অবিচ্ছেদ্য যমজ বোনের চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট

 অবিচ্ছেদ্য যমজ বোনের চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ওরা অবিচ্ছেদ্য যমজ বোন । বীণা এবং বাণী । আর পাঁচটি মেয়ের মতো ওরা নয় । ওরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বটেই, হয়তো তার চেয়েও প্রতিকূল বটেই , হয়তো তার চেয়েও প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাদের বেড়ে ওঠা । কারণ দুই বোন একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য । দুই বোনের মাথা জোড়া লাগানো । তবে দু’জনের হাত – পা আলাদা । শুধু মাথা ছাড়া দুই বোনের শরীরের সব অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ আলাদা । মাথা জোড়া থাকার ফলে কোনও ভাবেই দুই বোনের আলাদা হওয়ার উপায় নেই । এমন কঠিন প্রতিকূলতাকে জয় করে তেলেঙ্গানার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সকলকে চমকে দিয়েছে বীণা ও বাণী । দু’জনেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে ।

মোট ১০০০ নম্বরের মধ্যে বাণী পেয়েছে ৭০৭ , বীণা পেয়েছে ৭১২। অবিচ্ছেদ্য দুই বোনের স্বপ্ন ভবিষ্যতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া । দুই বোনকে উচ্চ শিক্ষার জন্য সমস্ত রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে তেলেঙ্গানা সরকার । ইন্টারমিডিয়েট আমাদের এখানে দ্বাদশ পরীক্ষার মতো । দুই বোন পড়ছিল ‘ সিইসি ‘ গ্রুপে । সিইসি গ্রুপ অর্থাৎ কমার্স , ইকনোমিক্স এবং সিভিক্স।তেলেঙ্গানার শিশু মহিলা ও আদিবাসী কল্যানমন্ত্রী সত্যব্রতী রাঠোড় ব্যক্তিগত ভাবে দুইবোনকে তাদের পরীক্ষার ফলের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বীনা ও পানী আগামী দিনে যে ধরনের উচ্চশিক্ষা পেতে চায়ভ, রাজ্য সরকার তাদের সমস্তভ্রকম ভাবে সহযোগিতা করবে।

দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষাতেও বাধিয়ে রাখার মতো রেজাল্ট করেছিল দুই আশ্চর্য বোন। ২০২০ সালে তারা দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় বসেছিল।বীণা স্কোর করেছিল ৯.৩ জিপিএ (অর্থাৎ ৮৮.৩৫ শতাংশ নম্বর ) এবং বাণী স্কোর করেছিল ৯.২ জিপিএ ( ৮৭.৪ শতাংশ নম্বর ) । আজন্ম সমাজ , অর্থনীতির পাশাপাশি প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে মাধ্যমিকে চোখ ধাঁধানো নম্বর পেয়ে প্রচারের পাদপ্রদীপে চলে আসে দুই বোন । প্রচারে তারা অবশ্য ছোট থেকেই ছিল । তবে সে প্রচার ছিল করুণা এবং অনুকম্পায় ভরা । তেলেঙ্গানার মেহবুবনগরে ২০০৩ সালে অবিচ্ছেদ্য যমজ বোন হিসাবে তাদের জন্ম । অ – স্বাভাবিক জন্মের পর থেকেই তারা অনাথ । গরিব বাবা – মা অবিচ্ছেদ্য দুই মেয়েকে ঘরে নিয়ে যেতে চাননি ।

তাদের বক্তব্য ছিল , এদের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সংস্থান তাদের নেই । ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বীণা ও বাণী বেড়ে ওঠে তাদের জন্মস্থান নিলোফার হাসপাতালে । হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে দুই বোনকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তারা ব্যর্থ হন । নিলোফার হাসপাতালে থাকার সময় দেশের একাধিক নাম করা শল্য চিকিৎসক তো বটেই , পাশাপাশি ব্রিটেন ও সিঙ্গাপুর থেকেও নামকরা শল্যবিদরা দুই বোনকে আলাদা করতে এক বছর ধরে গবেষণা করেছিলেন । চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন , জটিল সেই অস্ত্রোপচারে খরচ হবে কম বেশি ১০ কোটি টাকা । কিন্তু তার চেয়েও বড় বাধা ছিল দুই বোনের প্রাণের ঝুঁকি । শেষ পর্যন্ত নিলোফার হাসপাতাল সেই ঝুঁকিতে আর পা বাড়ায়নি । বীণা ও বাণীর বয়স ১২ বছর পার হলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের সরকারি হোমে পাঠানো হয় । ছোট থেকেই দুই বোনের পড়াশোনায় মন দেখে অবাক হতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.