আগরতলার অসুখবিসুখ

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বানভাসি রাজধানী । শহরের ভেতরে কাটাখাল আর হাওড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলের চিরাচরিত জলমগ্ন তা দিনে দিনে শোচনীয়চেহারা লইতেছে । বামেদের আমলে এডিবির অর্থানুকূল্যে জলনিকাশের যে মহাযজ্ঞ শুরু হইয়াছিল রাম আমলে তারা স্মার্টসিটি রূপে আমাদের সম্মুখে প্রকট হইলো । কালে কালে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ হইলো,বাস্তব দেখা গেল বাম আমলে এই শহরের জল নিষ্কাশনে যতগুলি পাম্প ছিল গত চার সাড়ে চার বছরে আরও তিনখানা বাড়িল । এই পাম্প দিয়া জল সেচিয়া ফেলা হয় হাওড়া আর কাটাখালে । এর বাহিরে জল নিষ্কাশনে আমাদের ভরসা পূর্ব হইতে পশ্চিমগামী তিন তিনখানা খাল , যেগুলি আমাদের নাগরিক জমা জল নিম্ন অববাহিকার বাংলাদেশে লইয়া যায় । এই জলের নিঃসরণ গতি কতটা তাহার অপরেই নির্ভর করিবে জলমগ্ন আগরতলার মানুষ কখন পরিত্রাণ পাইবেন । মূল আগরতলার যে অংশটির কথা বলা হইতেছে এই অংশের গৃহস্থের অবস্থা দিন দিনে শোচনীয় হইতেছে ।

সাংবৎসরিক জলমগ্নতায় তাহাদের গেরস্থালির নানান জিনিস নষ্ট হইতেছে । লেপ , তোষক , কম্বল , কাঁথার কথা ছাড়িয়া দিলেও বৈদ্যুতিন সামগ্রী প্রতি বৎসর বদলাইতেছে । এই তো গেল স্বাভাবিক লোকসানের কথা । ইদানিং জলমগ্নতা আরও গভীর হওয়ায় ভূমিতল ঘরের খাটে , আর খাটের ওপরে সোফা , তাও ভিজিতেছে । এমন অনেক পরিবার রহিয়াছে সন্তান সন্ততিরা সকলেই দূরে , দূরবর্তী শহরে রহিয়াছে । ঘরে কেবল বৃদ্ধ মা বাবা । কিংবা যে কোনও একজন রহিয়াছেন কোনও ঠিকা মাসি বা দূরসম্পর্কিয় আত্মীয়ের তত্ত্বাবধানে । তাহাদের পরিবারে কি অবস্থা এখন ? এমন নহে যে , এই জলমগ্নতা আচমকা কোনও বাঁধ ভাঙিয়া যাইবার কারণে হইয়াছে। প্রশাসন এবং শাসকদল বা বিরোধী দল এই সময়ে বানভাসি মানুষকে । অস্থায়ী শিবিরে যাইয়া শুকনো খাবার দিয়া সংবাদ মাধ্যমে ছবি দিয়া থাকে , কিন্তু এই ধরনের বিপন্নতাগুলির খবর কয়জন রাখিয়া থাকে বা আদৌ কেউ রাখিতেছে কি ?

ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে আগরতলার ভূপৃষ্ঠ অনেকটাই ঢালু প্রকৃতির । এই অংশে এক সময় প্রচুর জলা এবং পুকুর ছিল । গত ২০ নিয়েও বা ৩০ বৎসরে নগরায়ণের কারণে আইনি বেআইনিভাবে এই সকল পুকুর বুজাইয়া বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি হইয়াছে । শহর আগাগোড়া মুড়িয়া গেছে কংক্রিটে । ফলে বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাটির কোনও দেখা হয় না । মাটি জল শুষিতে পারে না । আবার পুকুর জলাগুলি বন্ধ হইয়া যাওয়ায় জল আসিয়া | কংক্রিট আর বিটুমিনের পাটাতনে দাঁড়াইয়া পড়ে । জল দাঁড়াইয়া থাকিলে মানুষ আর তাদের বাড়িঘর ডুবিতে থাকে ।আগরতলা শহরখানা হাওড়া নদীর পাড়ে , এই কথা শিশুৱা শৈশবেই পড়িয়াছে । এই হাওড়া নদীর বক্ষ কিন্তু আজ আগরতলার ভূমিতল হইতে অনেক ওপরে চলিয়া আসিয়াছে । নদীর বুকে চরা পড়িয়াছে ঊর্ধ্ব অববাহিকায় বন ধ্বংস , ভূমিক্ষয় । নিম্ন অববাহিকায় নদীর পাড় দখল করিয়া বসতি স্থাপন , অবৈজ্ঞানিকভাবে নদী হইতে ক্রমাগত বালু তোলার কারণে ।

নদীর গতি বা প্রবাহ যেমন নষ্ট হইতেছে তেমনি বুজিয়া যাইতেছে নদীবক্ষ । এই প্রকারেই পৃথিবীর বুক হইতে নদী হারাইয়া যায় । হাওড়ার গভীরতা বৃদ্ধির কথা শোনা গিয়াছিল বাম আমলেই । তাহার রেশ এই আমলেও ছিল প্রথম বছর দুয়েক । স্মার্টসিটির সঙ্গে হাওড়াও স্মার্ট হইবে এমন ভাবা গিয়াছিল । বাস্তবে কোথায় কি ! চন্দ্রপুর হইতে বটতলা বাজার বা শ্মশান অবধি হাওড়ার জমি বেদখল লইয়া এই আমলে কাহারও মাথাব্যথা নাই । আগের আমলে বটতলার হাওড়া মার্কেট হইতে হাওড়ার বাঁধ ধরিয়া পূর্ব দিকে হাওড়ার অনেকটা জমি দখলমুক্ত করা হইয়াছিল । কিন্তু এরপর আঠারোর ভোট আসিয়া যাওয়ায় আর উদ্ধার অভিযান আগায় নাই । যেটুকু এলাকা দখলমুক্ত হইয়াছিল সেই এলাকায় বাঁধ প্রশস্ত করা গেছে । বাকিটা রহিয়াছে সঙ্কীর্ণ অবস্থায় । আজ হাওড়া যখন প্রতাপ দেখাইয়া বিপদসীমার ওপরে চলিয়া আসিয়াছে এবং দক্ষিণ পাড় ভাসাইয়া দিয়াছে তখন অন্যতম অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে এই বাঁধ। মানুষজন বাঁধে উঠিয়া জল মাপিতেছে এবং সাধারণ ইঁদুরের গর্ত দিয়া যদি জল আগরতলার ঢুকিয়া পড়ে তাহা হইলে ইহার পরিণতি কি কি হইতে পারে এই লইয়া শিহরিত হইতেছেন । এই ঘটনাগুলি দেখিতে দেখিতে আমাদের গা – সয়া হইয়া পড়িয়াছে । জানা কথা জল নামিয়া গেলে আমরা সকল বিপদের কথা ভুলিয়া যাইবো । হিরা – মানিক কিংবা আরও বড় কোনও খনির স্বপ্নে বিভোর হইবো বা আঙুল কামড়াইয়া ব্যস্ত থাকিব আরও একটি বর্ষার অপেক্ষায় । আমাদের সরকারগুলিও একইভাবে একে অপরকে গালাগাল করিয়া আমাদের তৃপ্ত করিবেন ।

Dainik Digital

Recent Posts

ইএসআইর ডিসপেনসারির বেহাল দশায় রোগীরা বিপাকে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ নিতে গিয়ে এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিয়োরেন্স কর্পোরেশন (ইএসআইসি) ভুক্ত সাধারণ কর্মচারী…

6 hours ago

নয়া উদ্বেগ এইচএমপিভি!!

২০১৯ সালে করোনা মহামারির পাঁচ বছর পর ফের শিরোনামে চিন।এবার এইচএমপিভি (HMPV) নামক নয়া ভাইরাসের…

6 hours ago

আরও ২৫ স্কুল বিদ্যাজ্যোতির আওতায়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যসরকারের বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পড়াশোনাও লাটে উঠেছে। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন করছে না শিক্ষা…

7 hours ago

তীব্র ভূমিকম্প তীব্বতে, মৃত্য মিছিল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫৩ জনের মৃত্যু। তাছাড়াও ৬০ জন আহত হয়েছেন। তবে…

7 hours ago

এনএইচআইডিসিএলের ভূমিকা রহস্যজনক, প্রশ্নের মুখে সরকার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়সরকারের সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমার জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য…

7 hours ago

কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মন জয় করুন: মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ফ্লোরেন্সনাইটিঙ্গেলের কথা স্মরণ করে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ…

8 hours ago