আলু, ধান, সবজির সাথে ডাল চাষেও এগোচ্ছে ত্রিপুরা : রতন!!

 আলু, ধান, সবজির সাথে ডাল চাষেও এগোচ্ছে ত্রিপুরা : রতন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য এবার ধান ও সবজির পাশাপাশি ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ মঙ্গলবার বিশালগড় ব্লকের রঘুনাথপুর এলাকার ডাল চাষিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের উৎসাহদানের পাশাপাশি তাদের সমস্যা সম্পর্কেও অবহিত হয়েছেন এবং দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি জানান, তার রঘুনাথপুর সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের উৎসাহিত করা ও ডাল চাষের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেওয়া।


মন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, ডাল চাষ করেও দারুণভাবে উপার্জন করা যায়, তা রঘুনাথপুরের কৃষকরাই প্রমাণ করে দিয়েছেন। এখন সময় এসেছে ডালজাতীয় শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে রাজ্যকে আত্মনির্ভর করার। এদিন তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফণিভূষণ জমাতিয়া।
মন্ত্রী বলেন, রঘুনাথপুর এলাকার ৪৩ জন কৃষক প্রায় ১০০ কানি জমিতে ডাল, ধান ও সবজি চাষ করছেন। তার মধ্যে ৩০ কানিতে মুগ ডাল, ২৫ কানিতে মাসকলাই, ৪০ কানিতে হাইব্রিড বোরো ধান এবং ৫ কানিতে সবজিও চাষ হচ্ছে। এক ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করে তারা শুধু জমির সদ্ব্যবহার করছেন না, বরং রাজ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এ ধরনের কৃষির মডেল আগামীদিনে ত্রিপুরার অন্যান্য কৃষি মহকুমাগুলিতে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। উদ্দেশ্য একটাই ধানের পাশাপাশি ডাল ও তৈলবীজ চাষে উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজ্যের কৃষিকে টেকসই ও বহুমুখী করা।
ত্রিপুরার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ জনগণ কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত পেশায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। যদিও রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ৬৬ লক্ষ কানি, তবুও কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ২৪ শতাংশ। সারা বছরে ফসল চাষ হয় এমন জমির পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ কানি। এর মধ্যে ধান চাষ হয় প্রায় ১৫ লক্ষ কানিতে।
কিন্তু এতদিন ডালজাতীয় শস্যের চাষ সীমিত আকারে হয়ে আসছিল। বর্তমানে রাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র ৪.৩৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১ লক্ষ ৩২ হাজার কানিতে বিভিন্ন প্রকার ডাল শস্য চাষ হয়। অথচ সারা বছরে রাজ্যে ডালের চাহিদা ৭৭ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু উৎপাদন মাত্র ১৮ হাজার মেট্রিক টন। মানে চাহিদার মাত্র ২৪ শতাংশ উৎপাদন হয়। এই ঘাটতি পূরণে রাজ্য এখন বহি:রাজ্যের উপর নির্ভরশীল।এই নির্ভরতা কমিয়ে রাজ্যকে আত্মনির্ভর করে তুলতেই রাজ্য সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।রাজ্যের মাটি সাধারণত অম্লধর্মী এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ডাল চাষে কিছু সমস্যা থাকলেও উৎপাদনশীলতা জাতীয় গড়ের কাছাকাছি- ৮৫৬ কেজি প্রতি
হেক্টরে।আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত জাতের বীজ ও কৃষি পরামর্শের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সরকার ইতিমধ্যে ক্লাস্টারভিত্তিক চাষের উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে ১০০-১৫০ কানি জমিতে সমন্বিতভাবে ডাল চাষ করা হচ্ছে। এর ফলে উৎপাদিত ফসলের প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনে সুবিধা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এসব এলাকায় মিনি ডাল মিল স্থাপনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, ডাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে রাজ্য সরকার হেক্টর প্রতি ৯ হাজার টাকা সহায়তা দিচ্ছে।
এই অর্থ বীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচে ব্যবহার করা যাচ্ছে।এছাড়া উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বিতরণের পাশাপাশি প্রদর্শনী চাষের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ধন ধান্য কৃষি যোজনার আওতায় দেশের ১০০টি পিছিয়ে থাকা জেলাকে কৃষি উন্নয়নের মূল স্রোতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ত্রিপুরাও অন্তর্ভুক্ত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি ঋণ সুবিধা, ফসল সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য গুদাম তৈরি এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার মিশন ফর আত্মনির্ভরতা নামে একটি ছয় বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় অড়হর, মাসকলাই, মসুর প্রভৃতি ডালজাতীয় শস্য চাষে জোর দেওয়া হয়েছে। NAFED এবং NCCF-এর মাধ্যমে কৃষকরা উৎপাদিত ডালের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন, যা তাদের উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে।
রতনবাবু বলেন, বিশালগড় ব্লক ইতিমধ্যেই খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, যার জনসংখ্যা ১,৩৯,২৮৬। এই এলাকার বার্ষিক খাদ্যশস্যের চাহিদা ৩১,৪৫৭মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৫,২৬৬ মেট্রিক টন, ফলে উদ্বৃত্ত থাকছে ৩,৮০৯ মেট্রিক টন।এই সাফল্যকে মডেল হিসেবে ধরে রাজ্যের অন্যান্য ব্লকেও একই কৌশল প্রয়োগ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়তে হলে কৃষিকে শক্তিশালী করতেই হবে।কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রথম দায়িত্ব। রাজ্যের প্রতিটি চাষি যাতে ডাল চাষ করে উপকৃত হন, সেইদিকেই আমরা এগিয়ে চলেছি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.