অষ্টম বর্ষশেষে
মোদি সরকারের আট বৎসর পূর্তি সামনে রাখিয়া ২০২৪ ভোটের প্রস্তুতি লইতেছে বিজেপি। আট বৎসরের সর্বাধিক সাফল্য কোথায় কোথায়? তাহা চিহ্নিত করিয়া লইয়া প্রচার , থিম সং ইত্যাদি তৈয়ার করিয়া লইয়াছে দল। একাধারে যখন এই সকল প্রচার কর্মকান্ডের প্রস্তুতি চলিতেছে অপরদিকে চলিতেছে নির্বাচনের দেড় বৎসর আগে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের তোড়জোড়। যতদূর জানা যায়, মন্ত্রিসভা হইতে মোক্তার আব্বাস নকভির মতো সিনিয়র নেতা বাদ পড়িবেন। সকল কিছু মিলাইয়া এক চমক অপেক্ষা করিতেছে দেশের রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহলের সামনে।
তবে দেশে মূল্য বৃদ্ধির যে তাপপ্রবাহ চলিতেছে তাহাতে কতজন মানুষ এই সকল চমক উপভোগ করিবেন এই লইয়া যথেষ্ট আশঙ্কা থাকিবে। কোনও রাজ্যের নির্বাচন আসন্ন হইলেই কেবল জ্বালানি তেলের নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধিতে সামান্য সময়ের বিরতি আসিয়া থাকে। কখনও কখনও মূল্য সামান্য পরিমাণ হ্রাস করা হইয়া থাকে। এই বৎসরের শেষদিকে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন আসন্ন। তাই আপাতত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিযানে বিরতি চলিতেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা দিয়া জ্বালানি তেলের মূল্যে খানিক হ্রাস ঘটাইয়াছেন। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমস্ত ধরনের পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি ছাপ পড়িয়াছে। নির্মাণসামগ্রী হইতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য,মাছ,মাংস, কাঁচা সবজি হইতে জীবনদায়ী ওষুধ সব কিছুতেই দাম বাড়িয়াছে। শুধু বাড়িয়াছে নহে নিয়মিত হারে বাড়িতেছে।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধি লইয়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষক দল আশঙ্কা প্রকাশ করিতেছে । সরকার ঢাকঢোল পিটাইয়া মূল্যবৃদ্ধির কথা না বলিলেও মূল্যমান হ্রাসে তাহারাও চেষ্টা চালাইয়াছে , যদিও পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম ধরা কোনও মতেই সম্ভব হইতেছে না । এই লইয়া সরকারের মাথাব্যথাও কম নহে । মুদ্রাস্ফীতি এই সরকারের সামনে বিশাল সমস্যা । এইদিকে রাজপথে দাঁড়াইয়া হনুমান চালিশা পড়িবার হিড়িক অনেকটাই কমিয়া যাওয়ায় সকলের দৃষ্টি এই সময়ে পাকশালে কিংবা ট্যাকে নিবন্ধ হইয়াছে । এই সকল হাজারটা অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার বিপরীতে মোদি সরকারের রহিয়াছে করোনা লকডাউন কালের বিনামূল্যের চাল । ইহার বাহিরে আর কিছুই রহিল না । কিন্তু তাহাও কম কিসে । দেশের ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ করোনাকালের বিনামূল্যের চাল পাইতেছেন । দেশে করোনার তীব্রতা কমিলেও বিনামূল্যের চাল চলিতেছে ।
এই ধারা ২০২৪ পর্যন্ত চলিলে দেশের গরিব মানুষ নিরন্ন মরিবে আবার ভোটের মুখে এই ঘটনা শাসকদলের জন্য সুদিন হইয়া আসিতে পারে । আজকের দিনে মোদি শাসনের অষ্টম বর্ষ পূর্তি লইয়া যখন দল এবং সরকারে তুমুল প্রস্তুতি চলিয়াছে তখন মোদি মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা লইয়া কথা হইতেছে । এর আগে মোদি মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হইয়াছিল ২০২১ সালে । বড়সড় রদবদলে মন্ত্রিসভায় স্থান পাইয়াছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরার সাংসদ শ্রীমতী প্রতিমা ভৌমিক । প্রায় সকল রাজ্য হইতে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয় । এইবার রদবদল হইবে সরকারের কর্মতৎপরতার ইস্যুতে । মন্ত্রীদের কাজকর্মের রিপোর্ট কার্ড ধরিয়া ধরিয়া অদলবদল করা হইবে । প্রসঙ্গত , বিজেপি অষ্টম বর্ষ পূর্তিতে যে সকল ইস্যু সামনে রাখিয়া প্রচারে নামিতেছে তাহার মধ্যে প্রধান হইলো , জনসেবা , সুশাসন এবং গরিব কল্যাণ । বিজেপির দাবি তাহারা এই কাজগুলি দারুণভাবে করিতে পারিয়াছে গত আট বৎসরে।
বিজেপির আরও দাবি আট বৎসর আগে দেশে প্রশাসনিক দুর্নীতি ছিল চরমে , ছিল স্বজনপোষণ এবং পরিবারতন্ত্র । বর্তমানে এই সকল বিষয় অস্তিত্বহীন । সুপ্রশাসনই মোদি সরকারের পরিচয় । প্রসঙ্গত , ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসিবার আগে বিজেপির প্রধান ইস্যু ছিল প্রশাসনিক দুর্নীতি । প্রশাসনিক কাজকর্ম লইয়া বাৎসরিক যে সিএজি রিপোর্ট প্রকাশ হইয়া থাকে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কংগ্রেসের নানা মন্ত্রীকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা হয় । তৎকালীন মনমোহন সিং সরকার অভিযুক্ত মন্ত্রীগণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেন । কারও কারও ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রমাণিত হইলে জেল পর্যন্ত হয় । এই সকল ঘটনাই ছিল বিজেপির হাতের অস্ত্র । আবার নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হইবার পর বলেছিলেন , সিএজি রিপোর্ট দিয়া কোনও একটি সরকারকে দোষী দাগাইয়া দেওয়া সঠিক হইবে না । স্মৃতিকে খুব বেশি পীড়িত না করিলেও যে কেউ মনে করিতে পারেন , সেই সকল পণ্যমূল্য , পেট্রোলের দাম , নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিও ছিল বিজেপির ভোটের ইস্যু , আজ যে সকল ইস্যু লইয়া কথা বলিতেছে বিরোধী দলগুলি ।