অভিসন্ধি নস্যাৎ করে দিতে পারে ভারতের সুইসাইড ড্রোন

 অভিসন্ধি নস্যাৎ করে দিতে পারে ভারতের সুইসাইড ড্রোন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জঙ্গলের ভয়ঙ্কর প্রাণীরা তাদের শিকারকে অতর্কিতে করে আক্রমণ করে না । আগে তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে শিকারকে নিরীক্ষণ করে , পর্যবেক্ষণ করে । তারপর ধীরে ধীরে তারা অভিষ্ট শিকারের দিকে এগিয়ে যায় । হিংস্র বন্যপ্রাণীদের শিকারের সামনে এগিয়ে যাওয়া মানে সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ । শিকারের সামনে গিয়ে একেবারে নিশ্চিত হয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে । ভারতীয় সেনাবাহনীর তূণীরে একই ধরনের অস্ত্র আছে , যাকে বলা হয় সুইসাইড ড্রোন বা কামিকাজে ড্রোন । এটিকে গাইডেড ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোনের মিশ্রণ বলা যেতে পারে । এটি এমন এক অস্ত্র ব্যবস্থা যা আকাশে লক্ষ্যবস্তু এলাকায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এবং তারপর লক্ষ্যমাত্রা দৃশ্যমান হওয়ার পরেই আক্রমণ করে । এই অস্ত্রের সাহায্যে , অল্প সময়ের জন্য বাইরে দৃশ্যমান লুকানো লক্ষ্যবস্তুগুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা সহ হয়ে যায় । ইউক্রেন – রাশিয়া যুদ্ধে এই ধরনের ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে । সুইসাইড ড্রোনের গুণপনা নিয়ে সমর বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিস্তর আলোচনাও চলছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগেই ইউক্রেনকে এই ধরনের বিপজ্জনক ড্রোন দেওয়ার কথা বলেছিল । এবার পূর্ব লাদাখে চিনের হিংসা দেখে নিজেদর অস্ত্রের ভাঁড়ারে কামিকাজি ড্রোন অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে ভারতীয় সেনা । এছাড়াও শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাজ করা কামান , অত্যাধুনিক রকেট – সহ ড্রোন এবং ২৪ ঘন্টা নজরদারি রেডার দিয়ে উত্তর সীমান্তে সেনার অবস্থান শক্তিশালী করা হচ্ছে । কামিকাজি ড্রোন আকারে তুলনামূলক ভাবে ছোট , সেই কারণে লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ হামলা চালাতে সক্ষম । এটিকে সুইসাইড ড্রোন বলা হয় কারণ টার্গেট ‘ লক ’ করার পর এটি শত্রুর আস্তানায় যায় এবং বিস্ফোরক দিয়ে শত্রুপক্ষের ঘাঁটি তছনছ করে দেয় । এ বিষয়ে গত বছর ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে বেসরকারী স্তরে অস্ত্র একটি চুক্তি সই হয় । প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে , ভারতীয় সংস্থাগুলি এ ধরনের অস্ত্র তৈরি করতে বিস্তর আগ্রহ দেখিয়েছে । আজারবাইজান – আর্মেনিয়া সংঘর্ষের অস্ত্র পর ইউক্রেন যুদ্ধেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে । আমেরিকা এই অস্ত্রের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে আসছে । প্রাথমিকভাবে , ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ১০০ টি কামিকোজি ড্রোন অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে । কামিকাজি শব্দটি এসেছে জাপান থেকে । আদতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কামিকোজি নামে জাপানের একটি বিশেষ আক্রমণ – ইউনিট ছিল । এতে সেনাবাহিনীর পাইলটকে মিশন দেওয়া হয়েছিল যে তিনি নিজের জীবনের পরোয়া না করে শত্রুর উপর আত্মঘাতী হামলা চালাবেন । হ্যাঁ , সেই পাইলটরা শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করতে তাদের ফাইটার জেট বিধ্বস্ত করতেন । সেই থেকে কামিকোজি অর্থাৎ আত্মঘাতী মিশন নামে পরিচিত হয় । রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয়রা সুইচব্লেন্ড ৩০০ এবং ফিনিক্স ঘোস্টের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে , যেগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সরবরাহ করেছিল । দুই বছর আগে চিনা সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর যে অচলাবস্থা দেখা দেয় তার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি বড় আর্টিলারি বন্দুক এবং অন্যান্য অস্ত্র মোতায়েন করেছে । পূর্ব লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ৩৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলএসি তে সেনাবাহিনী সতর্কতার সঙ্গে অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রস্তুত করেছে । এর মধ্যে রয়েছে বোফর্স কামান , ধনুশ , এম -৭৭৭ আল্ট্রা – লাইট হাউৎজার এবং কে -৯ বজ্র স্বয়ংক্রিয় কামান । সেনাবাহিনী আরও ১০০ টি বজ্র কামান চিহ্নযুক্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে , যে কামানের পাল্লা ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি । এল অ্যান্ড টি এটি তৈরি করতে দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা হানওয়া ডিফেন্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে । পূর্ব লাদাখে শীতকালীন রেজিমেন্ট ( কিটস ) সহ কে ৯ রেজিমেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে । পিনাকা রকেট সিস্টেমের আগমন সীমান্তে সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়িয়েছে । এর ফায়ার পাওয়ারও প্রায় ৪০ কিমি । প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর , সেনাবাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ( এলএসি ) বরাবর ৯০ কিমি রেঞ্জের সাথে তার আর্টিলারি ইউনিটগুলিকে ইউএভি দিয়ে সজ্জিত করার পরিকল্পনা করেছে । চালকবিহীন যানবাহন কেনার প্রস্তুতি চলছে যা ১৫-২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং ৮০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে চার ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে পারে । আরও ছয়টি পিনাক রেজিমেন্ট গঠন করা হবে । নতুন পিনাক রেজিমেন্ট ইলেকট্রনিক এবং যান্ত্রিকভাবে আপগ্রেড করা অস্ত্র সিস্টেমে সজ্জিত হবে । তারা দীর্ঘ দূরত্বে বিভিন্ন ধরনের শেল বা গোলা নিক্ষেপ করতে পারে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.