আইবিএসে হোমিওপ্যাথি।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কথায় বলে পেট ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। তবে পেটের সমস্যা কোনও কোনও সময় হবেই। আর তা হলে অনেক দিন ধরে ভুগতে হয়। এর পরে শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হয়। চোখের সামনে সুন্দর সুন্দর খাবার থাকলেও পেটের সমস্যার কারণে অনেক কষ্টে জিহ্বা সামলে নিতে হয়। পেটের সমস্যাগ্রস্ত রোগীর ভোগান্তির শেষ নেই। যার সমস্যা হয় সে জানে পেটের জ্বালা কী যে জ্বালা। অনেকের কাছেই আইবিএস একটি মহা আতঙ্কের নাম। দিনের পর দিন এমন চলতে চলতে একসময় তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠে অনেকেই।আইবিএস (IBS) কী ? ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম হচ্ছে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণার কারণ হিসাবে নানা থিওরি বা ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ Rome III Diagnostic Criteria অনুসারে আইবিএস-এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেটি হল, বারবার পেট ব্যথা বা অস্বস্তি যদি মাসে কমপক্ষে তিনদিন সর্বশেষ তিন মাসে দেখা যায় এবং সেই সঙ্গে আরও দুই বা ততোধিক লক্ষণ থাকে। যেমন, মলত্যাগের পর অবস্থার উন্নতি হওয়া, মলত্যাগের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা মলের ঘনত্ব ও অবস্থার পরিবর্তন হওয়া তাহলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় সেই মানুষটি ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমে ভুগছেন। আইবিএস শরীরের গঠনগত সমস্যা নয় কার্যগত সমস্যা বা ফাংশনাল ডিজঅর্ডার। তাই সাধারণত কোনও প্রকার পরীক্ষাতেই আইবিএস ধরা পড়ে না। খাদ্যনালী নার্ভ সহ সার্বিক ভাবে গোটা শরীরের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক।সেখান থেকেই সিগনাল আসে ও তার ফলে বাওয়েল মুভমেন্ট দ্রুত হয়। তার পরেই আসে মলত্যাগের বেগ কিন্তু এই সিগনালিংয়েই ফাংশনাল সমস্যা থাকলে তৈরি হয় আইবিএস। তাছাড়া অনিয়মিত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, ব্যায়ামের ঠিক পরে খাবার খাওয়া, এমনকী অতিরিক্ত ব্যায়ামও কখনও কখনও আইবিএসের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। আসলে জীবনযাপনের অভ্যেস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ছাপ ফেলে মস্তিষ্কে। ফলে স্বাভাবিক ভাবে আইবিএস জুড়ে যায় মস্তিষ্কের সিগনালিংয়ের সঙ্গে। তাছাড়া অন্ত্রের মধ্যে জীবাণুর সংক্রমণের জন্য (Blastocystis hominis, Dientamoeba fragilis) আইবিএস শুরু হতে পারে। আইবিএস-এর প্রধান কিছু লক্ষণ— তলপেটে ব্যথা হয়, ব্যথা মোচড় দিয়ে শুরু হয় এবং মলত্যাগ করার পর ব্যথা কমে যায়।পেটের মধ্যে সারাদিন বুদবুদ আওয়াজ হতে থাকে। মনে হল পেটের মধ্যে গ্যাস ভরে আছে।কখনও পাতলা, পরমুহূর্তে কষা মলত্যাগ হয়।ঘনঘন পাতলা মলত্যাগ হয় এবং প্রতিবার খুব অল্প পরিমাণে মলত্যাগ হয়।মলত্যাগের সময় প্রচুর পরিমাণে মিউকাস যা চলতি ভাষায় আম বের হয়।
যাদের কষা মলত্যাগের প্রবণতা বেশি তারা পেটে ব্যথা নিয়ে টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও তেমন মল বের হয় না।মলত্যাগের সমস্যা থাকলেও রোগীর তেমন ওজন হ্রাস পায় না। মলত্যাগের সমস্যার পাশাপাশি রোগীর ক্ষুদামন্দা। ঘনঘন প্রস্রাব এবং অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, চিন্তায় রোগীদের এই সমস্যা বাড়ে।
অনেক সময় কিছু খাবার সঙ্গে সঙ্গে বমিবমি ভাব অনুভব হয়।পেটে একটি অস্বস্তি বোধ কাজ করে সবসময় খিদে পেলেও খাবার গ্রহণে একটি ভয় কাজ করে সবসময়।অনেক সময় মলের মধ্যে প্রচণ্ড অ্যাসিডিক ও অম্লযুক্ত গন্ধও থাকে। মিষ্টি খেলে সমস্যা বেড়ে যায়
অনেকেরই।বদহজম চিরজীবনের সঙ্গী অধিকাংশ আইবিএস আক্রান্ত মানুষের।
রাতে ঘুমের সমস্যা হলেও এই রোগের দাপট বেড়ে যায়। অনেকদিন ধরে ভুগতে থাকার ফলে শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে যা পরে হাড়ের গোড়ার ব্যথার দিকে অগ্রসর হতে পারে। আইবিএস নির্ণয়ক পরীক্ষা এই রোগ নির্ণয় করার জন্য সাধারণত কোনও পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। রোগী যে সমস্যা বা বর্ণনা দেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাতেই রোগ নির্ণয় করা হয়ে যায়। তারপর রোগীর পেটের অন্য সমস্যা থাকলে অনেক সময় লিভার ফাংশান টেস্ট, পেটের সোনোগ্রাফি ইত্যাদি করা হয়।আইবিএস নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায় সব থেকে বড় উপায় হচ্ছে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, সঠিক সময়ে ঘুমানো, চিন্তামুক্ত থাকা, তাছাড়া কিছু কিছু খাবার যেমন— ময়দাযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত খাবার না খাওয়াই ভাল। নরম ভাত, হালকা ঝোলের তরকারি, কাঁচা পাকা পেঁপে, বেল, গরম টাটকা খাবার, রাত্রে ঘুমানোর আগে হালকা গরম জল আইবিএস রোগীদের খুবই উপকারে আসে। তাছাড়া নিয়মিত যোগাভ্যাস, শরীর চর্চা আইবিএস রোগীর কষ্টকে অনেকটা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, হোমিওপ্যাথিক সম্বন্ধে যারা ধারণা রাখেন তারা ভাল করেই জানেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে সারিয়ে তোলে, রোগকে নয়। হতে পারে সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক। আইবিএস রোগীর উপসর্গগুলিকে গুরুত্ব দিয়েই ওষুধ দেয় একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

13 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

13 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago