ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
আগে ছিল লুঠ ইস্ট পলিসি,এখন অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিঃ নরেন্দ্র মোদি

হাতে গোনা আর মাত্র একদিন বাকি। এরপরেই ১৯ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনে অনুষ্ঠিত হবে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। পাশাপাশি একইদিনে ৭ রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। এবং আগামী ২৬ এপ্রিল পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই গোটা রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী প্রচারে জোড় দিয়েছে শাসকদল বিজেপি। ইতিমধ্যেই গত ১৫ই এপ্রিল তারকা প্রচারক হিসেবে ত্রিপুরার কুমারঘাটে রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থীদের সমর্থনে জনসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।

আজ অর্থাৎ বুধবার ছিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের সরব প্রচারের শেষ দিন। পূর্ব নির্ধারিত সুচি অনুযায়ী বুধবার দুপুরে আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে কনভয়ে করে সরাসরি চলে আসেন আগরতলা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে এয়ারপোর্ট থেকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে পরিলক্ষিত হয়েছে শত শত কর্মী সমর্থকদের ভিড়। গেরুরা পতাকায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা শহর আগরতলাকে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী সরব প্রচারের শেষ দিনে আগরতলা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এক বিজয় শঙ্খনাদ জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। যেখানে রাজ্য বাসীকে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড মানিক সাহা, পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব, পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের প্রার্থী কৃতি সিং দেববর্মন, স্বদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অন্যান্য মন্ত্রীগণ। মঞ্চে পারম্পরিক রিসা পরিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা মানিক সাহা। এদিনের এই জনসভাকে কেন্দ্র করে গেরুয়াময় হয়ে ওঠে গোটা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান। বিজয়ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক।

এদিন রাজ্যবাসীকে সম্বোধন করতে গিয়ে প্রথমেই বাংলা ভাষায় ‘প্রিয় ভাই ও বোন সবাইকে নমস্কার’ বলে নিজের বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, যখনই তিনি স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আসেন প্রতিবারই সকলের মধ্যে আগের তুলনায় বেশি উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবারই আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে তোলেন কর্মী সমর্থকরা। এছাড়াও তিনি বলেন, দেশ আজ বিকশিত ত্রিপুরা বিকশিত ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এদিন ময়দানে জনসমাগমকে উদ্দেশ্য কিরে তিনি বলেন, এই জনসমাগম এবং সকলের উৎসাহ বলে দিচ্ছে ত্রিপুরা আর পেছন ফিরে তাকাবে না। ত্রিপুরা যা ভেবে নেয় সেটাই পূরণ করে দেখায়। আর ত্রিপুরা ভেবে নিয়েছে- ফির একবার, মোদি সরকার। তিনি আরও বলেন, ভারতকে বিকশিত করার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার এতো দশকেও কংগ্রেসের শাসন চলাকালীন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আর ত্রিপুরাতে কমিউনিস্টরা ত্রিপুরার মানুষকে শুধু শোষণ করে গেছে। কিন্তু আজ দিল্লিতে এমন এক সরকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যে সরকার উত্তর-পূর্ব এবং ত্রিপুরাকে নিয়ে সবসময় চিন্তা করে। তিনি বলেন, ‘নর্থ-ইস্ট আমার জন্য রাজনৈতিক নয়, প্রেম এবং গুরুত্বের বিষয়। তাই মানুষের জীবনের সমস্যা কমানো, রোজগার বাড়ানো এবং যোগাযোগ উন্নত করার উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বিজেপি সরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, জল জীবন মিশনের অধীনে ত্রিপুরায় ৫ লাখেরও বেশি ঘরে জল পৌঁছেছে। কোনো কার্ড-কমিশন ছাড়াই ত্রিপুরার আড়াই লাখ কৃষকদের খাতায় কৃষক সম্মান নিধি পৌঁছে যাচ্ছে। তিন লাখেরও বেশি মহিলাকে গ্যাস কানেকশন দেওয়া সহ জনজাতি সমাজের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে একলব্য মডেল স্কুল স্থাপনের কাজও বিজেপি সরকারই করছে। মোদি সরকার আসার আগে বেশিরভাগ লোকই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান সরকারের কাজগুলো শুধু কাজই নয় বলেন বরং এগুলো বাম-কংগ্রেসের বিকাশবিরোধী রাজনীতির আয়না। আগামী ৫ বছরে দেশে ৩ কোটি নতুন ঘড় বানানোর সংকল্প নিয়ে কাজ করছে বিজেপি সরকার যার দ্বারা ত্রিপুরাও লাভবান হবে। এই দশ বছরে ত্রিপুরা ও নর্থ-ইস্টের বিকাশের জন্য বিজেপি যা করেছে সেটা শুধুমাত্র ট্রেলার। ত্রিপুরাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বাকি। তিনি বলেন, গোটা দেশ জুড়ে এখন হীরা মডেলের চর্চা হয়। ত্রিপুরাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে মানিক সাহার সরকার এখন হীরা প্লাস মডেলের ওপর কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, আগে রাজনৈতিক দল ও সরকারের শুধু ভোটের সময়েই নর্থ-ইস্টের কথা মনে পড়তো। নর্থ-ইস্টের জন্য শুধু ‘লুঠ ইস্ট পলিসি’ চলতো। কিন্তু এই দশ বছরে এই ‘লুঠ ইস্ট পলিসি’কে তালা দিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এই লুঠ ইস্ট পলিসিকে বাদ দিয়ে এখন এক্ট ইস্ট পলিসির জন্য কাজ করছে এই সরকার। আজ ত্রিপুরার জন্য বিজেপি’র মানে হল বিকাশের রাজনীতি। কিন্তু এখানে কমিউনিস্টরা বিনাশের রাজনীতি চালিয়েছে। আর কংগ্রেসের তো করাপশনের রাজনীতির ট্রেক রেকর্ড রয়েছে। যতদিন সিপিএম-কংগ্রেস ছিল ততদিন ত্রিপুরাতে করাপশন ফুলেফেঁপে উঠেছিল। কমিউনিস্টরা ত্রিপুরাকে হিংসা ও ভ্রস্টাচারের আঁতুরঘড় বানিয়ে দিয়েছিল। একে অপরকে গালি দেওয়া সিপিআইএম-কংগ্রেস আজ নিজের লুটের রাজনীতি কায়েম রাখতে একজোট হয়েছে। তিনি বলেন, ভ্রস্টাচারে জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না, এটাই বিজেপি’র সংকল্প।
সর্বোপরি এই লোকসভা নির্বাচনে আগামী ১৯ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব এবং ২৬ শে এপ্রিল পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী কৃতী সিং দেব্বরমাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এছাড়াও এদিন বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা: মানিক সাহা। তিনি বলেন, এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন মোদিজীর গ্যারান্টির নির্বাচন। এই নির্বাচন রাষ্ট্র গঠনের নির্বাচন। এই নির্বাচন ২০৪৭ সালে মোদিজীর বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার নির্বাচন। তিনি আরও বলেন, মোদিজীর নেতৃত্বে এক্ট এস্ট পলিসিতে উত্তর পূর্বের ৮ টি রাজ্যেই শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। আগে বামফ্রন্টের কাছে স্বর্ণযুগের কথা শোনা যেত যার কোনোকিছুই প্রত্যক্ষ করতে পারে নি রাজ্যবাসী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদের ‘হীরা’ দিয়েছেন। পাশাপাশি এদিন প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এদিন আগামী ১৯ এপ্রিল ও ২৬ শে এপ্রিল নিজেদের মূল্যবান ভোট দিয়ে দুই আসনে বিজেপিকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান রাজ্যবাসীর প্রতি।

পাশাপাশি এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের বিজেপি মনোনীত প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আগে মহিলাদের স্বাধীনতা ছিলনা, যুবকদের রোজগার ছিল না, বয়স্কদের ভাতা ছিল না, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার ব্যবস্থা ছিল না, কৃষকদের রোজগারের ব্যবস্থা ছিল না। ২৫ বছর যাবত বাম অপশাসনের গ্যারাকলে আটকে ছিল ত্রিপুরা। ২০১৮ সালে সেই অপশাসন থেকে ত্রিপুরাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ত্রিপুরার উন্নয়নের জন্য মোদীর প্রয়োজন।

এদিন তিনি বাম কংগ্রেসকে তুলোধুনো করেন নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন ত্রিপুরাকে কাঙ্গাল বানানোর জন্য এবং ভারতকে শেষ করার জন্য কাজ করছেন মানিক সরকাররা। তিনি আরও বলেন, ২৫ বছরের শাসনে গরিবদের জন্য শুধু মায়া কান্না কেঁদেছেন কমিউনিস্টরা। কমিউনিস্ট কংগ্রেসরা শুধু জাত- পাত-ধর্মের নামে মানুষকে শোষণ করে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গরিবদের জন্য কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়াও তিনি বলেন, কমিউনিস্টদের রাজ্যবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা বুঝতে পেরেই এবার চোরাই পথে হাত চিহ্নের মাধ্যমে আশিষ সাহাকে প্রার্থী করেছে বামেরা। কিন্তু মানুষকে আর ফাকি দেওয়া সম্ভব নয়। ২০১৮ র নির্বাচনে ত্রিপুরার মানুষ বামেদের হাটু ভেঙেছে, এবার কোমর ভাঙবে। দূরবীন দিয়েও মানিকবাবুদের খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বিজেপি-আইপিএফটি এবং তিপ্রামথা।
সর্বোপরি এদিনের এই জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিজেপি-আইপিএফটি ও তিপ্রামথা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়।
