আর্থিক পরিস্থিতি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সুখকর নহে । সরকার মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা লইতেছে প্রতিটি ত্রৈমাসিকেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা হইতে অনেক দূরে বা পশ্চাতে থাকিতে হইতেছে । আবার দিনে দিনে সকল চাপ আসিয়া পড়িতেছে কৃষির উপরে । কারণ কৃষি উৎপাদন ব্যতিরেকে আর কোনও ক্ষেত্রই উৎপাদনে ভদ্রস্থ কোনও আকার লইতে পারিতেছে না । আবার দেশে কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশ ছুঁইতেছে । আমাদের দেশ ডাল শস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর নহে । এইক্ষেত্রে ডাল বিদেশ হইতে আমদানি হইতেছে বলিয়া ইহার মূল্যবৃদ্ধি মানিয়া লওয়া যায় , কিন্তু ক্রমাগত দাম বাড়িয়া চলিয়াছে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের । এমনকি শাকসবজি , মাছ , মাংসেরও দাম বাড়িতেছে , যদিও এই সকল ভোগ্যপণ্যের জন্য আমাদের কখনোই বিদেশের কাছে হাত পাতিতে হয় না । ধরিয়া লওয়া যায় , কৃষি বা পরিষেবাক্ষেত্রে যে উৎপাদন ঘাটতি তাহা মিটাইতে হইতেছে কৃষি দিয়া । কেবল কৃষি দিয়া অর্থনীতির সচ্ছলতা আসে না বলিয়াই শিল্পের দিকে আগাইতে হয় । আমাদের রাষ্ট্রনেতারা সেই দৃষ্টিতেই শিল্পায়নের দিকে আগাইয়া গিয়াছিলেন ।

সেইসব শিল্পের কথা ভাবা হইয়াছিল যে সকল শিল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ খুলিয়া দেয় । প্রথমদিকে রাষ্ট্রের উদ্যোগে কিছু ভারী শিল্পোদ্যোগ গড়িয়া তোলা হইয়াছিল বস্তুত রাষ্ট্রের নিজস্ব চাহিদা পূরণে । প্রথমদিকে বেসরকারী পুঁজিও বিশেষ ছিল না । পরবর্তী সময়ে বেসরকারী পুঁজি আগাইয়া আসিল , বেসরকারী শিল্প হইল সরকারী সহায়তায় ।আবার এই সকল বৃহৎ শিল্পের বাহিরে অজস্র মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প হইল যেগুলি ছিল বস্তুত কৃষিভিত্তিক , বনভিত্তিক এবং পরম্পরাগত কারিগরি নির্ভরতার সহিত আধুনিক প্রযুক্তির মেল বন্ধনের মাধ্যমে । স্থানীয় কাঁচামাল আর স্থানীয় শ্রমিকের উপর গড়িয়া উঠা এই মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্পগুলি দেশের বিশাল অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের মোট ঘরোয়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখিত । বলা যায় , হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পপতির হাতে যে পুঞ্জীভূত পুঁজি আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তাহার বিপরীতে বিকেন্দ্রীভূত পুঁজির মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্পগুলি বিশাল অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করিয়া স্থানীয় বাজার সচল রাখিত । দেশের মোট ঘরোয়া উৎপাদনে তাহাদের যোগদান থাকিত অসামান্য । এই সকল শিল্পক্ষেত্র সম্পর্কে কথা বলিতে গেলে অতীত কালের ব্যাকরণে বলিতে হয় । কারণ দেশে আজ আর মাঝারি বা ক্ষুদ্র শিল্পের অস্তিত্ব নাই । ২০১৬ সালের নভেম্বরের এক সন্ধ্যারাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির প্রতি বজ্রনির্ঘোষ ঘোষণায় নোটবন্দি হইয়া যায় । বলা হইয়াছিল সন্ত্রাসীদের অর্থনীতি আর কালো টাকা উদ্ধারের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা ।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পাশে দাঁড়ান নাই দেশ কিংবা বিদেশের কোনও অর্থনীতিক পণ্ডিত । দেশের অর্থনীতির পণ্ডিতেরা নোটবন্দির বিরোধিতা করিয়া ‘ দেশদ্রোহী ’ তকমা পাইয়াছিলেন কেউ কেউ । আবার মিতভাষী রাজনীতিক , অর্থনীতির পণ্ডিত মনমোহন সিং এই ঘোষণাকে মনুমেন্টাল লুট বলিয়াছিলেন । ইহার বাংলা তর্জমা যদি হয় লুটের স্মারক , তাহা হইলে সেই নোটবন্দিকে আমাদের জন্য স্মরণীয় করিয়া রাখিতেছে আমাদের দেশের অর্থনীতির নিম্নগামী লেখচিত্র ।সরকার দেশের শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শিল্প সংস্থার ঋণ মকুব করিতেছে , কর্পোরেট ট্যাক্স মকুব করিতেছে , কিন্তু বৃহৎ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিতই থাকিবে । একদিকে সাধারণ মানুষের হাতে যেমন টাকা দিতে হইবে , তেমনি প্রয়োজন কর্মপ্রার্থী বৃহৎ অংশের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করিয়া দেওয়া । সাধারণ মানুষের হাতে টাকা আসিলে বাজার তেজি হইবে । বাজারে বিক্রিবাটা বাড়িয়া যাওয়ার অর্থ হইল পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি । অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধি । তাহা হইলে দেশের মোট ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব । তবে এই পরিস্থিতি ফিরাইয়া আনিতে হইলে যে বৃহৎ অংশের মানুষের কর্মসংস্থান দরকার তাহা হইতে পারিত কেবল মাঝারি বা ক্ষুদ্র শিল্পগুলি যদি জীবিত থাকিত । দ্বিতীয়বার মোদি সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকার নিজেও মৃত শিল্পের পুনরুজ্জীবনের কথা বলিল । কিন্তু হইল কই ! ফলে আমাদের অর্থনীতি দেশের অর্থনীতির পণ্ডিতদের পূর্বাভাসের আশঙ্কা মতোই খুঁড়াইয়া চলিতেছে ।

বে আমরা বিশ্বাস করি এই দেশের পরিণতি আর যাই হোক , শ্রীলঙ্কা হইবে না । কারণ শ্রীলঙ্কায় চাল গমও বিদেশ হইতে আমদানি করিতে হয় , আমাদের দেশে আকাশ সদয় পরিমাণ থাকিলে চাল গমের উৎপাদন উদ্বৃত্ত হয় । এতটাই উদ্বৃত্ত যে সরকার | ইচ্ছা করিলেই ৭০ শতাংশ পরিবারে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে পারে । করোনা লকডাউনের বিনামূল্যের চাল এখনও চলিতেছে , যেহেতু এই বৎসর সময়ের আগে বর্ষা আসিয়া গেছে । ফলে সরকার চাইলে ২০২৪- এর নির্বাচন অবধি বিনামূল্যে চাল দেওয়া যাইতে পারে । প্রশ্ন থাকিবে একটাই— শুধু ভাত তো খাওয়া যায় না । যেকোনও ভোগ্য সামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এবং মানুষের কর্মহীনতায় মানুষ ব্যঞ্জনের জোগাড় করিবে কী প্রকারে ?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

18 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

18 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago