আলুর ফলন ও বীজ উৎপাদন বাড়াতে ‘মৌ’!!

 আলুর ফলন ও বীজ উৎপাদন বাড়াতে ‘মৌ’!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নবতমানের আলুবীজ উপাদানের লক্ষ্যে এক সুদূরপ্রসারী প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর।প্রকল্পের সুফল এ বছর থেকে পেতে শুরু করবে চাষিরা।আগামী তিন বছরের মধ্যে বিশেষ সাফল্য আসবে বলে আশাবাদী উদ্যান দপ্তরের কর্তারা।প্রকল্পের সূচনা অনুযায়ী শুরুতে এপিকাল রুটেড কাটিং (এআরসি) প্রযুক্তির মাধ্যমে আলুর উন্নত বীজ উৎপাদন করা হবে।এরপর ধাপে ধাপে জেনারেশন শূন্য বা জি০, জি১, জি২, জি৩, প্রভৃতি পর্যায়ের আলুবীজ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হবে।প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়নের জন্য মৌ সাক্ষরিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল পটাটো সেন্টার (সিআইপি) তথা আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের সাথে রাজ্য সরকার এবং উদ্যান ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ দপ্তরের। ইতোমধ্যে কর্ণাটক, ওড়িশা, মেঘালয়, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্য সিআরপি-র সাথে গাঁটছড়া বেধে আলু উৎপাদনে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে।
ত্রিপুরাও শীঘ্রই আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি গ্রহণ করে আলু ও আলুবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন উদ্যান কর্তারা। আলু উৎপাদনে রাজ্যের কৃষকরা বরাবরই অন্য রাজ্যের তুলনায় খানিকটা পিছিয়েই থেকেছে। এর প্রধান চিহ্নিতকরণগুলি হলো প্রতিকূল আবহাওয়া, উন্নতমানের আলুবীজের অপ্রতুলতা এবং সুষম সারের ব্যবহারে সচেতনহীনতা। রাজ্যের সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় দক্ষিণ জেলায়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম জেলা। পশ্চিম জেলার চেয়ে দ্বিগুণ আলু চাষের এলাকা রয়েছে দক্ষিণ জেলায়। উৎপাদনও দ্বিগুণ।এমনকী শুধু শান্তিরবাজার মহকুমায় আলু চাষের এলাকা পশ্চিম জেলা থেকেও বেশি।প্রকল্পটিকে সামনে রেখে রাজ্যের কৃষি ও উদ্যান প্রযুক্তিবিদরা গত কয়েক মাসে দক্ষিণ জেলাসহ অন্য জেলার আলু চাষীদের সাথে কথা বলে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছেন। এর সারাংশ এইরকম (এক) আলু চাষের সময়কাল আরও কমাতে হবে। (দুই) শংসিত বা সার্টিফাইড আলুবীজ সহজলভ্য করতে হবে। (তিন) কম খরচে সুষম উল্লেখযোগ্য নিউট্রেনযুক্ত সারের প্রয়োগ করতে হবে এবং সর্বোপরি মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে জমির অ্যাসিডিটি ও নিউট্রন ঘাটতি দূর করতে হবে। উল্লেখিত প্রকল্পে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যে নতুন ভ্যারাইটির বা জাতের আলু চাষে জোর দেয়া হয়েছে। এরাজ্যে দীর্ঘ বছর ধরে জ্যোতি নামক জাতের আলুই বেশি চাষ হয়ে আসছে।সাথে রয়েছে টিপিএস জাত।এই ধরনের আলুর উৎপাদন কম। গড়ে প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ১৮ টন মাত্র।এছাড়া ফলনের সময় কালও বেশি।প্রকল্পের অধীনে নতুন যেসব জাত আনা হচ্ছে এগুলি হলো লিমা, হিমালিনী,থর ২, উদয় এবং মোহন।পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এই জাতগুলি খুবই জনপ্রিয় চাষিদের মধ্যে। গড় উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ টন। উদ্যানবিদদের আশা, কম করেও ২২ টন উৎপাদন হবে এখানে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই জাতগুলির সময়কাল প্রথম তিনটির ক্ষেত্রে ৯০ থেকে ১০০ দিন। শেষের দুটি ৭০ থেকে ৮০ দিন।বঙ্গোপসাগর সন্নিহিত অঞ্চল হওয়ায় রাজ্যে আলু উৎপাদন সময়কাল যতো কম হবে ততোই সুবিধা বলে মনে করেন উদ্যানবিদরা। এরফলে অসময়ের ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চাষিদের ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে। প্রকল্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা রাজ্যেই উৎপাদন করা হবে আলুবীজ। তার জন্য উদ্যান দপ্তরের তত্ত্বাবধানে চাষের জমি চিহ্নিতকরণ ও চাষি নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে।প্রতি চার জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। চাষিদের সম্পূর্ণভাবে প্রাযুক্তিক সহায়তা দেওয়া হবে।প্রকল্পের অধীনে নাগিছড়া উদ্যান গবেষণা কেন্দ্র এআরসি প্রযুক্তিতে আলুর চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে।এছাড়া পাঞ্জাব থেকে আনা হচ্ছে জিশূন্য ৫ জাতের আলু বীজ। উল্লেখিত পাঁচ ধরনের বীজ সব এলাকায় নির্বাচিত সব চাষিদের মধ্যে দেওয়া হবে।ফসল ফলনের পর নতুন যে জাতগুলি উপযুক্ত ও লাভজনক মনে করবেন চাষিরা পরবর্তী বছরগুলিতে সেই জাতের চাষ সম্প্রসারণ করা হবে।এদিকে বীজ উৎপাদনের জন্য জমি আলাদা রাখা হবে, অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে আলু ও আলুবীজের জন্য বহিঃরাজ্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা হবে।প্রতিবছর বহু চাষিই অভিযোগ করেন, খোলা বাজার থেকে বীজ কিনে তারা ঠকছেন। ফলন খারাপ হয়। নিজেরা ক্ষেত থেকে বীজ আলাদা রেখে পরের বছর চাষ করেও ভালো ফলন পাওয়া যায় না। কারণ খাবার আলু থেকে বীজ কখনও গুণমান সম্পন্ন হয় না।এ ব্যাপারে চাষিদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।পরবর্তী বছরগুলিতে উৎপাদিত আলু চাষিরা নিজেদের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন।আলু চাষে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ সালফার, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি নিউট্রেনের সুষম ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য, গোটা রাজ্যে সাত হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়ে থাকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.