এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-অযোধ্যায় বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে যে ধর্মযুদ্ধ শুরু তা অভিপ্রেত ছিল না। চৈতন্য মহাপ্রভু,স্বামী বিবেকানন্দের উদারবাদী হিন্দু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল অসংখ্য মানুষের কাছে তা একেবারেই অভিপ্রেত ছিল না।রামলালার বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি এবং ভোটের অঙ্ক যদিও বা থেকেও থাকে,এই পুণ্যলগ্নে সেটি মোটেই বাঞ্ছিত নয়।সনাতন ‘হিন্দু’ ধর্মের আদিগুরু জগৎগুরু শঙ্করাচার্য, হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের পরাকাষ্ঠা, অদ্বৈত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা,তাঁর বর্তমান উত্তরসূরি হিন্দু’ ধর্মের সর্বোচ্চ গুরু হিসাবে পরিচিত শঙ্করাচার্য চতুষ্টয় যদি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন,সেটি তাৎপর্যের তো বটেই, সর্বোপরি এমন পুণ্যক্ষণে অনভিপ্রেত।কেন তাদের এ-হেন সিদ্ধান্ত,তার প্রথম ব্যাখ্যা শোনা যায় উত্তরাখন্ডের জ্যোতির্মঠের স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীর মুখে।না যাওয়ার কারণ হিসাবে তিনি যে ব্যাখ্যা দিলেন তার নির্যাস,তিনি যেতে পারেন না কারণ অযোধ্যার মন্দিরটি অসম্পূর্ণ। তিনি বললেন,ধর্মীয় শাস্ত্র বিধি মানলে মন্দির তথা গৃহ সম্পূর্ণ না করে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায় না।অর্থাৎ, অযোধ্যায় যে অনুষ্ঠান হতে চলেছে,সেটি ধর্মসিদ্ধ নয়।এমন অসিদ্ধ আয়োজন শঙ্করাচার্যেরা অনুমোদন করতে পারেন না।সুতরাং, তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না।ধর্মীয় অবস্থানে স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দের এই যুক্তিই যথেষ্ট ছিল।কিন্তু বাস্তব যে বড় রুক্ষ।অতএব জ্যোতির্মঠের শঙ্করাচার্যকে জানাতে হয়েছে,এমন সিদ্ধান্তের জন্য লোকে তাদের মোদিবিরোধী বলতে পারেন বটে,কিন্তু তারা মোদিবিরোধী নন, বরং সনাতন ধর্মাচারণের প্রতি নিজেদের নিষ্ঠাকে অক্ষুণ্ণ রাখতেই তিনি বাইশ জানুয়ারী অযোধ্যা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন।এরপরে মকর স্নানের আগে গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়ে অযোধ্যায় না যাওয়ার কারণ দর্শালেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। অযোধ্যার মন্দির উদ্বোধন ঘিরে দেশের সরকার তথা শাসক গোষ্ঠীর ‘উন্মাদনা’র তীব্র সমালোচনা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি,সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই নিশানা করে তিনি অভিযোগ করেন, রামমন্দিরকে উপলক্ষ করে ধর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’।দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েও দিলেন, সেই কারণে ২২ জানুয়ারী তিনি রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।এবারে গোটা বিষয়টিকে রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে তুললেন বিজেপি সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।শঙ্করাচার্যকে তিনি ‘কংগ্রেসের লোক’ বলে অবলীলায় দাগিয়ে দিলেন।

কটাক্ষ করে মন্তব্য করলেন, ‘উনি কংগ্রেসের লোক। কংগ্রেসও রামমন্দির উদ্বোধনে যাবে না,তাই উনিও যাবেন না।’এটিও কি অভিপ্রেত ছিল? শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যে কেউই বলবেন, ছিল না।বিস্মৃত হলে চলে না যে,আদি শঙ্করই প্রথম উপনিষদ ও ব্রহ্মসূত্র অবলম্বনে সন্ন্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন।তিনি উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র ও ভগবদ গীতার ভাষ্যও রচনা করেন। তাঁর শিক্ষার মূল কথা ছিল আত্ম ও ব্রহ্মের সম্মিলন। তাঁর মতে,ব্রহ্ম হলেন নির্গুণ। হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করার জন্য চারটি মঠ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে,পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং উত্তরে জ্যোতির্মঠে (যোশী মঠে)।সেই চার মঠের একজন মঠাধীশও যদি রামমন্দিরের উদ্বোধন শাস্ত্রসম্মত নয় বলে মনে করেন,সেই সাধুকে পাল্টা দোষারোপ করাটা অভিপ্রেত নয়।এই ঘটনা পরম্পরার পিছনে রাষ্ট্র তথা শাসক শিবিরের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রভাব এখানে কতদূর কাজ করেছে,সে প্রশ্ন গৌণ।এমন প্রশ্ন অবশ্য উঠতে পারে যে, শঙ্করাচার্যরা কি বিশুদ্ধ ধর্মীয় কারণেই মন্দির উদ্বোধনে নিজেদের ব্রাত্য করে রাখলেন,নাকি তারা হিসাব করে দেখেছেন যে,এই অনুষ্ঠানে তারা যথার্থ গুরুত্ব পাবেন না?যদি সেই হিসাবই তাদের বিবেচ্য হয়ে থাকে, তাহলেও এই সিদ্ধান্ত ও তার সপক্ষে ঘোষিত যুক্তি এক গভীরতর বাস্তবকে,যার অপর নাম রাজনীতি, তাকেই চিনিয়ে দেয়।শাসকের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা, আরও নির্দিষ্ট করে বললে যদি ভোটের প্রয়োজনে রামকে অর্ধসমাপ্ত গৃহে অধিষ্ঠান করতে হয় এবং অসমাপ্ত রামমন্দিরের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান যদি সেই সত্যকে নিরাবরণ করে দেয়, সেটি একেবারেই অভিপ্রেত ছিল না।অযোধ্যা যদি ভোটযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু, ধর্মক্ষেত্রের আড়ালে কুরুক্ষেত্রের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠে,সেটিও অভিপ্রেত ছিল না।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে মৃত্যু ঢাকুরিয়ার যাত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হাওড়া থেকে পুরী যাচ্ছিলেন ঢাকুরিয়ার হিমাদ্রি ভৌমিক (বয়স ৫৭)। পথেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে…

1 hour ago

পাকিস্তানে ৪৮ ঘণ্টায় ২০ বার ভূকম্প!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রবিবার রাত থেকে কুড়িবার কেঁপে উঠে পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি। রিখটার স্কেলে কম্পনের…

2 hours ago

ভয়াবহ বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু অসমে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতে। টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত অসম। সূত্রে খবর, ভয়াবহ…

3 hours ago

কুম্ভে মৃ*ত্যু হয়েছিল ৫০–৬০ জনের’ পদপিষ্টে ১১ জনের মৃ*ত্যুর পর সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পদপিষ্টে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনাতে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের দিকে তোপ দেগে দিয়েছেন বিজেপি।…

5 hours ago

পদপিষ্টে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ্যের আর্থিক সাহায্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার বেঙ্গালুরুতে আরসিবি টিমের বিজয়োৎসব চলছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে। সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আরসিবি…

5 hours ago

আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে লন্ডনে মৌ স্বাক্ষর: প্রদ্যোত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের উপজাতি জনসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভারত সরকার। দেশের সরকারের নির্দেশিত…

5 hours ago