আয়না দিয়ে সূর্যের আলো পায় ইটালির ভিগানেলা গ্রাম!!

 আয়না দিয়ে সূর্যের আলো পায় ইটালির ভিগানেলা গ্রাম!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আক্ষরিক অর্থেই আজব এক গ্রাম।যে গ্রামে প্রাকৃতিক ভাবে সূর্যালোকও পৌঁছয় না।গোটা একটি গ্রাম সূর্যের আলো পায় আয়নার মাধ্যমে।
ইটালি ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তের উপত্যকায় অবস্থিত ছোট এই গ্রামটির নাম ভিগানেলা।পাহাড়-পর্বতে ঘেরা গ্রামটি অদ্ভুত এক সমস্যায় ভুগছিল দীর্ঘদিন। বছরের পর বছর ধরে এই গ্রাম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী (শীতকাল) চার মাস অন্ধকারে ডুবে থাকে। সেখানে পৌঁছয় না সূর্যের আলো।
সূর্যের আলোর অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় বলে অনেকেই এ গ্রামটি ছেড়ে সূর্যের আলো পেতে অন্যত্র চলে গেছেন। গ্রামের বাসিন্দাদের এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে ১৯৯৯ সালে একটি বিকল্প পন্থা খুঁজে বার করেন তদানীন্তন স্থানীয় মেয়র ফ্রাঙ্কো মিদালি। ইটালির ভাইস নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার সেই প্রস্তাবটি ছিল, শহর চত্বরে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে একটি দৈত্যাকার আয়না স্থাপন করা হোক।
ইটালি এমনিতে স্থাপত্য-শিল্পকলার দেশ।এ দেশে বিশ্ববন্দিত স্থপতির অভাব নেই।তেমনই একজন স্থপতি গিয়াকোমো বনজানি ভিগানেলা গ্রামে দৈত্যাকার আয়না বসানোর চ্যালেঞ্জ নেন।চ্যালেঞ্জ হল,এমন জায়গায় সেই আয়না বসাতে হবে, যেখানে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে গোটা ভিগানেলা গ্রামকে আলোকিত করতে পারে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী। গিয়াকামো বনজানি ইটালির নামী প্রকৌশলী জিয়ান্নি ফেরারির সহায়তায় আট মিটার প্রশস্ত,পাঁচ মিটার দীর্ঘ একটি আয়নার নকশা করেন।২০০৬ সালে সেই আয়না স্থাপন করা হয়।এর ফলে আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে দিনে ছয় ঘণ্টা সেই গ্রামে সূর্যের আলো পড়তে থাকে।


তবে সূর্যের সরাসরি আলোর মতো সেই আলোর উত্তাপ ততটা শক্তিশালী নয়। তবে সূর্যের প্রতিফলিত আলোয় ভিগানেলা স্কয়ার (গ্রামের কেন্দ্রস্থল) উষ্ণ হয়ে উঠে। পাশাপাশি বাড়িঘরগুলিও আলো পায়।আয়নাটি শুধু শীতকালেই ব্যবহৃত হয়। বাকি সময় ঢেকে রাখা হয়।
এ উদ্যোগ শুধু ব্যবহারিক সুবিধাই নিয়ে আসেনি, বরং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে।সিলভিয়া ক্যাম্পোরেসি নামের একজন মাল্টিমিডিয়া শিল্পী ২০২০ সালে ভিগানেলা গ্রামটি পরিদর্শন করেন এবং আয়নাটি নিয়ে একটি সে তথ্যচিত্র তৈরি করেন। ভিগানেলার প্রাক্তন মেয়র মিদালি ২০০৮ সালে এক শে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই প্রকল্পের পিছনে বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি ছিল না, ছিল শুধু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শীতকালে ঠান্ডা ও অন্ধকারে ডুবে সে যাওয়া শহরটির মানুষেরা যেন নিজেদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা করতে পারেন, সেই ইচ্ছা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।এটা দেখে সত্যিই ভাল লাগে যে, শীতের চার মাস ভিগানেলা গ্রাম কৃত্রিম ভাবে হলেও দিনের বেলা সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল থাকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.