অপুষ্ট পুষ্টি প্রকল্প

 অপুষ্ট পুষ্টি প্রকল্প
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পুষ্টি হলো মানুষের শরীরের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা । আমাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য পুষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন । তার জন্য জীবনের একেবারে শুরু থেকেই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা । শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশের জন্যই নয় , শরীরের পাশাপাশি মানসিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্যও পুষ্টি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ । আমাদের দেশে প্রতিটি শিশু একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই যাতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে উপকৃত হতে পারে তার জন্য দেশের সরকার নানাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে সহায়তা করে আসছে । এই লক্ষ্যে সমাজে পুষ্টি সম্পর্কিত সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং মানুষ যাতে তার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা সম্পন্ন করতে পারে সেই সম্পর্কে অবগত সরকার বিভিন্ন সময়ে এই সংক্রান্ত একাধিক কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে । পুষ্টি শিক্ষা এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৭৫ সালে পৃথিবীতে প্রথম আমেরিকায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের ঘোষণা দেয় মার্চ মাসে ।

ভারতে এই প্রচার অভিযানটি শুরু হয় ১৯৮২ সালে । এই সময় থেকেই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ নামক এই প্রচারাভিযান চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় । এই প্রচারের উদ্দেশ্যে ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে এই পুষ্টির তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য আহ্বান জানানো । বলা হয়ে থাকে যে , একটি স্বাস্থ্যকর শরীর শুধু সুস্থ থাকতে নয় , বরং প্রাণবন্ত থাকতেও সাহায্য করে । পুষ্টি যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে তাই এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য অপরিহার্য । ভারতে অপুষ্টি দূর করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ন্যাশনাল নিউট্রেশন মিশন ।দেশের নানা এলাকায় অপুষ্টির হার একেবারে নেহাত কম নয় । এই অপুষ্টিকে মোকাবিলা করার জন্য ভারত সরকার চালু করেছে পোষণ অভিযান । যা জাতীয় পুষ্টি মিশন নামেও পরিচিত । দেশে শিশু উন্নয়ন ও পুষ্টি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অপুষ্টির মাত্রা কমানো এবং শিশুদের পুষ্টির অবস্থা উন্নত করা । তাই জাতীয় পুষ্টি মিশন গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় কিশোর , শিশু , গর্ভবতী মহিলা কিংবা স্তন্যদানকারী মায়েদের পুষ্টির বিকাশের জন্য নিরন্তর বিভিন্ন প্রকল্প জারি রেখেছে । অ্যানিমিয়া , কম পুষ্টি এবং জন্মকালীন কম ওজনের শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়া দূর করতে বিভিন্ন নির্দিষ্ট কর্মসূচি পালন করছে । এই লক্ষ্যে গ্রামীণ এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অধীনে পর্যাপ্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর জন্য ব্যবস্থা , মধ্যাহ্নভোজ ,টিকাদান এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট দেওয়া যা অপুষ্টিকে মোকাবিলা করতে পারে সেই কর্মসূচি ও বিঘ্নহীন প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য মহিলা ও শিশু কল্যাণ দপ্তর নিরন্তর জারি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

কিন্তু সরকারের সব চেষ্টাই মাঝপথে বিফলে যায় যখন সমাজে দুর্নীতির হাঙ্গরগুলো উন্নয়নের সব টাকা লুটপাট করেও ক্ষান্ত না হয়ে শিশু উন্নয়ন এবং মায়েদের পুষ্টি প্রকল্পে থাবা বসায় । কোভিড -১৯ অতিমারি লক্ষ লক্ষ মানুষকে কঠিন আর্থিক সঙ্কট ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে । ফলে অনেকের আয় হ্রাস পেয়েছে । খুব স্বাভাবি কারণেই এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় এবং অপুষ্টিতে ভুগছে বহু মানুষ । দুর্ভাগ্যের হলেও এটাই সত্যি সঙ্কটের এই কঠিন মুহূর্তে হাজার হাজার ভুয়ো নথিভুক্ত শিশু এবং প্রসূতি মায়ের নামে পুষ্টি প্রকল্প চলছে দশদা আইসিসিএস প্রকল্পে।পুষ্টি প্রকল্পের সামগ্রীর গোঁজামিল দিয়ে ঠিকাদারি সংস্থা সরকারী চাল , ডাল ও ডিম , সয়াবিন সহ পুষ্টি প্রকল্পের সামগ্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বাড়িঘরে পৌঁছে দেয় । কাগজপত্রে দেখানো হচ্ছে নথিভুক্ত শিশু ও প্রসূতি মায়েরা অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার থেকে সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে । অথচ এই প্রকল্পে বরাদ্দ পঞ্চাশ শতাংশ পণ্যই খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে । নামেই চলছে পুষ্টি প্রকল্প । বহু প্রত্যন্ত এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চিহ্নমাত্র নেই । অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলেও সেই সব সেন্টারের দরজা পর্যন্ত খোলা হয় না মাসের পর মাস । এভাবেই প্রসূতি মা ও শিশুদের পুষ্টি প্রকল্পের নামে দুর্নীতির হাঙ্গররা দাপিয়ে সবকিছু গ্রাস করলেও প্রশাসন নীরব । সব জেনেও নির্বিক সমাজকল্যাণ দপ্তর । জেগে ঘুমিয়ে থাকা প্রশাসন , দুর্নীতির এই মৌরসীপাট্টাকে আর কতকাল প্রশ্রয় দেবে সেটাই জানতে চায় মানুষ ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.