আমিত্বের আস্ফালন!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নবরূপে কি ফিরে আসছে ফ্যাসিবাদ? তা না হলে জনতার ভোটে নির্বাচিত নির্বাচিত হয়ে আসার মাত্র একশো দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার নাগরিক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন কেন? তারা স্লোগান দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেই স্লোগানের নির্যাস, স্বৈরাচারী ট্রাম্প দূরে হঠো। স্লোগান উঠেছে, আমেরিকায় ‘কোনও রাজা নেই।’ অর্থাৎ, তানাশাহি নেহি চলেগা!
গত ফেব্রুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকদের দফায় দফায় বিক্ষোভ আদতে ট্রাম্পের ঘোষিত ‘বাহুবল-নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।শুধু বাণিজ্যযুদ্ধের দামামা বাজানোই নয়, ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের এক ভয়াবহ ছবি তুলে ধরেছে ট্রাম্পের প্রশাসন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদের এক ভয়াল ছায়া নেমে আসছে সে দেশে। অথচ এই সাধারণ মানুষরাই মাস ছয়েক আগে ট্রাম্পকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করছিল যে, একজন শক্তিশালী নেতা তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সাধারণ জনতা অর্থনৈতিক সমস্যা, অভিবাসী সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা কার্যত জলাঞ্জলি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কায়েম করতে চাইছেন আধিপত্যবাদ ও একনায়কতন্ত্রবাদ।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের সঙ্গে জোট বেঁধে এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বপ্রাচীন গণতন্ত্রের দেশটিতে যা চলছে, প্রকৃত প্রস্তাবে তা পুঁজিবাদের রুদ্ররূপ। পুঁজিপতিরাই সব নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। এমনিতেই বর্তমান বিশ্বের মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতির হাতে অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে আমেরিকা ‘আমেরিকা’ হয়ে উঠেছে মূলত তার উদারবাদী ভাবধারায়। দরিদ্র বিশ্বের উন্নতিকল্পে তার মুক্তকচ্ছ দান ক্রমে তাকে মহান করে তোলে। এর পাশাপাশি উদার গণতন্ত্র, যা তাকে ভারত সহ বহু দেশের কাছে এক স্বপ্নের দেশে পর্যবষিত করে। আমেরিকান সংবিধান অন্যতম কঠিন সংবিধান, যাকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না।
কিন্তু সেই স্বপ্নের দেশ যদি মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থের কারণে অন্ধকারের যুগে প্রবেশ করে, তা হলে শুধু আমেরিকাই নয়, গোটা পৃথিবীর কাছেই উদ্বেগ। হিটলার, মুসোলিনি, স্তালিন, পল পট যে ধরনের নৃশংস ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন, আজকের সভ্যতায় হয়তো সেটি সম্ভব নয়।বিরোধী শক্তি বা জাতিকে হিটলার রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গুলী করে নিকেশ করেছিলেন। আজ দিন বদলেছে, বদলেছে কৌশল। গ্যাস চেম্বারে নিক্ষেপ করে সরাসরি গণহত্যার ঘটনা হয়তো এ যুগে ঘটানো সম্ভব নয়, কিন্তু তার পরিবর্তে পরোক্ষভাবে মানুষকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হবে। কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটবে জলবায়ু বিপর্যয়ে, ভয়ঙ্কর রোগে আর দুর্ভিক্ষে। দ্বিতীয় দফায় মসনদে বসেই ট্রাম্পের চরিত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে আমিত্বের আস্ফালন আর দখলদারির স্পৃহা। বস্তুত, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রনায়কদের এটাই স্বরূপ। তারা নিজেদের প্রয়োজনে ধর্ম বা বিজ্ঞানকে চালিত করার চেষ্টা করেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে মিথ্যা ধর্মীয় পোশাক কিংবা বিজ্ঞানের নামাবলি ধারণে কুণ্ঠিত হন না। আর ক্ষমতাসীন হলেই বহুরূপীর মতো রং পাল্টান। হয়ে উঠতে চান নতুন ইতিহাসের সৃষ্টিকর্তা। যুক্তি নয়, শিক্ষা নয়, প্রশ্ন নয়, তারা চান শুধুই আনুগত্য। সকলকে নতজানু হতে বাধ্য করিয়ে নিজের কর্মকাণ্ডে বোঝাতে চান তিনিই ভগবান, তিনিই সর্বেসর্বা। এমন স্বৈরাচারী শাসকের কোপে পড়ে যান কবি-সাহিত্যিক, নাট্যকার, শিল্পী, সমাজ সংস্কারক, বুদ্ধিজীবী ও বিরোধী রাজনীতিবিদরা।

আমিত্বের এ-হেন আস্ফালন দেখে মনে হচ্ছে, নিরীহি অভিবাসীদের উপর নিষ্পেষণ, অত্যাচার, অথনৈতিক শোষণ, জলবায়ুর কৃত্রিম বিপর্যয় ঘটিয়ে রোগে-দুর্ভিক্ষে দেশের পর দেশ সমূলে উজাড় করতে এরা বদ্ধপরিকর। তারই নমুনা রেখে চলেছেন ট্রাম্প থেকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিবেশী বাংলাদেশের সরকারও। আসলে এরা চান প্রশ্নহীন আনুগত্য।
মৌলবাদীদের মতোই ট্রাম্পের সমর্থক উগ্রপন্থী ‘হোয়াইট খ্রিস্টান ন্যাশনালিস্ট’-রা বিজ্ঞান বা কলা, কোনওটতেই বিশ্বাস করেন না। হীরক রাজাও করতেন না। হীরক রাজ্যের মূল শত্রু ছিল তারা, যারা ‘যত বেশি পড়ে, ততবেশি জানে, তত কম মানে।’ ফ্যাসিবাদী শাসকরা সর্বপ্রথম শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চায়, কারণ শিক্ষা থাকলেই মানুষ প্রশ্ন করার সাহস পাবে। আশঙ্কাটা এখানই। যুক্তির দিন, শিক্ষার দিন, তর্কের দিন,প্রশ্নের দিন কি তা হলে শেষের পথে?এখন কি কেবল প্রশ্নহীন আনুগত্যের দিন! আমেরিকাতেও, বাংলাদেশেও,ভারতেও।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

তৃণমূলে যোগদান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে বড়সড় ধাক্কা। তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী…

3 hours ago

বর্ষায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ব্যাপক প্রস্তুতি,পরিষেবা সচল রাখতে কর্মীদের বাতিল,বৈঠক বিদ্যুৎমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ত্রিপুরায় বর্ষা মানেই বিপযয়ের আশঙ্কা। টানা বৃষ্টিপাত প্রবল ঝড় ও দমকা প্রায়শই…

6 hours ago

পুলওয়ামা এনকাউন্টার!!

পহেলগাঁওয়ে হামলার পর থেকেই জঙ্গলে জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ।তার জেরেই প্রতিদিনই চলছে এনকাউন্টার…

7 hours ago

রাজ্যে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ নাশকতায়, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা কঠোর বার্তা বিদ্যুৎমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবায় ধারাবাহিক বিঘ্ন ঘটায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ঘনঘন…

1 day ago

এক পক্ষ ও তৃতীয় পক্ষ!!

পাকিস্তানের সহিত যুদ্ধ বিরতি লইয়া ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমে এই সময়ে তোলপাড় চলিতেছে।যদিও একাংশ সংবাদ মাধ্যম…

1 day ago

ট্রমা, রেডিওলজি সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম দুর্ভোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবিতে রোগীর যন্ত্রণার শেষ নেই।হাসপাতালে বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়েও রোগীকে প্রচণ্ড…

1 day ago