জি-৭ সম্মেলনে যোগদান করতে মোদীকে আমন্ত্রণ দিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী!!
অমীমাংসিত ঘটনায় সিস্টারের কারখানায় তালা দিলো শিল্প নিগম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাধারঘাট শিল্প তালুকে সিস্টার গুঁড়া মশলার একটি কারখানা ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিলো টিআইডিসি। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বৃহস্পতিবার সিস্টারের কারখানায় হানা দেন টিআইডিসি কর্তারা। চেষ্টা ছিল দুটি কারখানাই বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু প্রচুর শ্রমিক সেখানে কাজে ছিল। তারা কর্মস্থল ছেড়ে বের হতে রাজি হননি। জানা যায় ভাড়া সংক্রান্ত একটি অমীমাংসিত বিবাদ পুঁজি করে শিল্প নিগম এদিন একতরফাভাবে এই পদক্ষেপ নিলো।ত্রিপুরা রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর হাতে গোনা যে কয়টি শিল্পগোষ্ঠী মাথা তুলে দাঁড়িয়ে সমাজের জন্য কাজ করে চলেছে তার মধ্যে সিস্টার বা কুকওয়েল অন্যতম। ১৯৯৬-৯৭ সালে মতিলাল গৌরী অ্যান্ড কিসমত ফ্যাক্টরির নামে বাধারঘাটে শিল্প দপ্তরের দেওয়া জমিতে কারখানা শুরু করেন মতিলাল পাল। সে সময়ে সরকারীভাবে জমি ব্যবহারের যে শর্ত দেওয়া ছিল তা মেনেই তারা কারখানা শুরু করে। প্রথমে শিল্প দপ্তরকে এবং ২০১০-১১ সাল নাগাদ টিআইডিসি শিল্প তালুক অধিগ্রহণের পর টিআইডিসিকে যথাযথ ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আসছিল এই প্রতিষ্ঠান। দেখা যায় কুড়ি বছরে প্রথমে শিল্প দপ্তর ও পরে টিআইডিসি দফায় দফায় এই শিল্প সংস্থার ব্যবহৃত জমির ভাড়া চার হাজার শতাংশ বৃদ্ধি করে। মতিলাল পালের মৃত্যুর পর তার সুপুত্র গৌতম পাল এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ১৯৯৬-৯৭ সালের যে শর্তাবলি সরকার দিয়েছিল জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেই শর্তাবলি উপেক্ষা করে টিআইডিসি কোন নিয়ম এবং কীসের ভিত্তিতে ভাড়া বৃদ্ধি করছে তা জানতে চান।
টিআইডিসি এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। যদিও শিল্পসংস্থার তরফ থেকে জমির ভাড়া মেটানোর উল্টে গরজ দেখিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু টিআইডিসির তরফে কোনো সদুত্তর জানানো হয়নি। ভাড়া মেটানোর কথাও বলা হয়নি। বলাই বাহুল্য, সিস্টার শিল্পগোষ্ঠী এখানে ভাড়া খেলাপি নয়। ইংরেজি শব্দ ডিফল্ট এবং ডিসপুট পৃথক শব্দ। কিন্তু এরপরও একদিনের নোটিশে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার আইনি অধিকার কোথা থেকে পায় শিল্প নিগম? বৃহস্পতিবার নিগমের কর্মকর্তারা যখন বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে যায় এক অভাবনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এলাকায়। কারণ এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার গৌতম পালের অকাল মৃত্যুর শোক আজও ভোলেননি এলাকার মানুষ।
কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এদিন জানা যায় অন্য এক গল্পের পটভূমি। শ্রমিকরা নাকি আগে থেকেই এ ধরনের একটি দুর্যোগের আভাস পেয়েছিলেন। গৌতম পাল প্রতিষ্ঠানে একজন অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে চাকরিতে এনেছিলেন। টিএসইসিএল-এর অবসরপ্রাপ্ত এই আধিকারিক মোটা বেতন পেতেন এখান থেকে। কিন্তু তার খাঁই ছিল অনেক বেশি। গৌতম পালের আকস্মিক মৃত্যুর পর তার খাঁই ও নানা চাহিদা হঠাৎ করে বাড়তে থাকে। মালিকপক্ষ একসময় তার ‘চাহিদা মেটাতে অক্ষমতা প্রকাশ করে বাইরের দরজা দেখিয়ে দিলে তিনি প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। সেখানে দাঁড়িয়েই ওই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুমকি দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত এই কর্তা সবার সামনে জানিয়ে এসেছেন, তিনি নিজে টিআইডিসির এক বোর্ড মেম্বার। সিস্টার কোম্পানির কোথায় কী আছে সব তার নখদর্পণে। এই প্রতিষ্ঠানের ঝাঁপ বন্ধ হবেই।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তিনি চলে যাওয়ার চার-পাঁচদিনের মধ্যেই শিল্প নিগমের লোকেরা বুধবার জানিয়ে এসেছেন, আগামীকাল ফ্যাক্টরিতে তালা দেওয়া হবে। যথারীতি বৃহস্পতিবার তাদের একটি কারখানা ঘরে তালা দেওয়া হলো। এই খবরে বিস্মিত রাজ্যের সাধারণ জনমানস। পয়লা বৈশাখ থেকে চৈত্র পরব, বন্যা কিংবা দুর্যোগ, অষ্টপ্রহর হরিনাম সংকীর্তন থেকে কোনো দুঃস্থ পরিবারে কন্যার বিয়ে- সবখানেই যে প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি, তাদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কেন?এমন শিল্প নিগম কারা চালায়?