আমি আজ পাঁচ বছরের । এখন আমি অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি । কিন্তু আজও কিছু মানুষ আমায় দেখলে দূর দূর করে , মারতে আসে । তবে গত বছর মা যেদিন আমায় রাস্তা থেকে ঘরে নিয়ে আসে সেদিন থেকে আমার ওপর মানুষের অত্যাচারটা অনেক কমে গেছে । তবে মাকে আর দিদিকেও এর জন্য কম ফাইট করতে হয়নি । আমি তখন খুব ছোট , বোধহয় সবে আমার বয়স দুই মাস । মা আর আমি রাস্তার একধারে মনুদার চায়ের দোকানের পাশে থাকতাম । মনুদার দোকানে ভোর হলেই পাড়ার সমস্ত লেবাররা আসত চা খেতে । ওরা মাঝে মাঝে দয়া করে দু – একটা কেক এটা – ওটা আমাদের খেতে দিত । আমি ছোট্ট বলে ওরা আমার সঙ্গে খেলাও করত । বেশ চলছিল আমাদের মা – ছেলের । একদিন মাঝ রাতে হঠাৎ কী হল মা রক্তবমি শুরু করল । আমি তো তখনও অবুঝ তাই কিছু বুঝতে পারছিলাম না শুধু অবাক চোখে মাকে দেখছিলাম । ভোর হতেই লেবার কাকুরা এল চা খেতে মাকে কেক দিল মা খেল না আমি খেয়ে নিলাম । কিছুক্ষণ পর মা ওদের সামনেই আমায় ছেড়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেল । আমি বুঝতে পারলাম না । আমার সামনেই একটা বড় গাড়ি এসে মা – কে নিয়ে গেল । আমি কত কাঁদলাম কিন্তু ওরা মাকে ফিরিয়ে দিল না । দয়া পরবশ হয়ে একজন লেবার কাকু আমায় কোলে করে ওদের আস্তানায় নিয়ে এল । আস্তানা বললাম কারণ ওরা সবাই বিহার থেকে আগত রোজগারের উদ্দেশ্যে । ওদের সঙ্গে ওদের কোনও পরিবার নেই । পরিবার সব দেশের বাড়িতে থাকে । তাই খরচ বাঁচাতে ওরা ৪/৫ জন একসঙ্গে গ্রুপ হয়ে এক – এক দোকানে থাকে । আমিও এমনই একটি গ্রুপের সঙ্গে থাকতে শুরু করলাম । ওরা যখন কাজ করত দিনের বেলায় আমি তখন আমাদের আস্তানার কাছাকাছি রাস্তায় রাখা বড় বড় ট্রাকের তলায় বসে ওদের কাজকর্মের ওপর নজরদারি করতাম , কখনও কখনও ঘুমিয়েও পড়তাম নজরদারি করতে করতে । ওদের এঁটোকাটা ও কখনও ভালবেসে দেওয়া এটা – সেটা খেয়ে বেশ চলছিল আমার , কখনও ভরপেট কখনও আধপেটা হয়ে ।। এভাবে দীর্ঘ তিন বছর কেটে গেল । আমায় যে লেবার কাকুটা নিয়ে এসেছিল সেও হঠাৎ মারা গেল গতবছর । এখন আমি অন্য লেবার কাকুদের সঙ্গে থাকি । আমি এখন সব বুঝতে শিখেছি । একটু – আধটু স্বধর্মীদের মতো কর্ম পটুও হয়ে উঠেছি । কিন্তু মায়ের গন্ধটা আজও আমায় তাড়া করে বেরায় । মাকে তাই এখনও আমি খুঁজে বেরাই , কিন্তু মাকে কিছুতেই খুঁজে পাই না । শুধু গন্ধটা নাকে লেগে আছে । হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে আমি আড়মোড়া ভাঙছি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখি একটি লাল জামা পরা দিদি আমার মতো যারা গৃহহীন তাদের বিস্কুট খেতে দিচ্ছে । আমাকে দেখে দিদিটা আমার দিকেও এগিয়ে এল । মমতা ভরা হাসি হেসে আমাকেও অনেকগুলো বিস্কুট দিল । সকাল সকাল বেশ ভালই পেটপুজো হল । আমি তো বেশ খুশি । এভাবে ৪/৫ দিন যাওয়ার পর একদিন দিদির পিছন পিছন তার বাড়ির দরজা অবধি গিয়ে বাড়িটা চিনে এলাম । দিদির বাড়ি আমাদের আস্তানার ঠিক দুটো দোকান পরেই । ওখানেও আমার চেনা অনেকগুলো লেবার কাকু থাকে । ধীরে ধীরে সকালে উঠেই দিদির বাড়ির গেইটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করলাম বিস্কুটের লোভে । হঠাৎ একদিন সকালে দিদির সঙ্গে একজন মাঝ বয়সি মহিলা নেমে এল । কাছাকাছি আসতেই সেই মা – মা গন্ধটা যেন চারপাশে ছড়িয়ে পরল । আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । উনি আমায়একটা প্লেটে বিস্কুট ভেঙে দিলেন , খেতে বললেন । আমি তাকিয়েই রইলাম । এবার উনি ধীরে ধীরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে খেতে অনুরোধ করলেন । আমি খেলাম । পরের দিন আবার উনি এলেন বিস্কুট আর জল নিয়ে দিদির সঙ্গে । আজ আর আমি থাকতে পারলাম না ঝাঁপিয়ে পড়ে ওনাকে রাস্তায় বসিয়ে ওনার কোলে উঠে বসে মাকে আদর করতে লাগলাম । যখন সম্বিৎ ফিরল দেখলাম আশেপাশের সবাই মায়ের আর আমার লীলা দেখছে ভীত চোখে । মা কিন্তু আমায় হাসি মুখে আদর করছিল । সেদিন থেকে মা সন্ধেবেলায়ও রোজ আমায় ভাত দিত । এভাবে এক মাস চলে গেল হঠাৎ দু’দিন ধরে মা নিচে আসছে না । তৃতীয় দিন আমিই সাহস করে দিদির পেছন পেছন দিদির বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলাম । দেখলাম মা সুটকেসে জামা – কাপড় ভরছে কাল নাকি কোথায় বেড়াতে যাবে । আমাকে দেখেই মা কত আদর করল । দুঃখী মনে আবার ফিরে এলাম আস্তানায় । পরদিন মা চলে গেল কলকাতা দাদার কাছে । কিন্তু আমি রোজ একবার বাড়ির সামনে যেতাম দেখতাম আমার জন্য বিস্কুট রাখা আছে । আসলে মা আর দিদি দোকানের কাকুদের কাছে বিস্কুট রেখে বলে গেছে রোজ আমায় দিতে । সাতদিন হয়ে গেল মা এখনও আসছে না , মনটা খুব খারাপ লাগছে । এসব ভাবতে ভাবতে একটি ট্রাকের তলায় বসে ঝিমুচ্ছি ঠিক তখনি জ্ঞান হারালাম । দু’দিন বাদে জ্ঞান ফিরতে দেখি আমি দিদিদের বাড়ির দোতলার সিঁড়িতে শুয়ে । পাশে খাবার রাখা । ভাবলাম মা কি এসেছে বা দিদি । কিন্তু কাউকে দেখলাম না । সেদিন থেকে আমি ওখানে পড়ে । ওঠার ক্ষমতা ছিল না । রোজ কতগুলো ছেলে ডাক্তার নিয়ে আসত । লেবার কাকুরা মিলে ধরে আমায় ইনজেকশন লাগাত । পরে জানতে পারলাম ওরা আসলে দিদির বন্ধু । আমার অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে দিদিই সব ব্যবস্থা করেছে আর সমস্ত খরচ চুকিয়েছে বাবা । কিন্তু মা কোথায় আমার তো মায়ের কোলে মাথা রেখে শুতে ইচ্ছে করছে । মা আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে । মনে মনে অভিমান হল। দশ দিন হয়ে গেল । আমি একটি পা চিরতরে হারিয়ে তিন পায়ে কষ্টে খুঁড়িয়ে হাঁটি । আজ শুনলাম মা আসবে । আমি খুব খুশি । মা বাড়িতে ঢুকতেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মায়ের কোলে বসলাম । মা আমায় জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল , দিদি আর বাবাও খুব আদর করল । ধীরে ধীরে আমি সুস্থ হলাম তবে পেছনের বাঁ পা – টা আর ঠিক হল না । এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমি একটি রাস্তার সারমেয় যাদের নিয়ে কারোর মাথা ব্যথা নেই কিন্তু আমার মা , বাবা , দিদি , দাদার মতোও অনেকে আছেন যারা আমাদের কষ্টে কষ্ট পায় । মা এসে আমায় আর কোথাও যেতে দেয়নি , আমি এখন এই পরিবারের সর্বেসর্বা । যদিও কথাটা মা বলে । আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এবাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না । মা , বাবারা বাইরে গেলে বাড়ির সব দায়িত্ব এখন আমার । এই তো সেদিন একটা ব্যাঙ্কের কাকু আমায় না বলে ঢুকতে যাচ্ছিল , এমন তাড়া করেছি যে দৌড়ে যেতে গিয়ে পা – টাই মচকে ফেলল । হা – কী মজা ! সব শেষে একটা কথা বলব , মা বলে পশুপাখিরা সব বুঝতে পারে । ভালবেসে কাছে ডেকে নাও দেখবে ওরা দ্বিগুণ ভালবাসা ফিরিয়ে দেবে । তোমরাও আমার মায়ের কথাটা মেনে একবার আমাদের ভালবেসে কাছে ডেকে দেখো , কথা দিলাম । ঠকবে না । তোমাদের উদ্দেশ্যে একটা গান গুন গুন করতে ইচ্ছে করল । ‘ খোলো খোলো দ্বার , রাখিও না আর , বাহিরে আমি দাঁড়ায়ে …।’ —-স্বরুপা বসাক
অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…
অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…
নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…