এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অমৃতের স্বাদ আশা করে অমৃত না হোক,অন্তত কেউ যাতে বিষ পান না করেন তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র কতটুকু সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছে?
খাবারে পুষ্টিগুণ সম্পর্কে গ্রাহকদের আরও বেশি সচেতন করতে প্যাকেটের উপরে খাবারে শর্করা,নুন ও সম্পৃক্ত চর্বির মাত্রা কত,তা আরও বড় হরফে উল্লেখ করার প্রস্তাব গত জুলাই মাসে সায় দিয়েছিল ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষ সংক্ষেপে এফএসএসএআই।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়,চার মাস অতিক্রান্ত হলেও এটিকে নির্দেশ হিসাবে কার্যকর করা গেলো না এখনও। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন জরুরি বিষয়ে শাসক এবং বিরোধী, উভয় তরফই যেন নির্বিকার।
বাজারজাত খাবারের প্যাকেটে নাম,দাম কিংবা ছাড়ের কথা যতটা ফলাও করে লেখা থাকে,পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি সেভাবে দ্রষ্টব্য হয় না।অথচ কোনও খাবারে বিভিন্ন উপাদান কী পরিমাণে উপস্থিত আছে, তা জানানো আইনি দায়বদ্ধতা।ফলে স্রেফ আইন বাঁচাতে সিংহভাগ বাণিজ্যিক সংস্থা অতি ক্ষুদ্র হরফের ফাঁক গলে দায় সারতে চাইছে।এতে লাঠিও ভাঙছে, সাপটিও মরছে না। অথচ এর ফলে সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। স্থূলতা-সহ হরেক অসংক্রামক রোগের প্রকোপ গোটা দেশে যখন তীব্র হচ্ছে, তখন দেশবাসীকে প্যাকেট-বন্দি খাবার সম্পর্কে সতর্ক করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। ‘গার্হস্থ্য ভোগ্যপণ্য সমীক্ষা ২০২২-২৩’-এ দেখা যাচ্ছে, প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যের পিছনে খরচ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে – অর্থাৎ ‘ফাস্ট ফুড’-এর প্রতি আকর্ষণের বৈশ্বিক প্রবণতা ভারতেও স্পষ্ট। পণ্যগুলি সহজলভ্য, অভিভাবকরাও সচেতন নন। ফলে মুখরোচক খাবারের স্বাদে আসক্ত হয়ে পড়ায় সেগুলি নিয়মিত খাচ্ছে বহু শিশু, যা উদ্বেগজনকভাবে তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
প্যাকেটজাত খাদ্যের গুণগত মান এ দেশে যাচাই করার সদিচ্ছা তর্কাতীতভাবে অকিঞ্চিৎকর।নিয়মিত নজরদারি চালানোর পরিকাঠামোও নেই। অভিভাবকরাও অবলীলায় ঘরের ছোট শিশুদের বায়না মেটাতে মুখরোচক ও সহজলভ্য এই প্যাকেটজাত খাবার তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।শিশুদের মধ্যে ছোট থেকেই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, বদহজম, অ্যাসিডিটি, হৃদরোগ সহ একাধিক সমস্যা বাড়ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন’স ইমার্জেন্সি ফান্ড-এর ‘ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি অ্যাটলাস’ (২০২২) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে স্থূলকায় শিশুর সংখ্যা দুই কোটি সত্তর লক্ষ ছাড়াতে পারে। উন্নত দেশগুলিতে চটজলদি খাবারের কুফল বিষয়ে এতদিনে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, প্রতিকারের নানা প্রচেষ্টাও হয়েছে।যেমন, অতিরিক্ত ওজন,হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে স্কুলগুলিতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া এবং তা নিয়ে নিয়মিত প্রচার ইত্যাদি। কিন্তু এ দেশে এসব কাজ এখনও প্রায় কিছুই হয়নি।
কোনও উদার গণতন্ত্রে রাষ্ট্র মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।সেটি কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠের অপছন্দের গোমাংস ভক্ষণ করলেও না, কেউ স্বাস্থ্যের পক্ষে অতি ক্ষতিকর ফাস্ট ফুড খেলেও না। তবে, যে খাবারটি মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ এবং যা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিরই কারণ হয় না, জনস্বাস্থ্যের উপরেও যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে- সেই খাবার থেকে মানুষকে দূরে সরানোর জন্য একটু ‘ধাক্কা’ দেওয়া যেতেই পারে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থেলারের এই তত্ত্বের (‘নাজ থিয়োরি’ বা ধাক্কা তত্ত্ব) ব্যবহারিক প্রয়োগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছে এবং হচ্ছে। সতর্কতামূলক প্রচার বা প্যাকেটের গায়ে সতর্কীকরণ যে মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে, সিগারেটের জনপ্রিয়তার ঘাটতিই তার একটি দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর খাবার মানুষের কাছে সহজলভ্য করাও একটি কার্যকর ‘ধাক্কা’। ফাস্ট ফুডের ক্ষেত্রেও ক্ষতির মাত্রা কতখানি, তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। পাশাপাশি উপাদানগুলির স্বাস্থ্যসম্মত রেফারেন্স ভ্যালু বা স্ট্যান্ডার্ড মানের উল্লেখ থাকলে আরও ভালো হয়।
দুধ থেকে মধু, যা কিনা শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের প্যাকেট বা বোতলবন্দি খাদ্য, সেখানে বিষ থাকলে মানুষ কাদের বিশ্বাস করবেন? পানমশলার বিজ্ঞাপনে বলিউড ও ক্রিকেট জগতের রথী-মহারথীদের ভিড়। পানমশলায় ক্ষতিকারক পদার্থ ছাড়া উপকারী কিছু থাকে কি? তাহলে এই সব তারকা শুধু টাকার লোভে ওই সমস্ত বিজ্ঞাপনে শামিল হন কেন? মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তাদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? রাষ্ট্রেরও নেই? অমৃতের মোড়কে বিষ বিতরণ যদি একান্তই বন্ধ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে অন্তত ক্ষতিকারক পদার্থের বিজ্ঞাপনেও কি রাষ্ট্র রাশ টানতে পারে না?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

3 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

3 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

4 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

4 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago