অসহনীয় অপেক্ষা!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আর বাকি ছয় দিন। চৌদ্দ দিনের দীর্ঘ বিরতি নির্বাচনের প্রার্থী হইতে শুরু করিয়া সাধারণ সমর্থক সকলের কাছেই অসহনীয় হইয়া উঠিয়াছে। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে এবং দলগতভাবে হিসাব নিকাশ করিতেছেন। দিনের হিসাব রাতে গড়মিল হইতেছে। হিসাব কষা চলিতেছে। কেবল ভোটের হিসাব নহে অতীতের নানান নির্বাচনে কী প্রকার ভোট পড়িলে কী ফলাফল হইয়াছিল তাহার তথ্য সংগ্রহ হইতেছে। আবার যাহাদের পক্ষে সম্ভব তাঁহারা নিজ দলের কেহ কেহ একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলিয়া তাহাদের আত্মবিশ্বাস বুঝিতে চাহিতেছেন।
সমস্যা হইতেছে অধিক ভোটে। এই ভোট কেবল কর্মী সমর্থকদের বিপাকে ফেলিতেছে না, খোদ নেতারা, প্রার্থীরাও বিভ্রান্ত হইতেছেন।

এতো ভোটের হিসাব তাহারাও কুলাইয়া উঠিতে পারিতেছেন না। ফলে তাহাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সকল সময় স্পষ্ট হইতেছে না।আবার বিপক্ষ দলের নেতাদের বক্তব্যেও তাঁহারা কখনও কখনও বিভ্রান্ত যে হইতেছেন না এমন নহে। সেই ধরনের পরিস্থিতিতে নেতারাও ফের হিসাব লইয়া বসিতেছেন। প্রথম হইতে বারবার রিভিশন দিতেছেন। চুলচেরা এই বিশ্লেষণ হিসাব নিকাশ শেষ হইতে পারে কেবল ভোটের গণনা শেষ হইলেই। ধরা যায় আজ হইতে ছয়দিন পর আগামী বৃহস্পতিবার বেলা একটার মধ্যেই সকল কৌতূহল নিরসন হইয়া যাইবে।ইভিএম বন্দি জনমত প্রকাশ্য হইয়া যাইবে। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত জল্পনা কল্পনার অবসান সম্ভব নহে। গণতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়ায় সিংহভাগ ভোটার ভোট দান করিয়াছেন।

এইবার ভোটারদের মতামতের প্রকাশ ঘটিবে ইভিএমের ভোট গণনার পর। ততক্ষণ পর্যন্ত যে অপেক্ষা তাহাকে একবাক্যে অসহনীয় মনে হইতেছে নানান দল এবং দলের অনুগামী ভক্তদের। তাহাদের কাছে একেকটি দিন একেকটি রাত একেকটি বৎসরের মতন দীর্ঘ এবং অশেষ হইয়া উঠিতেছে। তাহার সঙ্গে জুড়িয়া যাইতেছে স্নায়ুর যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বাস্তবের যুদ্ধের চাইতেও কঠিন এবং তীব্র। এই লইয়া অবশ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও মাথাব্যথা থাকিবার কথা নহে। কারণ সকলই আছে ব্যক্তি আর গোষ্ঠীর পরিসরে। খাতায় অঙ্ক কষিয়া তাহা মুছিয়া আবার অঙ্ক কষা হইলে উহা কমিশন বা প্রশাসনের মাথা ব্যথার নহে।

কিন্তু দীর্ঘ বিরতিতে অন্য সমস্যাও দেখা যাইতেছে, যদিও উহাতে অবশেষে রাশ টানিতে পারিয়াছে নির্বাচন কমিশন। সে হইলো নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষ। ভোট গণনার আগেই এই সংঘর্ষ তীব্র হইয়া দাঁড়ায়। একজনের মৃত্যুও হইয়াছে। ঘটনাটি উদ্বেগের এবং দুশ্চিন্তার। সারা রাজ্যের জন্যই। 2020 নির্বাচনকে হিংসামুক্ত করাইতে নির্বাচন কমিশন যে মিশন লইয়াছে তাহা ১০০ ভাগ না হইলেও সফল। আবার ভোটের পরপরেই চাগাইয়া উঠা নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস দমাইতে কমিশন যে কঠোর ভূমিকা লইয়াছে তাহাতে বলা যাইতে পারে গণনার দিন অবধি নির্বাচন প্রক্রিয়া অবাধ ও শান্তিপূর্ণ থাকিবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলিবে চার ফেব্রুয়ারী অবধি।

ততদিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকিবে নির্বাচন কমিশন। ওই তারিখ অবধি নির্বাচনি সন্ত্রাসে রাশ টানিয়া রাখা যাইবে। এরপর আসিবে অন্য পর্যায়।
চার তারিখের পর রাশ ফিরিয়া যাইবে মুখ্যসচিব আর ডিজিপির হাতে। তাহাদের সামনে কোনও সরকার ততক্ষণ আসিতেছে না যতক্ষণ অবধি না জয়ী কেহ রাজ্যপালের অনুমোদনক্রমে শপথ লইয়া সরকার গঠন করিতেছে। তবে জয়ী দলের প্রভাব প্রশাসনে পড়িবেই। তাহাদের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করিবে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস কোন পর্যায়ে থাকিবে। তাহাতে কতটা রাশ টানা হইবে আর কতটা ছাড়িয়া দেওয়া হইবে অনেকটাই নির্ভর করিবে জয়ী দলের উপর। বাকিটা সামলাইবে প্রশাসন।

তবে এইবার ভোটের পরেও অন্তত পক্ষকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হইতেছে রাজ্যে। যে চারশো কোম্পানি বাহিনী আসিয়াছিল তাহার একটি অংশ মেঘালয়, নাগাল্যাণ্ডের নির্বাচনে পাঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে। বাকিরা রাজ্যেই রহিয়াছে। তাহাদের সেই সময়ে কতটা কাজে লাগানো হইবে তাহাই তখন দেখার বিষয় হইবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস ত্রিপুরা রাজ্যের এক কর্দমাক্ত পরম্পরা। এই সময়ে মানুষ এই সকল সন্ত্রাসের বিপক্ষে ভোট দিয়াছেন, এই কথা হলপ করিয়া বলা যায়। হিংসামুক্ত পরিবেশ পাইয়া বিশাল সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে গিয়াছেন, ইহার অর্থ হইলো ত্রিপুরার মানুষ ভোট দিতে ভালোবাসেন, সেই জন্য অহিংস পরিবেশ তাঁহারা চান। ফলে ভোট গণনার পরে যদি আবারও হিংসার ঘটনা ঘটিয়া যায় তাহা হইলে মানুষের প্রত্যাশারই মৃত্যু ঘটিবে। সেই দিকে সকল দল বিশেষ করিয়া নির্বাচনে যারা জয়লাভ করিবে তাহাদের উপর দায়িত্ব থাকিবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

19 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago