হইবে ভয়মুক্ত এবং সর্বোচ্চ হারের। রাজ্যে ভোটের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি হইতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের এই পর্বটি নির্বিঘ্নে শেষ হইবার পর নির্বাচন কমিশনের সিইও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানাইয়া বলিয়াছিলেন, সকল দলের সহযোগিতাতেই জিরো পোল ভায়োলেন্সে এই পর্যায় শেষ করা গিয়াছে।অনুমান করা যাইতেছে, সিইও ত্রয়োদশ নির্বাচনে আরও দুই পর্যায়ে দল সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাহিবেন।

প্রথম পর্যায় ভোটদানের পর অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় কিংবা ১৭ ফেব্রুয়ারী দ্বিপ্রহরে। আর শেষ পর্যায়ে দুই মার্চ ভোট ঘোষণা হইয়া যাইবার পর।কিন্তু বলাই বাহুল্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬ ফেব্রুয়ারীর ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনেকটাই কঠিন বিষয়। প্রার্থীগণের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর অর্থাৎ নির্বাচনিকালের দ্বিতীয় পর্যায়ে আসল চেহারা ফুটিয়া উঠে দলসকলের।ত্রিপুরা ভোটের সময়ে বা ভোটের পরে হিংসার ঘটনার জন্য জাতীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনে একটি চিহ্নিত রাজ্য। ফলে এই সময়ে অর্থাৎ ভোটের প্রচার চলাকালে হিংসার ঘটনার অবকাশ থাকিয়া যায়। এই সময়ে কমিশন আরও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বিভিন্ন ঘটনাবলির যদি সামাল দিতে না পারে তাহা হইলে হিংসামুক্ত ভোটের মিশন আমাদিগকে এবং নির্বাচন কমিশনকে ভেংচি কাটিবে।

বিরোধী দল সকলের তর্জনির সামনে দাঁড়াইতে হইবে।বর্তমান সময়ে নানান রাজ্যে নির্বাচন কমিশন শাসকের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত। দেশের বিরোধী দলসকল বরাবরই কেন্দ্রের বিজেপি গৌত সরকারের প্রতি সমালোচনায় নির্বাচন কমিশনের মতন সাংবিধানিক সংস্থাকে গ্রাস করিয়া লওয়া হইয়াছে বলিয়া প্রচার করিয়া থাকে।এই সকল অভিযোগ যে সকল সময়ে সত্য নহে কিংবা একেবারেই অসত্য তাহা বুঝাইবার দায় কিন্তু নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দায় এই সংস্থার উপরে রহিয়াছে বলিয়া নির্বাচন বিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রশাসনের সকল ক্ষমতা আসিয়া যায় কমিশনের মুখ্য আধিকারিকের হস্তে।

মুখ্য সচিব, ডিজিপি সকলেই সিইওর অধীন মানিয়া লয়। উদ্দেশ্য এই সময়ে মানুষের ভোটাধিকার যেন কোনওভাবেই খর্ব না হয়।
আবার দেখা যায় গণতন্ত্রের সর্ববৃহৎ এই উৎসবে যুযুধান দলসকল কাহারো সূচাগ্র জমি যাহাতে হারাইয়া না যায় সেই জন্য ময়দানে মাটি কামড়াইয়া পড়িয়া থাকে। কেহ চায় জমি পাইতে, কেহ বা না ছাড়িতে। এই লইয়াই সকল মারামারি। আবার দলগুলি সামনের দরজায় না হইলে পেছনের দরজা,জানালা দিয়া হইলেও ক্ষমতায় ফিরিতে বা ক্ষমতায় টিকিতে চায়। তাহাদের চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে যখন দুস্তর দূরত্ব থাকিয়া যায় তখনি শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, লাঠালাঠি, রক্তপাত। এই সকল ঘটনা সাধারণ মানুষকে ভয়ার্ত করে।

Picsart_23-02-01_14-01-35-324

দেখা যায় ভয়ের পরিবেশ তৈরির এই প্রক্রিয়াটাও অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পিত। দলগুলি নিজ নিজ স্বার্থে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করিয়া লইতে চায়। সকল সময়ে যে তাহারা এই সকল কাজে সমর্থ হয়, এমন নহে।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশ স্বাভাবিক করিয়া দেওয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মনে ভয় এমনভাবে জাঁকিয়া বসে যে সেই ভয় কাটাইয়া তাহাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করিয়া তোলা কমিশনের পক্ষে সম্ভব হয় না। তখন তাহাদের সকল মিশন ব্যর্থ হয়। মানুষ এই ব্যবস্থা লইয়া হতাশ হন এবং কমিশনের ভূমিকা হয় হাস্যকর। বাস্তব ঘটনা হইলো কমিশনের যাহারা পদাধিকারী তাহারা সকলেই সরকারী কর্মচারী হইবেন, এমন বলা আছে।

যেহেতু তাহারা সরকারী কর্মচারী তাই সততা এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব মাথায় লইয়া নিরপেক্ষভাবেই কাজ শুরু করিয়া থাকেন। কিন্তু কিছুদূর পথ আগাইবা মাত্র অদৃশ্য চাপ তাহাদের উপর আসিয়া পড়িবে বা পড়িতেছে— এমন ভাবনা স্বাভাবিক। সরকার যাহারা চালান বা নীতিপ্রণেতা তাহারাও কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের, মতেরই লোক হইবেন। অদৃশ্য চাপ তাহারাই তৈরি করিয়া থাকিবেন। যে চাপের কাছে নতি স্বীকার করিয়া লইতেও পারেন সরকারী আধিকারিক, তবে কে কোন্ মাত্রা পর্যন্ত চাপ সহ্য করিয়া কাজ চালাইয়া যাইতে পারিবেন তাহা নির্ভর করিবে কেবল ব্যক্তিগত সহন ক্ষমতার উপর। তাহা হইলে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এই সকলই কি প্রহসন ?

কেবলই কথার কথা হইয়া থাকিবে? প্রজাতান্ত্রিক ভারতের সত্তর-পঁচাত্তর বৎসরের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখাইয়াছে, শাসক কখনওই শাসন দণ্ড ছাড়িতে চাহিবে না।তখন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করিতে ভূমিকা লইবে বিরোধী শক্তিও। গণতন্ত্রে তাই বিরোধীদের ভূমিকাকে অনস্বীকার্য বলা হইয়া থাকে। তাহারা সেই সকল পর্যায়ে ময়দানে সরব উপস্থিতি বজায় রাখিবেন।মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করিবার কথা বলিবেন, আর তাহা হইলেই কেবল মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সকল চাপ অগ্রাহ্য করিয়াও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন কোনও আধিকারিকের পক্ষে সহজ হইতে পারে। ইহা আমাদের সংবিধানে উল্লিখিত কোনও পংক্তি নহে। ইহা আমাদের দীর্ঘ নির্বাচনি দৃশ্য দৃশ্যান্তর হইতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের মানুষের অর্জিত অভিজ্ঞতা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.