আরও পর্দা ফাঁসের আশংকায় চাপ!
শান্তিনিকেতন কান্ডে রহস্য নিরবতা বাম-কংগ্রেসের, গুঞ্জন!!
কোলকাতা অফিসঃ- পশ্চিমবঙ্গে গরু পাচার বানিজ্য এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনেক আগেই নাম জড়িয়েছে, বীরভূমের তৃণমুলের ডাকসাইটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের প্রধান সাকরেদ মলয় পিঠের। ইতিমধ্যে কয়েকবার সিবিআই এবং ইডির জেরার মুখে পড়তে হয়েছে মলয় পীঠকে। তিনি এখোনো সিবিআই এবং ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই মলয় পিঠ কে আবার তলব করতে পারে সিবিআই। পুনরায় সিবিআই জেরার মুখে পড়তে হতে পারে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা মলয় পিঠকে। আর এমনই এক বিতর্কিত ব্যাক্তিকে ত্রিপুরার বর্তমান সরকার অনেকটা জামাই আদরে ডেকে এনে তথাকথিত মেডিকেল কলেজের নামে, একপ্রকার গায়ের জেরে এবং একতরফা ভাবে ব্যাবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই অনৈতিক সুযোগ প্রদানের পেছনে কি কি হয়েছে? কে বা কারা, কোথায় কিভাবে লাভবান হয়েছে? সব তথ্যই আমাদের কাছে রয়েছে। কিছু কিছু তথ্য আমরা ইতিমধ্যে রাজ্যবাসীর সামনে তুলে ধরেছি। আর এতেই শুরু হয়ে যায় ভূমিকম্প। আরও কিছু গোপন তথ্য জনসমক্ষে বেরিয়ে যাওয়ার আশংকায় শুরু হয়ে যায় দৌড়ঝাপ। নানা মহল থেকে নানা ভাবে চাপ আসা শুরু হয়ে যায়। সেই চাপ এখোনো অব্যাহত আছে। সেই সাথে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের কর্ণধার মলয় পিঠ প্রভাবশালীদের বাড়ি বাড়ি দৌড়াচ্ছেন। তাঁদের হাতে পায়ে ধরছেন। ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সবাই কি আর ম্যানেজ হয়? তবে শান্তনিকেতন কান্ডের পুরো এপিসোডে সবথেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের প্রধান দুই বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে। শুধু তাই নয়, দুই দলের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনেও ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। রাজ্যে শান্তিনিকেতন নামে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন নিয়ে বিভিন্ন দূর্নিতীর প্রথম অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী। এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি মারাত্নক সব অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি স্পষ্ট অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক পদে বসে আছেন এমন একজন শীর্ষনেতা জড়িত। তিনি আরও বলেছিলেন, কোলকাতা ত্রিপুরা ভবনের লগবই চেক করলে বেরিয়ে যাবে ঐ নেতা ত্রিপুরা ভবনের গাড়ি ব্যবহার করে কতবার বীরভূম গিয়েছেন। এমনকি তিনি শান্তিনিকেতন কান্ডে মুখ্যমন্ত্রী কেও চিঠি লিখেছিলেন। জীতেন্দ্র বাবুর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য পরদিন রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এরপরই রহস্যজনক ভাবে বিরোধী নেতা নীরব হয়ে যান! এরপর বিরোধী নেতা এমনকি সিপিএম দলের কোন নেতার মুখে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ নিয়ে আর কোনও কথা শোনা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে এনিয়ে প্রশ্ন ও কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। জীতেন্দ্র বাবুর মতো নেতা হঠাৎ এমন নিরব হয়ে গেলেন কেন? তিনি সব বললেন, অথচ সাংবিধানিক পদে বসে থাকা শাসক দলের জনপ্রতিনিধি এবং নেতার নাম বললেন না! প্রশ্ন উঠেছে, ওই নেতার সাথে এবং শান্তিনিকেতনের কর্ণধার মলয় পিঠের সাথে কি তাহলে সমঝোতা হয়ে গেছে? এই বিষয়ে অপর বিরোধী দল কংগ্রেসের ভূমিকা তো আরও রহস্যে ঘেরা। শান্তিনিকেতন কান্ডে কংগ্রেস নেতাদের মুখ দিয়ে আজ পর্যন্ত একটি টু শব্দ পর্যন্ত শোনা যায়নি। তাদেরও এমন আশ্চর্যজনক নিরবতার কারণ কি? এখানেও কি তাহলে আগেই রফা হয়ে গেছে? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই। অথচ বাম আমলে জিনেট কে কেন্দ্র করে তখনকার বিরোধীরা সারা রাজ্যে শুধু তীব্র আন্দোলনই গড়ে তুলেনি, জিনেট কে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলি পর্যন্ত চলেছে। যার জেরে পরবর্তী কালে জিনেট রাজ্য থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল, বিরোধী দলনেতা শান্তিনিকেতন নিয়ে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেই রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। মুখে কুলুপ এঁটে বসে গেছেন। তাঁর এই হঠাৎ নিরবতা নিয়ে শুধু জনমনেই নয়, সিপিএম দলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে। তবে কি মলয় পিঠের সাথে সমঝোতা হয়েছে? নাকি এই ইস্যু থেকে সিপিএম সরে গেছে? যদি সরেই যায়, তাহলে অভিযোগ আনলেন কেন? এরপর রাজ্যবাসীর কাছে বিরোধী দলের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে? এমনিতেই মাত্র ছয় বছরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে দলকে। এরপর নেতাদের কেউ বিশ্বাস করবে? তাদের উপর ভরষা রাখবে? শান্তিনিকেতন কান্ডে আরও অভিযোগ, তাঁদের দলীয় মুখপাত্রের কেউ কেউ মলয় পিঠের সাথে শুধু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই চলছে না, দক্ষিনা পর্যন্ত এনেছে বলে অভিযোগ। জীতেন্দ্র বাবু শুধু রাজ্যের বিরোধী দলনেতাই নন, তিনি সিপি আই এম দলের রাজ্য সম্পাদকও। স্বাভাবিক ভাবেই তার এই ভূমিকা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।এখানেই শেষ নয়, শান্তিনিকেতন ইস্যুতে আশ্চর্যজনকভাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও রহস্যজনক নিরব ভূমিকা পালন করছেন! অথচ তিনি ছোট ছোট ইস্যুতেও সরকারের নানা ভুল ত্রুটি নিয়ে পছন্দের মিডিয়াকে ডেকে কথা বলেন। কিন্তু তাঁকেও দেখা গেল শান্তিনিকেতন ইস্যুতে একেবারে চুপ থাকতে! তাঁর এই ভূমিকা কি বিজেপি থেকে সুবিধা পাওয়ার কারণে? নাকি দলীয় কৌশল? বোঝা যাচ্ছে না। রাজ্যের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি বাড়ি থেকে একপ্রকার জোর করে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ মানিক বাবু প্রাসাদ প্রমান ডুপ্লেক্স বাড়িতে বহাল তবিয়তে আছেন। এসব কারণেই তাঁর নিরবতা কিনা? এই নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে । তবে যতই চাপ আসুক, অন্যায় এবং দূর্নিতির বিরুদ্ধে দৈনিক সংবাদ বরাবরই সরব ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।