আজ বুথভিত্তিক শান্তিসভা, চলছে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি!
সোম ও মঙ্গলবারজুড়ে রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩৩৩৭টি বুথে শান্তিসভা চলবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস এড়াতে এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রশাসন ২ মার্চের ভোটগণনা নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি এই সময়ে চলছে শান্তির আহ্বান। বুথভিত্তিক শান্তিসভাগুলিকে অঙ্গীকার সভার রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
নির্বাচন দপ্তর এদিন খোয়াই, বিশালগড়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারীর বুথভিত্তিক শান্তিসভা আয়োজন নিয়ে। অপরদিকে মেলাঘরের ব্যবসায়ীরা এদিন ২ তারিখ পরবর্তী নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের আশঙ্কা করে থানায় গিয়ে ডেপুটেশন দিয়ে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে এসেছেন। মেলাঘর প্রতিনিধি জানিয়েছে, নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণার পর মেলাঘর বাজারে যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় মেলাঘর থানায় ডেপুটেশন দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। নির্বাচনের প্রাক্কালে মেলাঘর বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। বাজার এলাকার স্বাভাবিকতা নষ্টে বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। ক্রেতা বিক্রেতারা এক অজানা আশঙ্কায় দিন অতিবাহিত করছেন। দূরদূরান্তের ক্রেতারা মেলাঘর বাজারে আসতে চাইছেন না। সন্ধ্যার পরই বাজার শুনশান হয়ে যাচ্ছে। মেলাঘর বাজারে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মাত্র দুদিন আগেই বিরোধী দল সিপিএমের এই মহকুমার চার কেন্দ্রের প্রার্থীসহ শতাধিক কর্মী বাজারে পদচারণা করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ মতবিনিময় করেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হলে বাজারে যাতে সুস্থিতি বজায় থাকে সেদিকে সতর্ক থাকবে দল। অন্যদিকে সম্পূর্ণ নীরব শাসকদল বিজেপি। নির্বাচনে ভোটদান পর্ব সম্পূর্ণ হয়ে যাবার দশদিন অতিক্রান্ত হলেও শাসকদলের নেতা কিংবা চার কেন্দ্রের প্রার্থীদের দেখা পাননি মেলাঘরের ব্যবসায়ীরা। বাজার এলাকায় ইতিপূর্বে যে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে সম্পর্কে শাসকদলের কোনও ভূমিকা দেখতে পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে সর্বস্তরে ভোটের ফলাফল নিয়ে তরজা চলছে। নিজেদের মতো করে মন্তব্য করছে নানাস্তরের মানুষ।ক্ষমতার পরিবর্তনে এক অনিশ্চয়তায় শাসকদলে চলছে এক অদ্ভুত নীরবতা। যা ভাবিয়ে তুলছে সর্বস্তরের মানুষকে। ক্ষমতার পরিবর্তনে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করতে পারে বলে আতঙ্কিত একটি মহল। এদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের একটা অংশও ভাবিত। কী হবে নির্বাচনি ফলাফলে সেই বিশেলষণের নিরিখে ভবিতব্য কি তা নিয়েই শনিবার মেলাঘর ব্যবসায়ী সমিতি একটি আলোচনা সভা আহ্বান করে ব্যবসায়ীদের নিয়ে। এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীরা। নির্বাচনের প্রাক্কালে মেলাঘর বাজারের সন্নিকটে আক্রান্ত হন সিপিএম প্রার্থী। পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার জের আছড়ে পড়ে মেলাঘর বাজারে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। হামলা পাল্টা হামলায় মেলাঘর বাজার এলাকার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠে। এর আগে দোকানের এক ক্রেতা সিপিএম কর্মী এই কারণে দোকানের মধ্যেই তাকে আক্রমণ করা হয়। একটি লন্ড্রি দোকান চারবার ভাঙচুর করা হয়।একটি কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় নিয়ে তার মূল্য না দিয়ে চলে আসে। শাসকদলের এক বাখাটে কর্মী। নির্বাচনের প্রাকলগ্নে শাসকদলের সোনামুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী, সোনামুণ্ডা মণ্ডল সভাপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করতে গিয়ে পরিতাপের সঙ্গেই বলেন, বাজারে অনেক ঘটনা ঘটেছে। দল যেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগামীদিনে বাজারে যাতে এ সমস্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকবে দল। প্রাক্ নির্বাচনি লগ্নে এই আশ্বাস থাকলেও নির্বাচন পর্ব শেষ হয়ে যাবার পর শাসকদলের দেখা নেই। বাজারে যাতে কোনও ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে। প্রতিটি ক্রেতা বিক্রেতা যেন বাজারে অযথা আতঙ্কের শিকার না হয়। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা যাতে রক্ষিত হয়। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে শনিবার এক পর্যালোচনা বৈঠকে বসে ব্যবসায়ী সমিতি। সিদ্ধান্ত অনুসারে এদিন সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীরা মেলাঘর থানার ভারপ্রাপ্ত কার্যকারকের সঙ্গে ডেপুটেশনে মিলিত হন। সহস্রাধিক ব্যবসায়ী সমৃদ্ধ ব্যবসায়ীদের প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি থানায় ডেপুটেশনে অংশ নেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কার্যকারকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিয়ে বাজারে নির্বাচনি ফলাফল প্রকাশের পর যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। থানার ওসি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বাজারে পুলিশি টহলের শক্তি বৃদ্ধি। কোন ঘটনার খবর পেলে দ্রুত ছুটে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।কোনও নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পরিস্থিতি বিষময় হবার আশঙ্কায় কোনও ব্যবসায়ী সমিতির আগাম থানায় ডেপুটেশন দেওয়া নজিরবিহীন। এ যাবৎকাল যতবার নির্বাচন হয়েছে, ফলাফল ঘোষিত হবার পর বাজার এলাকাসহ নানা স্থানে নানা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনও বছরই আগে কিংবা পরে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী সমিতির থানায় ডেপুটেশন দেবার নজির নেই। মেলাঘর ব্যবসায়ী সমিতির ইতিহাসেতো নয়ই। যার ফলে প্রশ্ন উঠেছে কিসের আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ী সমিতি। যে নির্বাচনি ফল প্রকাশের পর বাজারের সুস্থিতি বিনষ্ট হতে পারে এর আগাম আশঙ্কায় থানায় ডেপুটেশন দিতে বাধ্য হন। ব্যবসায়ী সমিতি। অতীতের আলোকে এবার পরিস্থিতি কি সত্যিই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে? এই আশঙ্কায় শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা? সমিতির এই ডেপুটেশন প্রদানে জোর জল্পনা সাধারণ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ্যে।
বিশালগড় থেকে সংবাদ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, সুষ্ঠভাবে ভোট গণনা সম্পন্ন করা, নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস এড়ানোর লক্ষ্যে বিশালগড় মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে মহকুমাভিত্তিক শাস্তিসভা হয়েছে রবিবার। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক বিনয়ভূষণ দাস, অতিরিক্ত জেলাশাসক ভি জে দোয়াতি,মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাহুল দাস, অতিরিক্ত মহকুমা শাসক ত্রিদীপ সরকার সহ কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর আধিকারিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশালগড় মহকুমাশাসক বিনয় ভূষণ দাস বলেন, নির্বাচন কমিশন এবার সমগ্র দেশের সামনে ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ভোটগ্রহণের আগে পর্যন্ত যেমন জিরোপোল ভায়োলেন্সের মাধ্যমে সব ধরনের অভিযোগ ন্যূনতম সময়ের মধ্যে সাড়া দিয়ে মোকাবিলা এবং সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছে, ঠিক তেমনি ভোট গণনার পর নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস যেন না হয় এর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। গণনার দিন ঠিক কী কী বিধিনিষেধ জারি থাকবে এ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন মহকুমাশাসক বিনয়ভূষণ দাস।খোয়াই প্রতিনিধির সংযোজন ঃ ভোট গণনার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হিংসাত্মক ঘটনা রোধ করতে প্রতিটি বুথে বুথে শান্তিসভার আয়োজন করছে নির্বাচন দপ্তর। শান্তিসভাগুলোতে প্রতিটি বুধের সাধারণ ভোটার, বিএলও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, সেক্টর অফিসার, প্রয়োজনে রিটার্নিং অফিসাররাও উপস্থিত থাকবেন। রবিবার সন্ধ্যায় খোয়াই মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো দেন খোয়াই মহকুমার তিন বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার। সোমবার এবং মঙ্গলবার রামচন্দ্রঘাট, খোয়াই এবং আশারামবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ১৪৭ টি বুথে এই শাস্তিসভার আয়োজন করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে রিটার্নিং অফিসার বিজয় সিনহা জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারেই এ বছর শান্তিসভার আয়োজন করা হচ্ছে।বিজয় সিনহা জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হুজ্জতির ঘটনাগুলো রোধ করতে তিনটি বিধানসভার সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই এবার গণনাকেন্দ্রের পাশে কোন ধরনের জমায়েত করা যাবে না। যার যার দলীয় কার্যালয়ে কর্মী সমর্থকরা থাকতে পারবেন। তিপ্রা মথার কোনও দলীয় কার্যালয় না থাকায় তাদের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট স্থান স্থির করে দেওয়া হবে। ওই স্থানেই তারা থাকতে পারবেন। খোয়াই অফিসটিলাস্থিত ভোট গণনা কেন্দ্রে এ বছর তিনটি বিধানসভার জন্য তিনটি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কক্ষে ভোট গণনার জন্য মোট ১২টি করে টেবিল থাকবে। মিডিয়ার জন্য থাকবে আলাদা কক্ষ। সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্থির ক্যামেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিন বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার আরও জানিয়েছেন, সোমবার সকালের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অস্থায়ী বুথ অফিস সরিয়ে না নিলে নির্বাচন দপ্তর বিকেল থেকেই অভিযান শুরু করবে।