আদালতের নির্দেশ পালন করতে এসে হুমকির মুখে সরকারি কর্মীরা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন, অমরপুর।। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা সহ ভুমির দখল বুঝিয়ে দিতে গিয়ে রোষের মুখোমুখি হতে হলো সরকারি কর্মী ও আইনজীবীদের। ঘটনা অমরপুর নগর পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুকুমার কলোনির মন্দির টিলা এলাকায়। বৃহস্পতিবার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহকুমা ভুমি ও রাজস্ব দপ্তরের প্রতিনিধি ও উচ্চ আদালত থেকে আসা আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট ভুমির দাবিদার জনৈক আশিস সাহাকে তার জমি বুঝিয়ে দিতে এসেছিলেন। উল্লেখ্য, এলাকায় বাসিন্দা আশিস সাহার জোত জমি নগর পঞ্চায়েত ও পূর্ত দপ্তর জবর দখল করে রাস্তা নির্মান করেছে।

বেদখল হয়ে যাওয়া ভুমির দখল পাওয়ার জন্য ১৯৯৭ ইংরেজিতে আদালতের দ্বারস্থ হন। শেষে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চ আদালতে বেশ কয়েক বছর ধরে মামলার সওয়াল জবাব এবং শুনানির পর ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত আশিস সাহার অনুকূলে রায় প্রদান করে। মহকুমা প্রশাসনকে ভূমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার নতুবা ভুমির মূল্য আশিস সাহাকে প্রদানের নির্দেশ দেন। মামলা কারী আশিস সাহা ভুমির দখল কিংবা মূল্য কোনটাই না পেয়ে ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফের আশিস সাহাকে ভুমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মহকুমা প্রশাসনকে পুনর্নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বৃহস্পতিবার সকলে অমরপুরের মহকুমা ম্যাজিসট্রেট,রেভেনিউ ইন্সপেক্টর, তহশীলদার সহ মহকুমা ভুমি ও রাজস্ব দপ্তরের প্রতিনিধিদল পুলিশ নিয়ে সুকুমার কলোনির মন্দীর টিলায় পৌছায়।

সার্ভেয়ার,উচ্চ আদালতের দুই আইনজীবীর উপস্থিতিতে মামলা কারী আশিস সাহাকে ভুমির দখল দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।আশিস সাহা ড্রজার ভারা করে শ্রমিক নিয়ে আগে থেকেই তৈরী ছিলেন। আবার এলাকার বাসিন্দারাও খবর পেয়ে মন্দীর টিলায় জরো হতে থাকেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা আসিস সাহাকে দখল দিতে গেলে,এলাকাবাসী মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধিদের বাধা দেয়। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, প্রয়াত স্বর্ণপ্রিয়া বৈষ্ণব(যার দখলিয় ভুমির অংশই পরবর্তী সময়ে মামলা কারী আশিস সাহা ক্রয় করেন) সহ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীদের অনুমতি ক্রমেই বিভিন্ন জনের জোত ভুমি এবং সরকারী খাস ভূমির উপরে জোট সরকারের সময়ের ফটিক সাগরের পশ্চিম পার থেকে মন্দীর টিলা, সুকুমার কলোনি ভায়া অমরপুর মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মান হয়।

নির্মান হয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। পাকা রাস্তা ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মানে এলাকাবাসীদের মধ্যে প্রধান উদ্যোক্তান হিসাবে অন্যতম ছিলেন, তৎকালীন ব্লক মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী প্রয়াত হেমনলিনী সেন। তাছাড়া পাকা রাস্তা নির্মানের আগে থেকেই একই স্হানে এলাকাবাসীদের যাতায়াতের কাচা রাস্তাও যথারীতি ছিল।  এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পাকা রাস্তা নির্মানের অনেক পরে প্রয়াত স্বর্ণপ্রিয়া বৈষ্ণবের কাছ থেকে আশিস সাহা তিন গন্ডা ভুমি ক্রয় করেন। ওই ভুমির পাশে ছিল প্রচুর সরকারি খাস ভূমি এবং রাজন্য আমলের ভাঙ্গা মন্দির। ওই ভাঙ্গা মন্দিরের নামানুসারেই ওই এলাকার নাম হয় মন্দির টিলা। খাস ভূমিরই কিছু অংশে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মান হয়। আর রাজন্য আমলের ভাঙ্গা মন্দিরের ধংসাবশেষ আজও ওই একই স্হানে বিদ্যমান। বাকি খাস ভুমি জোত ভূমিতে পরিনত হয়ে গেছে ১৯৯১ সালে ভুমি জরিপের পর। এলাকাবাসীরা জানান, মামলা কারী আশিস সাহা একসময় অমরপুর মহকুমা শাসক অফিসের খাদ্য দপ্তরের করনিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেই সুত্রে ১৯৯১ সালে ভুমি জরিপের কাজে নিয়োজিত জরিপ কর্মচারীদের সাথে আশিস সাহার ভাল যোগাযোগ ছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মিঞা ভাই নামে পরিচিত জনৈক পদস্থ জরিপ কর্মীর যোগসজাসে আশিস সাহা রাস্তার জায়গা সহ সমস্ত খাস ভূমি নিজের নামে জোত করে নেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আর উচ্চ আদালতের আইনি মারপ্যাচে ভুমির মালিকানা পেয়ে জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তার দখল নিতে উঠে পরে লেগেছেন বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবী ১৯৯১ সালের জরিপের পূর্বে রেকর্ড বের করে তদন্ত করলে ভুমি জালিয়াতির বিশাল ঘোটালা প্রকাশ্যে আসবে। জরিপের সময় প্রচুর ভুমি জালিয়াতি হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
তবে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার আশিস সাহার ভুমির দখল দিতে গিয়ে মন্দির টিলায় সরকারি কর্মীদের অন্য এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। আশিস সাহার পক্ষে কথা বলার কিংবা তার বক্তব্য সাপোর্ট করার, সুকুমার কলোনির মন্দির টিলায় এমন একটি পরিবার কিংবা একজন এলাকাবাসীকেও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা খুঁজে পান নি। তারপরেও এলাকাবাসীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক উচ্চ আদালতের আইনজীবী এবং সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে পিলার বসিয়ে ভুমির দখল আশিস সাহাকে বুঝিয়ে দেন।
কিন্তু আশিস সাহার বক্তব্য, তিনি ভুমির দখল পাননি এবং মহকুমা প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তার বেদখল হয়ে যাওয়া ভুমির দখল প্রদানে যথাযথ সহযোগিতা করেনি। আসিস সাহা অমরপুর পুর্ত দপ্তরের এবং নগর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ করেন। এব্যাপারে মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সাফ বক্তব্য, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আশিস সাহাকে তার ভুমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

23 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

23 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago