আগের অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান-৩-এর প্রস্তুতি’।

 আগের অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান-৩-এর প্রস্তুতি’।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চন্দ্রযান-২ আর চন্দ্রযান-৩ এর মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, চন্দ্রযান-২ খুব কম পরিমাণেই আলোর তীব্রতা সহ্য করতে সক্ষম ছিল। যেকোন আঘাতকে সহ্য করার ক্ষমতাও ছিল কম। আমরা মূলত এই দু’টি বিষয়টিকে মাথায় রেখেই চন্দ্রযান-৩-কে তৈরি করেছি। চন্দ্রযান-২-এর নকশায় কী কী ভুল ছিল সেগুলিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভুলগুলি শুধরে নিয়ে আমরা চন্দ্রযান-৩-এর নকশা প্রস্তুত করেছি। কী কারণে আমাদের আগের অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল সেই বিষয় অনুসন্ধান চালানো হয়েছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই এবারে কীভাবে চন্দ্রযান-৩- কে রক্ষা করা যায় তার উপায়গুলো খুঁজে বার করা হয়েছে।নয়া মিশনে নতুন কোনও প্রযুক্তিকে কি ব্যবহার করা হয়েছে?নিশ্চয়ই। এই মিশনে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি নতুন প্রযুক্তি। যার নাম ‘শেপ’। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর ছবি ও তথ্য পাঠাতে পারবে চন্দ্রযান-৩। এবারের উৎক্ষেপণ যাতে নির্বিঘ্নে করা যায়, তার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। উৎক্ষেপনের সময় কী কী অসুবিধা বা ঝুঁকি থাকতে পারে, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবার চন্দ্রযানটির নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।এবারের চন্দ্রযান কি ভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে?পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ধীরে ধীরে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে চন্দ্রযান। তারপর চাঁদের চারিপাশে প্রদক্ষিণ করে তির্যক ভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করবে। ল্যান্ডিংয়ের পর ল্যান্ডারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার। চাঁদে প্রায় দু’মাস থাকবে রোভারটি। সেখানে চাঁদের পৃষ্ঠে রাসায়নিক বিশ্লেষণের কাজ করবে রোভার।
বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণের সময়। ১৪ জুলাই একটি ঐতিহাসিক দিন ঘোষণা করেছেন আপনারা। মিশনের কি
কাউন্ট ডাউন শুরু করবেন এবারে?লঞ্চপ্যাড ১৯ জুলাই পর্যন্ত খোলা থাকবে। যদিও কোনও কারণে আবারও চন্দ্রযানের দিন পেছানোর প্রয়োজন পরে তা হলেও তা ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তবে চন্দ্রযান- ৩’র অভিযান নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ইসরোর সবকটি বিভাগ।উৎক্ষেপণের জন্য যেমন অনুকূল আবহাওয়ার প্রয়োজন তেমনই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযানকে সফট ল্যান্ডিং করানো আমাদের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের শুধু নয়া সমস্ত ভারতবাসীর আশা এবার আমরা তা করতে পারব। আজ পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশের মহাকাশ যানই চন্দ্ৰপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে চন্দ্রযান-২ অভিযান হলেও তা সফট ল্যান্ডিং করতে পারেনি চাঁদের বুকে। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই ফের চন্দ্রযান-৩’র পথ চলা শুরু।
পরপর দুটো অভিযানেই কেন আপনারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুকেই বেছে নিলেন?না, এই তথ্য একটু ভুল আছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান নামবে না। চন্দ্রযান নামছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে। কিন্তু দক্ষিণ মেরু বলে আপনার যেটা বলছেন সেটা ভুল। অ্যাপোলো মিশনে চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু চাঁদের যে অংশে মানুষ অবতরণ করেছিল সেই অংশের সঙ্গে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের আবহাওয়া একেবারেই মেলে না। মূলত অন্ধকারাচ্ছন্ন চাঁদের এই অঞ্চল। এই অংশটিতে তাই বরফ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাছাড়াও চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে রয়েছে বিশালাকার বহু গর্ত। সেই গর্তগুলিতে এমন কোনও উপাদানের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে যাতে সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। চাঁদের দক্ষিণ-মেরু অঞ্চলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। আমেরিকা আর্টিমিস-৩ মিশনের মাধ্যমে এই অংশ সম্বন্ধে তথ্য অন্বেষণ করবে বলে জানিয়েছে।
১৯ জুলাই পর্যন্ত কেন সময়সীমা রাখছেন আপনারা?চাঁদের ১ দিন পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। চাঁদে কখন সূর্যোদয় হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ল্যান্ডারটিকে সফট ল্যান্ডিং করানো হবে। ল্যান্ডিংয়ের সময় চাঁদে সূর্যের আলো থাকা আবশ্যিক। চাঁদের সূর্যের আলো পড়ে ১৪ থেকে ১৫ দিন। পরের ১৪ থেকে ১৫ দিন চাঁদের সূর্যের আলো পড়ে না। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২-এর সময় লেগেছিল প্রায় ৪৮ দিন। এর থেকে অনেক বেশি সময় লেগেছিল। অ্যাপেলো মিশনে।
এবারেও ট্রান্স লুনার ইঞ্জেকসনস বা টিলিস্ প্রযুক্তি থাকছে। যাতে প্রয়োজন অনুসারে গতি ও শক্তিকে বাড়ানোর জন্য সময় মেপে রকেটের মধ্যে থাকা ইঞ্জিনগুলি কাজ করতে পারে। ১৪ জুলাই উৎক্ষেপণ হলে আগামী অগাস্টের শেষ দিকে ২৩ থেকে ২৫-এর মধ্যে চন্দ্রযান-৩ পৌঁছাবে। চাঁদে পৌঁছাতে মহাকাশযানটির সময় লাগবে পারে ৪৫-৪৮ দিন। সেই হিসাবেই আগস্টের ২৩ থেকে ২৫-এর মধ্যে বলা হচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.