‘আলোর ঠিকানা’ শিক্ষার্থীদের আলোর পথেরই দিশা দেখাবে

 ‘আলোর ঠিকানা’ শিক্ষার্থীদের আলোর পথেরই দিশা দেখাবে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ত্রিপুরার সাহিত্য-সংস্কৃতি -শিক্ষার ক্ষেত্রে ড. আশিস কুমার বৈদ্য একটি পরিচিত নাম। স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় (দূর শিক্ষা
বিভাগে) পড়িয়েছেন। শিক্ষাঙ্গনে পঠন-পাঠনের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায় সাধ্য মতো সাংস্কৃতি ক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাট্য শিক্ষা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেতিনি ত্রিপুরা প্রথম শ্রেণির পত্রিকায় অনুভবঋদ্ধ
প্রবন্ধ লিখেছেন। ছাত্র জীবন ও শিক্ষক জীবন দু’টি ক্ষেত্রেই তিনি নাট্যরচনা, নির্দেশনা, অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন (মঞ্চ ও টেলিফিল্মে)। বিভিন্ন সময় ছাত্রছাত্রীদের
উপযোগী বেশ কিছুছোট নাটক লিখেছেন স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ যাতে হয় সেই মতো করে। সবক’টি তার একাঙ্ক নাটকই শিক্ষামূলক। একজন অভিনেতার দ্বারা অভিনয় উপযোগী তার নাটক যেমন আছে,
তেমনি সাত-আটজন নিয়ে অভিনয়
উপযোগী নাটকও আছে। বিভিন্ন সংগঠন সংস্থার দ্বারা অনুষ্ঠিত স্কুল – কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক নাট্য প্রতিযোগিতায় সময় ও শিল্পী সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। এইসব দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে ড. বৈদ্য বিভিন্ন
সময় কিছু একাঙ্ক নাটক বা ছোট আকারের নাটক রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে কিছুমৌলিক নাটক, কিছু আছে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রমুখ যশস্বী কবি, গল্পকারদের কবিতা ও গল্প অবলম্বনে রচিত ছোট নাটক। মহাভারত ও পৌরাণিক কাহিনি থেকেও তিনি বিষয়বস্তু আহরণ করেছেন। সর্বক্ষেত্রেই তিনি
সমাজ-বাস্তবতাকে মনে রেখে লেখনী চালনা করেছেন। এই সব নাটক ইতিপূর্বে নানা সাহিত্যপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু নাটক তার নির্দেশনায় অভিনীত হয়েছে। কিছু নাটক
ত্রিপুরার খ্যাতনামা নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা সঞ্জয় করের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে। এ বছর আগরতলা বইমেলায় (২০২২) তার ছোট নাট্য সংকলন গ্রন্থ ‘আলোর ঠিকানা’ প্রকাশ করেছে বর্ণমালা
প্রকাশনী। স্কুল -কলেজে অভিনয় উপযোগী ১৪টি একাঙ্ক নাটকের সঙ্গে একটি সঙ্গীতালেখ্যও এই বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সঙ্গীতালেখ্যটি নাট্যগুণ সম্পন্ন বলেই হয়তো এই গ্রন্থে স্থান পেল। ড. বৈদ্য মূলত প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থকার। তার একাধিক গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এটিই তার প্রথম প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ। বিষয় নির্বাচন, সংলাপ রচনা, উপযুক্তগানের অন্তর্ভুক্তি, আবহ সঙ্গীত, দৃশ্যপট রচনার সার্থক সমন্বয় ঘটলে
নাটক দর্শক ও শ্রোতামণ্ডলীর কাছে সমাদৃত হয়। এই দিকটা ড. বৈদ্যকে সচেতন বলেই মনে হয়। দু’একটি নাটিকায় তিনি ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘ সংলাপ রচনা করেছেন। সেক্ষেত্রে মনে হয়েছে সংলাপের দৈর্ঘ্য কমিয়ে
ছোট ছোট বাক্যে তিনি প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলতে পারতেন। নাটক সাধারণত অভিনয়ের জন্য লেখা হয়। অবশ্য এর পাঠ্যমূল্যও অস্বীকার করা যায় না। দর্শক ও শ্রোতৃমণ্ডলীর সঙ্গে নাটকের কুশীলবগণ যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলেই নাটকের সার্থকতা। বিশেষ করে সেই সব নাটকে যদি কোনও ইতিবাচক বার্তা থাকে, শিক্ষামূলক
দিক থাকে। ড. বৈদ্যের ‘আলোর ঠিকানা’য় সেই বার্তা আছে। শিক্ষামূলক দিক তো আছেই। নিরক্ষরতার পরিণাম, পুত্র-কন্যার
মধ্যে ভেদরেখা না টানা, পণপ্রথার কুফল, পরিবেশ দূষণ, সর্বশিক্ষা অভিযান, গুরু-শিষ্য পরম্পরা, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা, স্বাস্থ্যবিধির নানা
উপযোগিতা, বনসংরক্ষণ, পণপ্রথার কুফল, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের আকর্ষণ, শ্রমজীবী মানুষের উপযুক্ত মূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তার লেখা, হবু রাজার দেশে, আলোর ঠিকানা, গুরু-শিষ্য সংবাদ, বিচার, পণ্ডিত
মশাই, উত্তরণ, দাও ফিরে সে অরণ্য,
যুদ্ধোন্মোদ দুর্যোধন, উত্তরাধিকার, বহ্নিশিখা, শুম্ভাসুর বিনাশিনী প্রভৃতি নাটক শিক্ষামূলক। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, এই নাট্যগ্রন্থ নাট্যরসগ্রাহী মাত্র সবার কাছেই পাঠযোগ্য বলে মনে হয়। ড. বৈদ্যের নাটকে তারই লেখা
গানগুলোয় লোক সঙ্গীত, বিশেষ করে জারিগানের সুর সংযোজনা নাট্যরস বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। আমরা জানি তিনি লোক সংস্কৃতিরও একজন নিষ্ঠাবান গবেষক। তার
নাটকে ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রতিফলন ঘটেছে। এমন একটি নাট্যগ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিয়ে নাট্যকার ও প্রকাশক প্রশংসনীয় কাজ
করেছেন। বোর্ড বাঁধাই এই বইটির বর্ণসংস্থাপন, মুদ্রণও প্রশংসনীয়। মুদ্রণপ্রমাদ থাকলেও খুব কম। বইটির সুশোভন প্রচ্ছদ এঁকেছেন আর্ট কলেজের অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ শীল।

——গীতা দেবনাথ

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.