আগরতলা-আখাউড়া

 আগরতলা-আখাউড়া
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এক এক করে বাহান্ন বছর অতিক্রম করেছে। ফলে নতুন করে এই বন্ধুত্ব নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্কের ‘গভীরতা’ কতটা তা হয়তো কোনও দিনই পরিমাপ করা যাবে না। কারণ, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সম্পর্ক এই গুলি মাপার জন্য আজ পর্যন্ত কোনও যন্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়নি।ভবিষ্যতেও এমন কোনও সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এই গুলি শুধু অনুভব করতে হয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই সম্পর্ক শুধু দুটি দেশ বা জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নয়।এই সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, সমঝোতা এবং শ্রদ্ধার থেকে জন্ম নেওয়া দুটি আত্মার মধ্যকার সম্পর্ক।এই সম্পর্কে দুই দেশের বীর শহিদদের মিশ্রিত রক্তধারায় উপর নির্মিত একটি চিরস্থায়ী সম্পর্ক।যা চিরকাল অটুট থাকবে বলে বিশ্বাস।সেই বিশ্বাস থেকেই দুই দেশের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার গত পাঁচ দশকে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে উভয়দেশের জনগণের কল্যাণে।এমনই এক প্রকল্প হচ্ছে আগরতলা-আখাউড়া রেল লাইন প্রকল্প।এই প্রকল্পে আগরতলার সাথে যুক্ত হবে বাংলাদেশের আখাউড়া রেল লাইন। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বহু প্রতীক্ষিত রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। এরপরই শুরু হয় নির্মাণ কাজ। আঠারো মাস মেয়াদি প্রকল্পটি নির্মাণের সময় সীমা ইতিমধ্যে চারদফা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও সহজ করে বললে,প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্য মাত্রা বার বার নির্ধারিত করার পরও তা সম্পন্ন করা যায়নি।যে প্রকল্প আঠারো মাসে শেষ করার কথা ছিলো,তা ইতিমধ্যে সত্তর মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।নির্মাণ কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। সর্বশেষ যে সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে। হাতে আছে বড়জোর দেড় মাস । মাস খানেক আগে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রাজ্যসফরে এসে বলেছিলেন, চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হবে এবং শীঘ্রই লাইন চালু হবে। রাজ্যের নয়া পরিবহণমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীও কিছুদিন আগে রেল প্রকল্প পরিদর্শন করে বলেন, চলতি বছরেই আগরতলা- আখাউড়া রেল লাইন চালু হয়ে যাবে।প্রশ্ন হচ্ছে,এইসবই কি শুধু কথার কথা?কেননা বাস্তব বলছে অন্যকথা।এই প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশে এখনও প্রায় চার কিলোমিটার রেল লাইন বসানোর কাজ রয়েছে। গঙ্গাসাগর স্টেশনে এখনো ইমিগ্রেশন ও কাস্টম ভবনের নির্মাণ অর্ধ সমাপ্ত। তাছাড়া আগরতলার অংশেও এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। এখানেই শেষ নয়,আখাউড়া থেকে ঢাকা রুটে টংগী পর্যন্ত মিটার গেজ লাইন রয়েছে।সেই লাইনের এখনও কোনও পরিবর্তনের খবর নেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও কত বছর লাগবে?প্রশ্ন উঠছে, কিসের উপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে চলতি বছরেই রেল চালু হয়ে যাবে?যেখানে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ কাজ এখনও বাকি আছে।আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ট্রান্স এশিয়ান রেল পথের সঙ্গে যুক্ত হবে ত্রিপুরা’ এমন একটি সংবাদ শোনা গিয়েছিলো। ত্রিপুরার আমবাসার জহরনগর থেকে মিজোরামের কোলাশি হয়ে মায়ানমারের ডারলং পর্যন্ত একটি রেল রুট তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছিলো। এর মধ্যে জহরনগর থেকে মিজোরামের কোলাশিবের দৈর্ঘ্য ১০৯ কিলোমিটার এবং সেখান থেকে মায়ানমারের ডার্লং পর্যন্ত দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার।উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মাণ শাখার মুখ্য কার্যকর্তা হরপাল সিং আগরতলায় এসে এই প্রস্তাব ও সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তখন এই নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গত বছর তিনেক পরে সেই ট্রান্স এশিয়ান রেল রুট প্রকল্প নিয়ে কারোর কোনও শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সে যাই হোক, বহু প্রতীক্ষিত আগরতলা- আখাউড়া রেল রুটে কবে রেলের বাঁশি বাজবে?সেটাই এখন নব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.