আলোর পথে হাঁটলেন রতন, অন্ধকার দেখালেন অনিমেষ!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-গত ৫
জানুয়ারী বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সোমবার আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাব এনেছিলেন সংসদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ। তিনিই সোমবার আলোচনার সূত্রপাত করেন।অন্যদিকে, বিরোধীরা রাজ্যপালের ভাষণের উপর ১১৮টি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন।সোমবার রাজ্যপালের ভাষণের উপর সমর্থন জানিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দীর্ঘ এক ঘণ্টার ভাষণে রীতিমতো আগুন ঝড়ালেন সংসদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ।গত ছয় বছরে সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে আলোর পথ দেখালেন কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী শ্রীনাথ।উল্টো দিকে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা সেই আলোর পথে অন্ধকারগুলি তুলে ধরে সমালোচনা করেন।এ দিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর আলোচনা করতে গিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ উন্নয়নের যাবতীয় তথ্য যেমন তুলে ধরেন, তেমনি মহাভারতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএমকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করেন।একই সাথে গানের কলি উচ্চারণ করে বিরোধীদের একপ্রকার সতর্ক করেন।তিনি বলেন,গত ছয় বছরে সরকার কী কী কাজ করেছে,তার প্রতিফলন হচ্ছে রাজ্যপালের ভাষণ। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী? সরকারের দিশা কী?সেইগুলিই রাজ্যপালের ভাষণে উঠে এসেছে।রতনবাবু বলেন, রাজ্যপালের ভাষণের পাঁচ নম্বর প্যারাতেই রয়েছে বর্তমান সরকারের মূল দিশা ও ভাবনা। সেখানে উল্লেখ আছে, সমাজের সকল অংশের মানুষের বিকাশ ও দেশের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া,জনকল্যাণে উদ্ভাবনীমূলক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দক্ষ নেতৃত্বে দেশ ২০২৬-এর মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের অর্থনীতি গড়ে তোলার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।শ্রীনাথ বলেন, এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।আমরা একসাথে থাকবো,একসাথে চলবো, একসাথে সমস্যার সমাধান করবো,একসাথে এগিয়ে যাবো। এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলে আমরা নজির স্থাপন করিমন্ত্রী বলেন,প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে শুধু চারটি জাতি।আর কোনও জাতি নেই।এই চারটি জাতি হলো,গরিব, কৃষক, যুবক এবং মহিলা।রাষ্ট্রই প্রথম।রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যাথাত সৃষ্টি করবে এমন কোনও কিছুর সাথে আপস করবো না।মন্ত্রী বলেন, সিপিএম-কংগ্রেস রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলে চিৎকার করছে।অবাক লাগে কংগ্রেস – সিপিএম গণতন্ত্রের কথা বলছে?তাই ঘোড়াও হাসছে।১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা থেকে শুরু করে সিপিএমের ৩৫ বছরের রাজত্বে কীভাবে রাজ্যে গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে,তার তথ্য তুলে ধরে উভয় দলকেই বিদ্ধ করেন। ভাবতে অবাক লাগে, আজ কংগ্রেস- সিপিএম একসাথে মধুমিলন করছে।ত্রিপুরা রাজ্যে সন্ত্রাসের জন্মদাতা হচ্ছে সিপিএম।কত খুন,ধর্ষণ হয়েছে তার হিসাব নেই।বিধায়ক,মন্ত্রী পর্যন্ত খুন হয়ে গেছে।এক মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।তাকে পর্যন্ত খুন করা হয়েছে।কত রাজনৈতিক খুন হয়েছে,এজেন্ট খুন হয়েছে, তার হিসাব নেই। তারাই আজ গণতন্ত্রের কথা বলছে।তাইতো কংগ্রেস ও সিপিএম আজ জনবিচ্ছিন্ন।মন্ত্রী বলেন,পূর্ণ রাজ্য হওয়ার পর থেকে সিপিএম সবকিছু পদদলিত করে রেখেছে।যুবসমাজকে আত্মনির্ভরতার পথ দেখিয়ে দলীয় আনুগত্যের মন্ত্র দিয়ে মগজ ধোলাই করেছে। সরকারী চাকরি ছাড়াও যে কাজ আছে, সেই কথা সিপিএম কোনও দিন বলেনি।মন্ত্রী বলেন, বিজেপি কোনও রাজনৈতিক দল নয়।বিজেপি একটি মিশন।আজ জনগণ সিপিএমের সাথে না থাকলেও তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে।মন্ত্রী বলেন, হাত-মাথা এবং হৃদয় এই তিনটি একসাথে কাজ করলে তবেই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।বর্তমান সরকার এই তিনটিকে একসাথে করেই সার্বিক উন্নয়নের কাজ করছে।মন্ত্রী বলেন,সিপিএমের মতাদর্শে ভারতীয়তা নেই।তারা সবকিছু বিদেশ থেকে ধার করে এনেছে। রাহুল গান্ধীর নাম না করে বলেন,একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন,অথচ ভারতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। যারা একসময় সিপিএমকে বিদেশের দালাল বলে আখ্যায়িত করতো, তারাই আজ একে অপরের শরিক।মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলিতে এখন ৫৫ লক্ষের উপর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমানত জমা আছে ৩৭ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।এই টাকা কোথা থেকে এসেছে?মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে বলেই এই টাকা এসেছে।এ দিন মন্ত্রী গত ছয় বছরে সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন। ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সকলকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন।তাৎপর্যপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, রতনবাবুর দীর্ঘ এক ঘণ্টা ভাষণে যে তেজ এবং সমালোচনার তির ছুটে এসেছে,তাতে বিরোধী সদস্যরা কেউই কোনই কথা বলতে পারেননি।চুপচাপ শুনতে হয়েছে। সংসদীয় মন্ত্রীর ভাষণের পরই রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা।ভাষণের শুরুতে বলেন, মানুষ যখন হতাশাগ্রস্ত হয়,তখন সংসদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথের ভাষণ শুনলে হতাশা কাটিয়ে উজ্জীবিত হবেন।এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।তিনি যে আলোর পথ দেখালেন,তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে আলোর নিচে যে অন্ধকার আছে, আমি সেগুলো সরকারের দৃষ্টিতে নিতে চাই। তিনি বলেন, বেকার সমস্যা আজ রাজ্যের সব থেকে বড় সমস্যা।সেই সমস্যার সমাধান না হলে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা কী করে সম্ভব হবে? বিভিন্ন দপ্তরে শত শত শূন্যপদ পড়ে রয়েছে।সেগুলি কবে পূরণ হবে।এসটিজিটি,টেট উত্তীর্ণরা চাকরি পাচ্ছে না। ২০১৮ সালে বাম সরকার যখন চলে যায়, তখন ঋণ ছিলো ১৩ হাজার কোটি টাকা।ছয় বছরে সেই ঋণ বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। আপনারা আত্মনির্ভরতার কথা বলেন,এর নাম আত্মনির্ভরতা?ঋণের টাকা নিয়ে কী করেছেন আপনারা? রাজ্যবাসী সেটা জানতে চায়। কেন হচ্ছে না এডিসির ভিলেজ কমিটির নির্বাচন?মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চান।এডিসিকে বাদ দিয়ে আত্মনির্ভর এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা হবে না।এ দিন বিরোধী নেতা আলোচনা করতে গিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় এবং মুখ্যমন্ত্রী জনৈক ও এমডির কথা উল্লেখ করেন।বিরোধী নেতা বলেন,জনগণের বিভিন্ন ইস্যুতে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রচুর চিঠি দিয়েছি।কিন্তু দুর্ভাগ্য একটি চিঠিরও জবাব পাইনি।এই প্রসঙ্গেই তিনিও এমডির কথা উল্লেখ করে বলেন,তিনিই নাকি সবকিছু পরিচালনা করেন। বিরোধী নেতা বলেন,আপনারা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বলেছিলেন,এই রাজ্য থেকে ‘ফিক্সড পে’ শব্দটি তুলে দেবেন। অস্থায়ী বেতনে কর্মচারী থাকবে না। ছয় বছরে কোথায় হলো? রাজ্যে সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠে আসছে।এর মাধ্যমে সুশাসনে বেআব্রু চেহেরা ফুটে উঠছে।এদিন বিরোধী নেতা সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতাগুলি তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা করে বলেন,-
আলোর মধ্যেও যে অন্ধকার আছে, সেগুলো দর করতে না পারলে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা,শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা অধরাই থেকে যাবে। কোনওদিন এই স্বপ্ন পূরণ হবে না।রাজ্যপালের ভাষণের উপর সংশোধনী প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়ে এ দিন সিপিএম সদস্য শ্যামল চৌধুরীও সরকারের সমালোচনা করেন।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

15 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

16 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago