আবারো কি ফিরতে চলেছে ডাকবাক্সো?

 আবারো কি ফিরতে চলেছে ডাকবাক্সো?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।। মানিক দেবনাথ।। আবারো কি ফিরে আসছে, ডাকঘরের সেই লাল রং করা ডাকবাক্সো? হ্যাঁ, এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে আমবাসা ডাকঘরে জমাকৃত লাল রং এর ডাকবাক্স গুলি দেখে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে লাল রং করা গোলাকৃতি ডাকবাক্স মানেই নতুন কিছু। কারণ, বর্তমান প্রজন্মের হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল,ঘরে থাকা ট্যাব,ডেক্সটপ বা ল্যাপটপের মাধ্যমে আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ আদান-প্রদান করে নিচ্ছে। তাহলে কেন এই ডাক বাক্সের আগমন? আসলে দেশ এবং আমাদের রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও তেমন ভাবে পৌঁছেনি নেটদুনিয়া। তার উপর ডাকঘরের মাধ্যমে যে সকল বিষয়াদি এখনো অন্যত্র পাঠানো সম্ভব, তা সম্ভব হচ্ছে না নেট দুনিয়ার মাধ্যমে। ব্যাংক একাউন্ট থেকে গুগোল পে,মানি ট্রান্সফার করাটা সহজ হলেও এমন অনেক কাজ এখনো ডাকঘরের মাধ্যমে করতে হয়। যদিও ডাকঘরের মতো কাজ করছে নানা নামের সংস্থা। যাদেরকে আমরা ক্যুরিয়ার বলেই জানি। তবে ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠানো কোন জিনিসের নিশ্চয়তা কিছুটা হলেও অন্যের থেকে বেশী রয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডাকঘরের মাধ্যমে নানা কোম্পানির দ্রব্যাদি প্রতিদিন গ্রাহকদের হাতে চলে আসে। প্রায় প্রতিদিন শত শত প্যাকেট ডাকঘরের মাধ্যমে আদান-প্রদান হচ্ছে রাজ্যে এবং বহিঃরাজ্যে। যাইহোক,আশি, নব্বইয়ের দশকেও শহর থেকে গ্রাম বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেতো লাল রং এর ঝুলন্ত লম্বাকৃতি ড্রাম। যার মধ্যে গ্রাম শহরের মানুষ তাদের প্রিয়জনদের নিকট ভালো-মন্দের খোঁজ-খবরে চিঠিপত্র পাঠাতেন। প্রায় প্রতিদিন ডাকঘরের কর্মী চাবি দিয়ে লাল রং এর ড্রামের মুখটি খুলে তার ভেতর থেকে লোকের পাঠানো চিঠি পত্র গুলি সঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে নিয়ে যেতো। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অমর সৃষ্টি “রাণার ” কবিতার সেই রাণার বা ডাকহরকরারা আজ শুধু বেঁচে আছে স্মৃতির মনিকোঠায়,বইয়ের পাতায়।
সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে লাল রং এর ড্রামগুলি উঠে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠে আধুনিক সমাজ। প্রত্যেকের হাতে হাতে আসতে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। ঘরে ঘরে আসতে শুরু করে কম্পিউটার। যোগাযোগ ব্যবস্হায় আসে আমুল পরিবর্তন। এক কথায় প্রযুক্তির বিপ্লব। বন্ধ হয়প যায় চিঠি পত্রের আদান-প্রদান। তবে ডাকঘর তো ডাকঘরই। তার কাজ যে অনেক। চিঠিপত্র আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেলেও,এখনও সরকারের নানা প্রয়োজনীয় পত্রাদি ডাকঘরের মাধ্যমেই আদান-প্রদান হয়ে থাকে। তবে গ্রামাঞ্চলের জন্যই যে এই লাল রং এর ড্রামগুলি আনা হয়েছে তা পরিষ্কার। যাদের হাতে নেই মোবাইল বা ঘরে নেই কম্পিউটার। তাদের জন্যই তো প্রয়োজন সেইগুলি। হয়তো আমবাসা ডাকঘরের প্রত্যন্তের শাখা গুলির জন্যই আনা হয়েছে এগুলি। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে সত্যিই নুতন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেই ডাক হরকরা বা চিঠিপত্র সহ টাকার ঝোলা নিয়ে এক হাতে লন্ঠন অন্য হাতে বর্ষা বিষয়গুলি আশ্চর্যের। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতার রানার এখন নেই। যখন ছিল, সেই ছবি দেখেই তো কবি লিখেছিলেন,”রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে। রানার চলেছে,রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে রানার— কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার। হাতে লন্ঠন করে ঠন্ ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো, মাভৈঃ রানার এখনো রাতের কালো…….. “। বর্তমান আধুনিক প্রজন্মের কাছে কবির সেই রানার এখন শুধুমাত্র বইতে সীমাবদ্ধ। তবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানার এখনো আছে। যেখানে আজও পৌঁছেনি প্রযুক্তি, নেই মোবাইল, কম্পিউটার গাড়ি চলাচলের রাস্তা। দিগন্ত থেকে দিগন্তে আছে শুধু ধুঁ-ধুঁ পথ। যেখানে এখনো পৌঁছেনি ঝাঁ-চক্ চকে আলোর রোশনাই। সেখানে রানার -রা আজও জীবিত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.