আলঙ্কারিক, তবু থাক!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সংবিধানে নেই। তবু উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর সংবিধানে দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানে না থাকলেও উপ-মুখ্যমন্ত্রী বা উপ- প্রধানমন্ত্রী পদ বেআইনি নয়। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন,কোনও বিধায়ক বা সাংসদকে বিশেষ মর্যাদা দিতে এই পদ দেওয়া যেতেই পারে।প্রধানমন্ত্রী অথবা মুখ্যমন্ত্রীর ‘ডেপুটি’ হলেন কেন্দ্র বা সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী।বর্তমানে দেশের ১৪টি রাজ্যে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন একাধিক জনপ্রতিনিধি।অন্ধ্রপ্রদেশে আসীন পাঁচজন উপ-মুখ্যমন্ত্রী।বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান,উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র,মেঘালয়,নাগাল্যান্ডে আসীন দুজন উপ- মুখ্যমন্ত্রী। সংবিধানে অনুল্লিখিত থাকুক, মুখ্যত ভোটের অঙ্ক কষে, বাকিটা মুখ্যমন্ত্রীর মোহাবিষ্ট নেতাদের এই পদ দিয়ে মানভঞ্জনের চেষ্টা করে শাসক।যেমন বিজেপিকে ধরাশায়ী করে কর্ণাটকে নিরঙ্কুশ জয়ের পরে কংগ্রেসে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার ছিলেন যুগপৎ সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমার।মুখ্যমন্ত্রীর মুখ চূড়ান্ত করতে পাঁচদিন অতিক্রান্তের পরে শিবকুমার উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন এই শর্তে যে, আর দ্বিতীয় কোনও উপ-মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।স্বাধীনতার পর কেন্দ্রের প্রথম মন্ত্রিসভাতেই উপ-প্রধানমন্ত্রী হন বল্লভভাই প্যাটেল।নেহরুর সঙ্গে তার রাজনৈতিক বিরোধিতার পাশাপাশি ব্যক্তিত্বের রেষারেষিও ছিল।মূল বিরোধ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সরকারী অর্থে গুজরাটের সোমনাথ মন্দির সংস্কার এবং রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের পুনর্গঠিত মন্দির উদ্বোধন কিছুতেই মানতে পারেননি নেহরু।এর দীর্ঘ ব্যবধানে,১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী হন চৌধুরী চরণ সিং।তিনি পরে অল্পদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন।তার স্বল্পকালীন মন্ত্রিসভায় দ্বৈত উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জগজীবন রাম এবং যশবন্তরাও চবন।সেই উপমুখ্যমন্ত্রীরা আবার ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর গলার কাঁটা। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর সরকারের পতন হলে কুর্সিতে বসেন জনতা দলের নেতা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং।সেই মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী হন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
লোকদল নেতা দেবীলাল। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক শপথবাক্য পাঠের সময় দেবীলাল ‘উপ’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। পাশ থেকে রাষ্ট্রপতি ‘উপ’ ‘উপ’ বলে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করলেও দেবীলাল দমেননি।দেবীলাল সেদিন ভুল করেছিলেন নাকি গোটাটাই ছিল প্রথমস্য দিবস থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের চিত্রনাট্য, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলে পরবর্তী বহু বছর।সেই মন্ত্রিসভা বেশিদিন টিকতে না পারার একটি কারণই ছিল প্রধানমন্ত্রী বনাম উপ-প্রধানমন্ত্রীর বিরোধ।প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সিলমোহর দিলেও সত্য এই যে উপপ্রধানমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী বলে কোনও পদের উল্লেল্লখ সংবিধানে নেই।সংবিধানের ৭৫ নম্বর অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং ১৬৪ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজ্য মন্ত্রিসভার উল্লেল্লখ আছে।সেখানে কোথাও উপপ্রধানমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীর উল্লেল্লখ নেই। দেবীলালকে উপপ্রধানমন্ত্রী করার পর সুপ্রিম কোর্টে তার নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছিল।শীর্ষ আদালতকে সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, দেবীলাল আর পাঁচজন মন্ত্রীর মতোই মন্ত্রিসভার একজন
সদস্যমাত্র।দেবীলালের এক যুগ পরে অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হলে নিজের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা লালকৃষ্ণ আদবানীকে উপপ্রধানমন্ত্রী করেন।তাদের মধ্যে কখনও কোনও বিষয়ে মতবিরোধ হয়ে থাকতেই পারে, তবে তা প্রকাশ্যে আসেনি।বস্তুত,গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদবানীকে না জানিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতেন না বাজপেয়ী। আদবানী সে সময় একাধারে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে দল ও সংঘ পরিবারের তরফে রাজনাথ সিং অথবা মনোহর পারিক্করকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব থাকলেও মোদি তাতে সবুজ সঙ্কেত দেননি।অর্থাৎ গোটা বিষয়টি আলঙ্কারিক হলেও এ হেন পদের প্রয়োজনীয়তা উক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক ওজনের উপর নির্ভরশীল। উপপ্রধানমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয় মূলত কর্ণাটরে মতো দলীয় দ্বন্দ্ব এবং রাজনীতির সমীকরণ, জাতপাতের অঙ্ক, শরিকি পাটীগণিতের কারণে। এই অঙ্কেই হরিয়ানা কিংবা বিহারে উপমুখ্যমন্ত্রী হন দুই তরুণ তুর্কি দুষ্যন্ত চৌতালা ও তেজস্বী যাদব।আবার অন্ধ্রপ্রদেশে জাতিগত সমীকরণকে বিবেচ্য গণ্য করে পাঁচজনকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়। একই কারণে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভায় উপ- মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যা দুই। মূল কথাটি হল,ভোটের বালাই কে ছাড়িতে পারে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

13 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

13 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago