আটলান্টিকে টাইটানিকের পাশ থেকে তোলা হল টাইটানের ধ্বংসাবশেষ
দৈনিক সংবাদ অনলাইন :- আতলান্তিকের অতল থেকে বৃহস্পতিবার তুলে আনা হল ডুবোজাহাজ টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। মার্কিন উপকূলরক্ষা বাহিনীর তরফে জানানো হয়, সমুদ্রের নিচে তল্লাশির সময়ে বেশ কিছু দেহাংশ, উদ্ধার হয়েছে। তবে তার পরিচয় জানা আপাতত সম্ভব হয়নি। টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের কাছ থেকেই দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ডুবোযান ‘টাইটান’ এর অবশিষ্টাংশ তুলেছেন উদ্ধারকারীরা। কানাডার একটি জাহাজে করে ওই ধ্বংসাবশেষগুলিকে নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন পোর্টে এনে রাখা হয়েছে।
গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিল ‘ওশানগেট এক্সপিডিশন’ সংস্থার সাবমেরিন টাইটান। তন্ন তন্ন করে আতলান্তিকের তলদেশে খুঁজেও ডুবোযানটিকে দেখতে পাননি কানাডার নৌসেনার অভিজ্ঞ ডুবুরিরা। শব্দযন্ত্র বসিয়ে সাগরের নিচে জলের তরঙ্গ পরীক্ষা করাও হয়েছিল। ক্ষীণ যান্ত্রিক শব্দ শোনা গিয়েছিল দু’দিন আগে। তাতেই আশা জেগেছিল উদ্ধারকারীদের মনে। তারা ভেবেছিলেন টাইটানকে বুঝি খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়নি। টাইটান জলে নামার চারদিনের মাথায় জলের ১২,৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছেই হদিশ মেলে টাইটানের। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ডুবোজাহাজটি টাইটানিকের থেকে মাত্র ১৬০০ ফুট দূরত্বে পড়ে ছিল।
সাত ঘন্টার মধ্যেই জলের তলদেশ থেকে ফিরে আসার কথা ছিল টাইটিনের। কিন্তু ডুব দেওয়ার পৌনে দু’ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। ‘মাদারশিপ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটানের। স্থানীয় সময় গত রবিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বর্ষামুখরিত হয় মাদারশিপের। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ খবর দেওয়া হয় আমেরিকার বার্থ ডে পা উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। খবর পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। উদ্ধার করার জন্য কোস্ট গার্ড থেকে শুরু করে হাত লাগিয়েছিল বায়ুসেনাও। কিন্তু, অনেকে কেউ টাইটানের সন্ধান পেতে সক্ষম হয়নি। দীর্ঘ তিন-চার দিন খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে মেলে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। শেষমেশ ফরাসি এক রোবটই সফর ত্রাতা ফ্রান্সের সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইফ্রেমার’ ‘ভিক্টর ৬০০০’ নামক রোবটটিকে তৈরি করেছিল। এই রোবটই খুঁজে বের করে টাইটানকে।
মার্কিন সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, টাইটানের ইলেকট্রিকাল সিস্টেমেই কোনও ত্রুটি হয়েছিল। অতলান্তিকের গভীরে ১৩,২০০ ফুট নিচে নামার সময় সমুদ্রের জলরাশির প্রবল চাপ পড়েছিল ডুবোযানের উপর। গবেষকরা | কিন্তু বলছেন, সাবমেরিন যে গভীরতায় নিচে নেমেছিল সেখানে সমুদ্রের চাপ প্রায় -৪০০ গুণ বেশি। সেই কারণেই ডুবোজাহাজের ভিতরে কোনও জায়গায় ফুটো হয়ে গিয়েছিল বা ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিটে হয়ে গিয়েছিল। সাবমেরিনের যে ইলেকট্রনিক সিস্টেম ডুবোযানটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দিক নির্দেশ করে, সেখানে সেন বড়সড় ত্রুটি হয়েছিল। আগুন ধরে গিয়েছিল ইলেকট্রিক সার্কিটে। ফলে জলে নামার কিছু সময় পরেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় টাইটানের সঙ্গে।
নিউজার্সির সমূদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে ম্যাসাচুয়েটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা। তাদের দাবি, ক্যাটাস্ট্রফিক ইমপ্লোসনের কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি হলে তা আগে থেকে ধরা যায় না। অ্যালার্মিং সিস্টেমটাই খারাপ হয়ে যায়। ফলে বিপদ ঘটার কিছু সময় আগে হত জানা যায় যে কী ঘটতে চলেছে। ততক্ষণে এতটাই দেরি হয়ে যায়, যে বিপদ কাটানোর আর সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জলের তলাতেই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল টাইটান।
মার্কিন মেডিক্যাল বিভাগের আধিকারিকরা মৃতদেহের নমুনা খতিয়ে দেখবেন। পাঁচজন অভিযাত্রীর মধ্যে ছিলেন সাবমেরিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ, ব্রিটিশ নাগরিক হামিশ হার্ডিং, ফরাসি বিশেষজ্ঞ পন হেনরি নার্গোলে। এছাড়াও পাক ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তার পুত্র সুলেমানেরও মৃত্যু হয়েছে। কানাডার মেডিক্যাল টিম ডুবোযানটিকে পরীক্ষা করছেন। এর ভেতরে মানুষের শরীরের কোনও অংশ এখনও আটকে আছে কিনা তার খোঁজ চলছে।