অনুমতিহীন দোকানে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স আইনকে লঙ্ঘন করে রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা শহরে সাধারণ দোকান ও মুদিখানায় ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এতদিন বিষয়টি গ্রামীণ এলাকা ও দুর্গম প্রত্যন্ত স্থানে চলে এলেও, এখন রাজ্যে বিভিন্ন মহকুমা শহরে অবাধে এই বে-আইনি কাজ চলছে। সাধারণ দোকান ও মুদিখানায় এভাবে নিয়ম না মেনে ওষুধ বিক্রির ঘটনায় তা সার্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঘটনা হলো, বছর তিন আগে কেন্দ্রীয় সরকার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধের দোকানের বাইরেও কিছু সাধারণ দোকান ও মুদিখানায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ বিক্রি করা যায় কিনা, এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা ও পর্যালোচনা শুরু করেছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এই লক্ষ্যে ড্রাগ আইনের কিছু সংশোধন করা যায় কিনা তা নিয়েও বিচার বিশ্লেষণ শুরু করেছিলো।তাতে ডাক্তারী প্রেসক্রিপশন থেকে ১৬ টি ওষুধকে যাতে ছাড় দেওয়া যায়, সেগুলো সাধারণ দোকান কিংবা মুদিখানার মধ্যে বিক্রি করা গেলে গ্রামীণ মানুষের কাছে তা অনেকটাই সহজলভ্য হবে- এই মনোভাব ও ধারণাও পোষণ করা হয়েছিল। এই প্রস্তাব সম্পর্কে কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ চেয়ে পাঠিয়েছিল। পাশাপাশি এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলোর কাছ থেকেও মতামত জানতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের এই প্রস্তাব মাঝপথেই ধাক্কা খায়। কারণটা হলো, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধের দোকানের বাইরে যদি ওষুধ বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয় তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবার আশঙ্কা থাকবেই।যতই সরকার অতি সাধারণ রোগের জন্য ১৬ টি ওষুধকে চিহ্নিত করে সাধারণ দোকানে বিক্রির বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা বলুন না কেন, এই সুযোগে অন্যান্য ওষুধও সাধারণ দোকানে বিক্রির আশঙ্কা থেকে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ফার্মেসিস সমাজে রোগীদের সরাসরি যত্ন প্রদান করে থাকে। এগুলি মূলত ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী নামে পরিচিত। কিন্তু সাধারণ দোকান থেকে ওষুধ বিক্রির সময় সেই ধরনের কোন সুবিধা রোগীরা পাবেন না। সাধারণত ড্রাগ লাইসেন্স প্রাপ্ত ওষুধের দোকানে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে, সেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে আইনে উল্লেখ আছে। ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়ার সময় দোকানের নির্দিষ্ট সাইজ, পরিকাঠামোর পাশাপাশি প্রতিটি ওষুধের দোকানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেন্দ্রে প্রস্তাবটিতে সাধারণ দোকান ও মুদিখানায় ওষুধ রাখলেও ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন হবে না।এই সমস্ত ওষুধ বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট সাধারণ দোকানগুলোর কোন ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না।এমনকী ওষুধগুলি কেনার জন্য রোগীকে কোন প্রেসক্রিপশনও দেখানোর দরকার পড়বে না।এই সব কারণে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হল, সাধারণ দোকানে বা মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রির কেন্দ্রীয় প্রস্তাব কার্যকর না হওয়া সত্ত্বেও, এই রাজ্যের একশ্রেণীর অসাধু সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী যারা আগেও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা অনুমতিতে ওষুধ বিক্রি করতেন, তারা এখন ব্যাপকভাবে সাধারণ বা মুদির দোকানে প্রকাশ্যেই ওষুধ বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে ১৬ টি ড্রাগ শিডিউলকে তালিকাভুক্ত করে মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রিতে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছিলেন, সেই ধরনের অ্যান্টিসেপটিক ক্যাপসুল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম, জ্বর ব্যথা, অ্যান্টি অ্যালার্জি, কাশির লজেন্স, নাকের স্প্রে, মাউথ ওয়াশ, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, গর্ভ নিরোধক ওষুধ, অ্যান্টিসেপটিক লোশন, খুশকির ওষুধ ও শ্যাম্পু, মিল্ক অফ ম্যাগনেশিয়ার মতো কোষ্ঠকাঠিন্যের সিরাপ, এনজাইম ও সোডিয়াম ট্যাবলেট সবই এখন মুড়ি মুড়কির মতো বিভিন্ন মহকুমা শহরে ওষুধের দোকান ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ হল, ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তাদের জ্ঞাতসারেই এই বে-আইনি, জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজকর্ম চললেও কর্তৃপক্ষ নীরব। এতে লোকজনের মধ্যে নিজেদের ইচ্ছেমতো ওষুধ কেনার প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি ওষুধের দোকানে যে নিয়মে অষুধ সংরক্ষিত রাখা হয়, সেটা ছাড়াও মুদিখানায় ওষুধ বিক্রি হওয়ায় ওষুধের গুণগত মান বজায় থাকছে কিনা সেটাও পর্যবেক্ষণের কোন সুযোগ নেই। এর সঙ্গে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নকল ওষুধের বাড়বাড়ন্ত রোধ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উদয়পুর, বিশালগড় ও আমবাসা এলাকায়। উদয়পুর শহরের আনাচেকানাচে বেশ কিছু মুদি ও অন্য সাধারণ দোকানেই আকছার ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত হলেও ড্রাগ কন্ট্রোল শাখা এই বিষয়ে নীরব। উদয়পুরে বেশকিছু লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধের দোকানে কাগজে কলমে নিয়মরক্ষার ফার্মাসিস্ট থাকলেও, বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার পাইকারি দোকানের লাইসেন্স নিয়ে খুচরো ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। খোদ রাজধানী শহর আগরতলায় লেক চৌমুহনী এলাকাতেও কাগজে কলমে নিয়মরক্ষার ফার্মাসিস্ট দিয়ে অন্তত ২টি দোকান চালু আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ভোক্তাদের তরফে অভিযোগ সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেই।সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ হলো, সাধারণ ও মুদির দোকানে রক্তচাপ মাপার নাম করে কিছু কিছু ব্যবসায়ী প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন।উদয়পুরে জগন্নাথ বাড়ি সংলগ্ন দোকানেও এই ধরনের অনিয়মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।এক দশক আগে রাজ্যের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় মুদিখানাগুলিতে ওষুধ বিক্রির প্রবণতা এখন প্রকাশ্যে বিভিন্ন মহকুমা শহরের সাধারণ দোকানে যে পর্যায়ে ছোঁয়াচে ব্যাধির মতো বিস্তার লাভ করছে, তাতে জনস্বাস্থ্য কতটা নিরাপদ সেই আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।

Dainik Digital

Recent Posts

শুক্রবার বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু চেনাব চন্দ্রভাগা ব্রিজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে রেলসেতু ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।…

7 mins ago

হরিয়ানায় শপিংমলে গুলি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হরিয়ানার পঞ্চকুলার একটি মলের সামনে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কয়েকজন দুষ্কৃতি পরপর কয়েক রাউন্ড চালায়…

37 mins ago

দঃজেলার ৫০%র বেশি গ্রাহকই বিদ্যুতের বিল জমা দেন নাঃ মন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা গ্রহণকারী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিল পেমেন্টের বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরলেন…

1 hour ago

বিমানে বিস্ফোরক বহন!

অনলাইন প্রতিনিধি :- সম্প্রতি দিল্লি, হায়দরাবাদ, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর সারপ্রাইজ ভিজিট’ করেন ভারতের অসামরিক…

1 hour ago

অমীমাংসিত ঘটনায় সিস্টারের কারখানায় তালা দিলো শিল্প নিগম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাধারঘাট শিল্প তালুকে সিস্টার গুঁড়া মশলার একটি কারখানা ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিলো টিআইডিসি।…

4 hours ago

মোদির ১১ বছর!!

গত ২৬ মে ২০২৫ইং,ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ১১ বছর পূর্ণ করলেন।সেই সাথে ১২ বছরে…

4 hours ago