আবাহন না বিসর্জন!

 আবাহন না বিসর্জন!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নজিরবিহীন এবং সীমাহীন চাকরি দুর্নীতি নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। বিশেষ করে বঙ্গের হেভিওয়েট প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী ও তার মহিলা সঙ্গী অর্পিতাকে ইডি গ্রেপ্তার করার পর থেকে একের পর এক আর্থিক দুর্নীতি থেকে শুরু করে বেআইনি নিয়োগের যে সব তথ্য প্রকাশ্যে আসছে , তাতে বঙ্গবাসীর চোখ কপালে উঠেছে। এক কথায় বিস্ফোরক সব তথ্য । এমন নিয়োগ দুর্নীতি সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে এর আগে কখনও ঘটেনি । চাকরি দুর্নীতি নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই । সিবিআই তদন্ত যত এগোচ্ছে , ততই বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে আসছে । যা নিয়ে শুধু বঙ্গ রাজনীতিই নয় , গোটা দেশেই এখন খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের এই নজিরবিহীন দুর্নীতি ।

সবথেকে বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে , কলকাতা হাইকোর্ট এই নজিরবিহীন দুর্নীতি ও সংঘটিত অপরাধ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক কঠোর নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে । তাতে বঙ্গ রাজনীতি যেমন উত্তাল হচ্ছে , অপরদিকে সরকারের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধির পাশাপাশি আস্থা ও বিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে । পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে , সততার প্রতীক হিসাবে দাবি করা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী জোর দিয়ে পর্যন্ত কিছু বলতে পারছেন না । শুধু সীমাহীন চাপ ও সমালোচনার মুখে মাঝে মাঝে আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো সাফাই পেশ করে চলেছেন । এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে , তাতে এককভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনও সুযোগ নেই । একসাথে অনেকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত করেছে ।

আরও স্পষ্ট করে বললে ‘ অর্গানাইজ ক্রাইম ’ বা ‘ অর্গানাইজ করাপশন ‘ ।স্কুলে স্কুলে বেআইনি নিয়োগ মামলায় বুধবার আরও বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই । এদিন , কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানিকালে সিবিতাই একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীর বেঞ্চে । রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে , পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে মোট আট হাজারের বেশি প্রার্থী অবৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে। আট হাজারের বেশি এই কারণে বলা হয়েছে যে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে । শুধু তাই নয় , স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার ওএমআর শিট পর্যন্ত কারচুপি করা হয়েছে । নম্বর কারচুপি করা হয়েছে । যারা কিছুই লিখেনি , তাদের কারচুপি করে অর্থের বিনিময়ে চাকরি প্রদান করা হয়েছে । এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন অবৈধ চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরি করতে ।

একই সাথে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন , যারা অবৈধভাবে চাকরি নিয়েছেন তারা যেন স্বেচ্ছায় আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন । নতুবা তাদের বিরুদ্ধে আদালত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে , যাতে দেশে কোথাও এরা আর চাকরি না পায় । আদালতের এই নির্দেশ আসতেই তোলপাড় শুরু হয় গোটা বঙ্গে ।তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে , বঙ্গের চাকরি দুর্নীতির সাথে ত্রিপুরার ১০,৩২৩ ইস্যুর মধ্যে অনেকে মিল খুঁজে বেড়াচ্ছেন । তবে বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে । ত্রিপুরায় ‘১০ , ৩২৩ ’ হয়েছে পূর্বতন বাম সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাব এবং আইন না মেনে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার কারণে ।

যোগ্যদের বঞ্চিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নামে স্বজনপোষণের কারণে । তবে অর্থের বিনিময়ে চাকরি , এমন অভিযোগ আজ পর্যন্ত কেউ তোলেনি । ২০১৮ বামেদের ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পিছনে এটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয় । সে যাই হোক , গতকাল বুধবার বঙ্গে চাকরি দুর্নীতি নিয়ে যখন কলকাতা হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশ এলো , তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে দেখা গেলো দুর্গাপুজোর প্যাণ্ডেলে ঢাক বাজাচ্ছেন । এই দৃশ্য দেখে বিরোধীরাও হামলে পড়েছে । বিরোধীদের বক্তব্য , মুখ্যমন্ত্রী ঢাক বাজাচ্ছেন , আর আদালত বলছে অবৈধভাবে স্কুলে চাকরি পাওয়াদের স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিতে ! ফলে এটা আবাহন না বিসর্জনের বাজনা !

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.