নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!
আগুন বাজারে চিত্তদাহ
আর্থিকভাবে বিপর্যন্ত মানুষ গত তিন – চার বছর ধরেই মুল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছেন । নেই কর্মসংস্থান । বরং কর্মচ্যুতির ফরমান , কর্মসংকোচন মানুষকে যারপর নাই দিশাহারা করে তুলেছে । কিন্তু দুদিন বাদে বাদেই নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে জীবনে বেঁচে থাকাটাই মধ্যবিত্ত , নিম্ন মধ্যবিত্ত , কিংবা খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের নিকট এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে । পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে পড়েছে যে , মানুষের সহনসীমার মাত্রাকেও ছাড়িয়ে ঊর্ধ্বগতিতে বইছে মূল্যবৃদ্ধি । বর্ষাকালে জলডুবি কিংবা অতিবর্ষণ সহ বন্যার প্রকোপ নতুন কোনও ঘটনা নয় । কিন্তু বহু এলাকায় বন্য হওয়ার ফলে পচনশীল পণ্যের দাম এমনিতেই বেড়ে যায় । সারা বছরই বেলাগাম বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের চিত্তদাহের কারণ হয় ।
বাজারে হামেশাই কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যায় মূল্যবৃদ্ধি এবং সংসারের ভার আর টানতে না পারার হাস্তুহুতাশের কথা । কিন্তু দিন দিন এই ভোগান্তির সঙ্গে যখন বর্ষার অজুহাতকে সামনে এনে নিত্যপণ্যের দাম অগ্নিমূল্য হয়ে দাঁড়ায় তখন এর ছ্যাঁকা অনেকটাই অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে । দিন আনি দিন খাওয়া মানুষের সামনে যখন আলু সেদ্ধ আর ভাতই হচ্ছে । অমৃতসমান সম্বল , তখন যদি একলাফে ৩০ টাকা কেজি দরের আলু ৪০ টাকা হয়ে যায় , তখন বুঝতে হবে শুধু বন্যাজনিত কারণে কিংবা কোনও অজুহাতে এই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে না । এটা অন্য আসলে কালোবাজারি । রাস্তায় ধস পড়েছে , কিংবা আসাম – আগরতলা জাতীয় সড়ক বন্ধ— এই কারণে মুহূর্তের মধ্যেই বাজারে আগুন দামে লাফিয়ে বাড়বে পণ্যমূল্য সেটা কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় । শুধু তাই নয় , খোদ সরকার তথা প্রশাসনের তরফেও যখন রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করা হয় খাদ্যপণ্য সহ সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুত রয়েছে ।
তখন লাফিয়ে লাফিয়ে চাল , আলু , পেঁয়াজ , তেল , সাবান , গুঁড়ো দুধ থেকে শুরু করে দেশলাইয়ের পর্যন্ত দাম বেড়ে যায় অথচ প্রশাসন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে – এই হটকারিতাকে তখন প্রশাসনের বন্ধ্যাত্ব ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে ? একই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম । পেট্রোল , ডিজেল রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে অ্যাভিয়েশন ফুয়েল বা বিমানের জ্বালানীর মূল্য সবই বেড়ে চলায় পণ্য আমদাণী – রপ্তাণীর উপরও মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে । আলু , পেঁয়াজ , টম্যাটো , পটল , ঝিঙে , বেগুন থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও বেড়েছে । এর জন্য ব্যবসায়ীরা জ্বালানির বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন । আনাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফলের দাম । বহিঃরাজ্য থেকে আমদানি করা ফলের মধ্যে আমের মূল্য আচমকাই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে । যদিও গত দুইদিনে জাতীয় সড়ক স্বাভাবিক হয়ে যানবাহন চলাচলের উপযোগী হলেও পণ্যমূল্য হ্রাসের কোনও লক্ষণ নেই ।
উদ্বেগের বিষয় হলো , বেনজির এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আরও কমে যাবে । আর এতে করে সঙ্কট আরও বাড়বে । অর্থনীতিবিদরা বলেন , অর্থনীতির সাধারণ সূত্রই হলো যার যত কম আয় তার খাদ্য ব্যয়ের হার তত বেশি।কারণ খাদ্য হচ্ছে অতি আবশ্যক প্রয়োজনীয়তা । এই গভীরতর সঙ্কট এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে সমাজে অসামের ব্যবধানটা যেমন বাড়বে তেমনি ছোট দোকানদার ও ছোট ব্যবসায়ীদের বিক্রি ও অনেকটা হ্রাস পাবে ।এই অবস্থার রাজ্য সরকার কে আরও অনেক বেশি সদর্থক ভূমিকা নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এবং বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।অচল হয়ে পড়া অর্থনীতিকে সচল করার জন্য সরকার বা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ ছাড়া আর বিকল্প কোনও পথ নেই।