অর্থনীতির গতিভঙ্গ!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আশঙ্কা ছিলই।সেই আশঙ্কাকেও ছাপিয়ে গেলো অর্থনীতির শ্লথ বৃদ্ধি। জিনিসপত্রের চড়া দামের ফলে বাজারে বিক্রিবাট্টা যে কমছে, একাধিক সমীক্ষাতেই তা ধরা পড়েছিল।কল- কারখানার উৎপাদনেও এক ধরনের স্থবিরত্ব প্রকট হচ্ছিল।তবু চলতি অর্থবর্ষের (২০২৪-২৫) দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-আগষ্ট- সেপ্টেম্বর)দেশের আয় তথা জিডিপি বৃদ্ধির হার যে দুই বছরের সর্বনিম্ন হয়ে ৫.৪ শতাংশে বিন্দুতে এসে ঠেকবে, দেশের অর্থনীতির এতটা গতিভঙ্গ হবে বলে মনে হয়নি।শুক্রবার কেন্দ্রের পেশ করা পরিসংখ্যান দেশের অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা উস্কে দিল। দুশ্চিন্তা তো অবশ্যই।কেননা ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বেড়েছিল ৬.৭ শতাংশ,যা গত আর্থিক বছরের একই সময়ে ৮.২ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধির চেয়ে কম হলেও দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাগুলির বৃদ্ধির তুলনায় বেশ ভালো ছিল। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যে ৬.৭ শতাংশ থেকে ১ শতাংশেরও নিচে নেমে যাওয়া কীসের ইঙ্গিত দেয়?
বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, দেশ ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর কবলে। যে পরিস্থিতিতে বৃদ্ধির হার ঝিমিয়ে (স্ট্যাগনেশন) পড়ে, অথচ মূল্যবৃদ্ধি (ইনফ্লেশন) উপরে চড়তে থাকে সেই পরিস্থিতিকে বলা হয় স্ট্যাগফ্লেশন।এমন অবস্থায় অর্থনীতির অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। কারণ শিল্পের কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে।অতএব বেকারত্ব বাড়ে, অথচ দ্রব্যমূল্যে আগুন লাগে।এই অবস্থায় সুদ কমানো দরকার হলেও মূল্যবৃদ্ধি আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কায় তা করা যায় না।বস্তুত,এই কারণেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বর্তমানে সুদ কমানোর ঝুঁকি নিতে পারছে না। প্রকৃত জিডিপি (মূল্যবৃদ্ধি বাদে) ৫.৪ শতাংশ বিন্দুতে নেমে যাওয়া, সোজা কথায় অর্থনীতিতে ধাক্কার ছবিই তুলে ধরে। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান ছিল, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে
আর্থিক বৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। কয়েকটি বেসরকারী সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ৭ শতাংশের চেয়ে কম হবে এই বৃদ্ধি। সেখানে ৫.৪ শতাংশ!এর পরেও ভারত বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতি বলে ঢোল পিটানো হবে ঠিকই এবং সেই সূত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৃহদাংশকে বিভ্রমের মধ্যে রেখে ‘বাঁটেঙ্গে কাটেলে’ জাতীয় রাজনীতিও চলবে। তবে তাতে দেশের অর্থনীতি শুধরাবে না।কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেই প্রকাশ যে, চাহিদায় ভাটা বৃদ্ধিকে নামিয়েছে। চাহিদা কমায় ধাক্কা খেয়েছে শিল্পোৎপাদন। বিশেষত কল-কারখানায় এবং খনিতে। চাহিদা হ্রাসের একটি কারণ সুদের উচ্চহার। এর ফলে সমাজের একটা অংশের হাতে বাড়তি খরচের টাকা কমে যায়। কান টানলে মাথা আসার মতো তখন চাহিদাও কমে। তবে সবিশেষ আশঙ্কার বিষয়, মূল্যবৃদ্ধি কমলো না কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধি কমে গেলো। এটাই স্ট্যাগফ্লেশনের পরিস্থিতি। অর্থনীতির এমন গতিভঙ্গ আদতে সরকার ও তার পারিষদবর্গের তৈরি করা উৎসাহের আবহের একশো আশি ডিগ্রি বিপরীত।
নেসলে ইন্ডিয়ার বড়কর্তা সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলন করে ভোগের চাহিদার গতিভঙ্গের জন্য দায়ী করেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্কোচনকে।যদিও তিনি পরে বলার চেষ্টা করেছেন যে, এই সঙ্কোচন অস্থায়ী, এই পর্ব কেটে গেলে মানুষ আবার কেনাকাটা শুরু করবেন।
করোনা, লকডাউন পর্বের পরে জোগানের অভাবে মূল্যবৃদ্ধি চড়েছিল, যা স্বাভাবিক। সেই দুঃসময় চার বছর পেছনে ফেলে এসেছি আমরা। করোনাকালে জোগানের অভাবে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছিল, কিন্তু এখন চাহিদায় ঘাটতি আর্থিক বৃদ্ধিকে ক্রমশ নিচে ঠেলছে। চাহিদায় ঘাটতি কেন? এককথায় উত্তর, চাকরির অভাব এবং সম্পদের অসম বণ্টন। গত মার্চে প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিক্স-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব’ (অসাম্য গবেষণার বিশ্ববন্দিত শিক্ষায়তন)- এর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতে আর্থিক অসাম্য এখন ব্রিটিশ জমানার থেকেও বেশি। বর্তমান অর্থনীতিতে আয়বৃদ্ধি যা ঘটছে, যাকে দ্রুততম আয়বৃদ্ধি বলা হচ্ছে তা ঘটছে কেবল সমাজের মুষ্টিমেয় ধনীতম অংশের মানুষেরই। পেরু, ইয়েমেনের মতো কিছু ছোট দেশ বাদে এমন বিপুল আর্থিক অসাম্য আর কোথাও নেই। এই আর্থিক বৈষম্য আগেও ছিল ঠিকই, কিন্তু অতিমারির পরে তা প্রবলভাবে বেড়ে গেছে। অতিমারির পর থেকে অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির লাভের গুড় হাতেগোনা মানুষের হাতে পৌঁছেছে আর অসংগঠিত ক্ষেত্রে ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালানো মানুষের আয় কমেছে। সাধারণ মানুষের মাইনে কমেছে, আয় কমেছে, চাকরি গেছে, সঞ্চয় ভাঙিয়ে চলতে চলতে এক সময় রোজকার খাবার ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনায় টান পড়েছে। আর এতেই ভেঙে গেছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির চাকা। এর পরেও সরকারের টনক নড়বে, নাকি কেবলমাত্র ‘বিকশিত ভারত’-এর ভাষ্যপাঠ চলবে তা সময়ই বলবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

6 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

7 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

8 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

8 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

9 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

10 hours ago