এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্বাধীনতা। এই শব্দখানার গভীরতা মানবজীবনে বিশাল। আজ স্বাধীনতার ৭৫ তম বৎসরে সারা দেশব্যাপী সাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন চলিতেছে । রাজসূয় এই রাষ্ট্রীয় আয়োজনের ফুরসতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনে অতীত হইতে বর্তমান অবধি মানসিক এক বিচরণ চলিতে থাকিবে । স্বাধীনতা আসিয়া ছিল মাঝরাতে । নেহরুর ভাষণে উদ্দীপিত হইয়া উঠিয়াছিল দেশ , মানে ভারত দেশের সকল নাগরিক । ব্রিটেনের রাণীর চাইতেও অধিক আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ লোক হইয়া উঠিয়াছিলেন দেশবাসীর মনে ।

আবার তাহার জীবদ্দশাতেই দেশবাসীকে আক্ষেপ করিয়া বলিতে হইয়াছিল , ‘ আজ যদি সাহেবের রাজত্ব থাকিত তাহা হইলে টের পাইতে কতদিনে …। ‘ স্বাধীনতা এক মহান প্রাপ্তি , ইহা একদিনে প্রাপ্ত হয় না । আবার এই শব্দটি আভিধানিক সকল অর্থকে উৎরাইয়া ব্যক্তি , সমাজ এবং রাষ্ট্রজীবনে অনতিক্রম্য উচ্চতায় চলিয়া যায় । এই শব্দের সহিত জুড়িয়া যায় মানুষের প্রত্যাশা , স্বাভিমান , অভিমান , চেতন অবচেতন মনের সুপ্ত , সূক্ষ্ম সকল অনুভূতি । ব্যক্তির বিকাশ , প্রকাশ তাহার অর্থনৈতিক ব্যপ্তি , মানবিক বিকাশ সকল কিছুই জুড়িায়া যায় । স্বাধীনতা তাই বহুমাত্রিক মানদণ্ডে সকলের জন্যই মহার্ঘ্য বিষয় ।

আমাদের দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তাহার প্রাকৃতিক বৈচিত্র জনসমষ্টির বিবিধতা , তার অসমসত্ত্বের মতনই বৈচিত্রের মাঝে এক অভিন্নতার ইতিহাস । দেশের মানুষের ভাষাগত , সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে জনমানসের জীবনচর্যায় বিস্তর ফারাক বা অমিল । কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদ গড়িয়া তুলিবার প্রয়াসে এই জনমানসে সতত এক বৈপরীত্য কাজ করিত । সেখানে থাকিয়া গিয়াছিল এক অভিন্নতা । ব্রিটিশ বিরোধিতায় সমগ্র দেশের সকল জাতি , ধর্ম , বর্ণের মানুষ যে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া যে লড়াই লড়িয়াছিল তাহা সারা বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত হইয়াছিল ।

স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম হোক কিংবা মহাত্মা নির্দেশিত অহিংসার পথ , সত্যাগ্রহের পথ – সকল পথ মিশিয়া গিয়াছিল এক জনস্রোতে । মানুষের এই স্রোতধারাকে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছিলেন , মহামানবের সাগর তীরে । আজ আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বৎসরেও দেশের বিশাল অংশের মানুষ দুই বেলার অন্ন , লজ্জা নিবারণের বস্ত্র আর রাতযাপনের আশ্রয়ের সন্ধান করিয়া ফিরিতেছেন । অমৃতের এই মহোৎসবে এই কঠোর কঠিন সত্য আমাদের রাষ্ট্রজীবনে এক কন্টকসম অস্বস্তি দিতেছে ।

আজিকার দিনে স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে আমাদের সকলের একটাই কাম্য , তাহা হইলো আমাদের দেশের জাতির অগ্রগমন অক্ষুণ্ণ থাকুক আর তাহার সহিত অপ্রাপ্তি , দারিদ্র দূরীকরণের আবাস যোজনা , খাদ্য ইত্যাদির প্রকল্পগুলির গতি ক্ষিপ্র হোক । স্বাধীনতার যে পুলক দেশবাসী পাইয়াছিলেন ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্টের মধ্যরাতে তাহার আবেশ কয়েকদশক স্থায়ী হইয়াছিল । আবার ১৯৬৪ সালে নেহরু যে দিনে মারা গিয়াছিলেন সেই সময়েই তাহার বিরুদ্ধে দেশবাসী নানান অভিযোগ প্রকাশ করিয়াছিলেন অগোপনে । তাহার জীবদ্দশাতেই জাতীয়তাবাদীরা তাহার দল ছাড়িয়াছিলেন দলে দলে ।

অন্যদল , বিশেষ করিয়া বামপন্থীদের রমরমা হইতে দেখা গিয়াছিল । আজ শাসকদলের বিজেপি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবলরকম নেহরু বিদ্বেষ পোষণ করিয়া থাকেন । সত্যিই কি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী খারাপ এবং অযোগ্য লোক ছিলেন ? কিন্তু তাহার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করিলে দেখা যাইবে ভারতকে আধুনিক ভিত্তির ওপর স্থাপন করিতে গিয়া তিনি মানবিক এবং বিবেকবান নেতার ভূমিকা লইয়াছিলেন । তাহার কাজের ক্ষেত্রে প্রধান শক্তি ছিল মানুষে মানুষে ঐক্যগঠন । আর রাজনৈতিক চিন্তাচেতনায় তিনি নাকি ছিলেন ব্রিটেনের লিবারেলদের কাছাকাছি ।

আবার সরকার পরিচালনায় নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি স্তালিনের সোভিয়েতের দিকে ঝুঁকিয়া থাকিতেন । অর্থাৎ বেসরকারী পুঁজিতে সরকারী নিয়ন্ত্রণের ভাবনা কাজ করিত তাহার সকল পদক্ষেপে । সেই ভাবনা হইতেই আমাদের দেশে লাইসেন্স প্রথা চালু হইয়া যায় । যাহা পরবর্তীকালে লাইসেন্সরাজ নামে বদনাম কামাই করিয়া লয় । বেসরকারী পুঁজিতে সরকারী নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতিতে শাসকদলের নেতা , যুবনেতা , সাংসদ , মন্ত্রীদের গুরুত্ব বাড়িতে থাকে । অর্থাৎ এই দেশের প্রশাসনে শুরু হইতেই দুর্নীতি বাসা বাঁধে । ইন্দিরা গান্ধী সেই পথেই হাঁটিলেন , সঙ্গে পাইলেন কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জয় গান্ধীকে ।

আজ যেসকল বিরোধী দল বা নেতারা মোদির শাসনকে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করিতেছেন তাহারা সম্যক জানেন আজ সংসদে বিরোধী অধিকাংশ নেতা যেমন মোদির সামনে ভয়ে কুকড়াইয়া থাকেন সেইদিন সঞ্জয় গান্ধীর সামনেও সেই রকমই থাকিতেন । সেইদিন জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন , আজ জয়প্রকাশ নারায়ণ নাই , তফাত কেবল এইটুকুই । ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার পর ভোটে হারিলেন । ১৯৮০ সালে আবার জিতিয়া ফিরিলেন । সেই সময়েই তিনি ঘনিষ্ঠ হইয়াছিলেন গুজরাটি ব্যবসায়ী ধীরুভাই আম্বানির সহিত । ইন্দিরা গান্ধী মারা গেলেন , কংগ্রেসও রাজ্যপাটে নাই।

কিন্তু আম্বানির উত্তরসূরিরা আজও রহিয়াছেন । বানিয়াদের সহিত সকের এই ঘনিষ্ঠতা সংস্কৃতিকে রাজনীতির অর্থনীতিকরা নামকরণ করিয়াছেন ‘ ক্রোনি ক্যাপিটালিজম ‘ । আর গত দুই দশকের ভারতে সিবিএসসি , আইসিএসসির শীর্ষ ছাত্রছাত্রীরা বিদেশের ইংরেজি শিখিবার জন্য নানান সংস্থায় লাইন দিতেছে । এক পলায়নপরতা কাজ করিতেছে তাহাদের মধ্যে ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ভারতীয় সেনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের…

11 hours ago

বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক মোদী সরকারের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র।২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা পরপাকিস্তানের বিরুদ্ধে…

11 hours ago

শূন্য কলস!!

শূন্য কলসি বাজে বেশি,আশৈশব এই বাক্যটি পাঠ্যে পড়ে বেড়ে উঠেছি আমরা সকলে।এখন পাক ফৌজির হম্বি…

16 hours ago

বাতিল করলেন তিন দেশের সফর প্রধানমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মে মাসের মাঝামাঝি ক্রোয়েশিয়া, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র…

17 hours ago

পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানে ভারতের হামলায় মৃত বেড়ে ২৬। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জানিয়েছেন,…

18 hours ago

কৃষকের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান: রতন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :;মঙ্গলবার সারা রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের…

18 hours ago