আন্টার্কটিকার বরফের নিচে ১৪০ লক্ষ বছরের প্রাচীন ভূখণ্ড আবিষ্কার।
আয়তনে বেলজিয়াম দেশটির সমান, কিংবা আমেরিকার মেরিল্যান্ড প্রদেশের।তেমনই বিশাল ভূখণ্ড আবিষ্কৃত হয়েছে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের নিচে।বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, বিশাল আয়তনের এই ভূখণ্ডের বয়স ১৪০ লক্ষ বছরেরও বেশি। স্যাটেলাইট ডেটা, আইস পেনিট্রেটিং রাডার এবং রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সফলভাবে ৩২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের (১২ হাজার ৩০০ বর্গ মাইলের সমতুল্য) বিস্তৃত এই ভূমি জরিপ করেছেন এবং সেই মতো একটি মানচিত্রও তৈরি করে ফেলেছেন।
বরফে ঢাকা আন্টার্কটিকাই এতদিন ছিল পৃথিবীর নিচের দিকের শেষ ভাগ।এই আবিষ্কারের সূত্রে জানা গেল, আন্টার্কটিকার গভীরেও রয়েছে বিশাল বেলজিয়াম দেশটির সমান আয়তনের একটি ভূখণ্ড। অতি সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনে বিজ্ঞানীদের এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।সেই গবেষণার নির্যাস প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আবিষ্কৃত ভূখণ্ডটির সঙ্গে গ্রেট ব্রিটেনের নর্থ ওয়েলসের পাহাড়িভূখণ্ড ও উপত্যকাগুলির অনেকাংশে মিল রয়েছে।ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষণা লেখক (চিফ অথর) স্টুয়ার্ট জেমিসন বলেছেন, এই ভূখণ্ডের ইতিহাস হিমায়িত বরফের নিচে আগে দেখতে কেমন ছিল ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা বোঝার জন্য গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সিসিএনএনএ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জেমিসন বলেন, “পূর্ব আন্টার্কটিকার বরফের নিচের ভূমিটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠের তুলনায় কম পরিচিত।
‘তিনি আরও বলেন, ‘এই ভূখণ্ড আন্টার্কটিকার বরফের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ার উপায়ও নিয়ন্ত্রণ করে।”বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩৪০ লক্ষ বছর আগে আকার ধারণ করা শুরু করেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটির আয়তন বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে এবং ক্রমে একটি ভূখণ্ডে রূপ নেয়।গবেষণা অনুসারে, ১৪০ লক্ষ বছর আগে যখন ভূখণ্ডগুটির উদ্ভব হয়েছিল তখন পৃথিবীর জলবায়ু আজকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল।ডঃ জেমিসনের মতে,এই প্রাচীন ভূখণ্ডটির টিকে থাকা দেখে বোঝা যায়, জলবায়ু উষ্ণায়ন সত্ত্বেও মাঝে মাঝে বরফের পুরু চাদরের গোড়ায় তাপমাত্রা ব্যতিক্রমীভাবে ঠান্ডা ও স্থিতিশীল ছিল। আন্টার্কটিকার নিচের এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে ১৪০ লক্ষ বছর আগে গাছপালা এবং বন্যপ্রাণীদের উপস্থিতি ছিল কি না,এবার সেই গবেষণায় হাত দেবেন জেমিসনের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী।তবে প্রবাহিত জলের উপস্থিতির মাধ্যমে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, সেখানে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ছিল, যা সময়ের সঙ্গে মরে যায়।