আচ্ছে দিনের আইন!!

 আচ্ছে দিনের আইন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে মোদি সরকারের শাসনে চমৎকার সব দে এ আইন কানুন দেখে (সুকুমার রায়ের একটি কবিতার কথা মনে পড়ছে।’একুশে আইন’ কবিতায় বলা হয়েছে-শিবঠাকুরের আপন দেশে / আইন কানুন সর্বনেশে / কেউ যদি যায় পিছলে পড়ে / প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে / কাজির কাছে হয় বিচার / একুশ টাকা দণ্ড তার।
দেশে চিকিৎসা খরচ হু হু করে বাড়ছে।যেহেতু সরকারী হাসপাতালে জায়গা কম, তাই বেশির ভাগ মানুষকেই ছুটে যেতে হয় বেসরকারী হাসপাতালে।অথচ বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে প্রচুর খরচ। তখন একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যবিমা বা মেডিক্লেম। অথচ কেন্দ্রের মোদি সরকার এই স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি চাপিয়েছে। স্বাস্থ্যবিমা থাকলে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বিমা করিয়ে নিলে পরিবারের ৩-৪ সদস্যের পক্ষে অসুখ-বিসুখে হাসপাতালে ভর্তি হলে, সেই হাসপাতালের একটা খরচ বিমা থেকে মিটিয়ে দেওয়া হতো।কিন্তু এই বিমা করতে গেলে তার উপর এখন জিএসটি চাপিয়ে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের পক্ষে বিমার কিস্তি এবং সেই সাথে জিএসটির আলাদা টাকা মানুষকে বহন করতে হচ্ছে।অথচ কী তাজ্জব কাণ্ড দেখুন।এই দেশে আপনি হিরের গয়না কিনতে যান, আপনাকে ৩ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে।অথচ আপনার চিকিৎসার জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে স্বাস্থ্যবিমা করতে যান, আপনাকে প্রথমে স্বাস্থ্যবিমার কিস্তি এবং সেই সাথে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। হয়তো এরই নাম ‘আচ্ছে দিন।’২০১৪ সালে দেশে বিজেপি তথা মোদি সরকার আসার আগে স্বাস্থ্যবিমার চেহারাটা কী ছিল দেখুন। ধরা যাক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও পরিবার চিকিৎসার জন্য কোন পলিসি করেছে। সেক্ষেত্রে ওই পরিবারকে মেডিক্লেম বা স্বাস্থ্যবিমার জন্য প্রিমিয়ামের শুধুমাত্র প্রায় ২৮ হাজার টাকা বছরে একবার জমা দিতে হোত। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি চাপানোর পর স্বাস্থ্যবিমার ২৮ হাজার টাকা ছাড়াও আরও প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা কর আপনাকে দিতে হবে। এবার বছর বছর স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বাড়ছে।এর সঙ্গে বাড়ছে জিএসটি। ফলে একটি পরিবারের পক্ষে বিশাল চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রথমে বিমা, তারপর জিএসটি করতে করতে রীতিমতো দফারফা অবস্থা। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে একটা নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কোনভাবেই স্রেফ চিকিৎসার বিমা করাতে গিয়ে ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা খরচ করা সম্ভব নয়।সরকার হয়তো এক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়ে সরকারী তরফে করানো কিছু স্বাস্থা আরোগ্য যোজনার বা আয়ুষ্মান কার্ডের কথা বলবেন।কিন্তু এর সুযোগ সুবিধা কতটা মেলে তা ভুক্তভোগী মাত্রই বলতে পারবেন।আর যদিও মেলে, সেক্ষেত্রে দালাল চক্র বা শাসক নেতাদের সাহায্য নিতে হয়।
আম জনতার অন্যতম জরুরি পরিষেবা হলো স্বাস্থ্যবিমা।কেন্দ্র সরকার সব মানুষকে এই সুরক্ষায় আওতায় নিয়ে আসার কথা বলছে।কিন্তু ভারতের মতো দেশে সেটা যে শুধুই কথার কথা থেকে যাকে সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।এই অবস্থায় স্বাস্থ্য ও জীবনবিমার প্রিমিয়াম থেকে জিএসটি প্রত্যাহারে দাবি / বিরোধী দলগুলো অনেকদিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন। আশা করা হচ্ছিল সোমবারের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কিছু ইতিবাচক বার্তা আসবে। কিন্তু ৫৫ তম জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তটি ঝুলেই রইলো। বরং প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে জিএসটিতে ছাড় দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে বিকল্প চিন্তাভাবনার কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে।যদিও বৈঠকে ক্যানসারের ওষুধের ওপর থেকে জিএসটি ১২ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।কিন্তু আগামী নভেম্বরে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার জিএসটির বিষয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষায় ঝুলিয়েই রাখা হোল।নীতি আয়োগের রিপোর্টে যেখানেই বলা হয়েছে, দেশে ৩০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিমার বাইরে। সেখানে সরকারের কাছে বেশি অগ্রাধিকারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে হিরের গয়না।যে জন্য হিরের গয়না জিএসটি ৩ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিমায় জিএসটি ১৮ শতাংশ।জনকল্যাণে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র চিহ্নিত করার প্রশ্নে সরকার যদি প্রথমেই ভুল দিশায় এগোতে থাকে তাহলে এর পরিণামে ভুগতে হবে দেশবাসীকেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.