আশিষে আস্থা হারিয়েছেন সুদীপ?

 আশিষে আস্থা হারিয়েছেন সুদীপ?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি:- কংগ্রেস থেকে তৃনমূল, তৃণমূল থেকে বিজেপি,এরপর বিজেপি থেকে ফের কংগ্রেস। রাজ্য রাজিনীতিতে দল বদলুদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। একসময় নিজেকে কট্টর বামবিরোধী প্রমান করতে, কংগ্রেস দলের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দল ছেড়েছিলেন। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও দেখেছে রাজ্যবাসী। কংগ্রেস ভবনে হামলা, ভাঙচুর, সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীর ছবিতে জুতো পেটা থেকে শুরু করে বাদ ছিলো না কিছুই।


একসময় খাদে পড়ে যাওয়া রাজ্য কংগ্রেসের হাল ধরেছিলেন প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন। প্রদেশ সভাপতি হয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। প্রদ্যোতের নেতৃত্বে কংগ্রেস অনেকটাই অক্সিজেন পায়।

কংগ্রেসের ভোট শতাংশ যেখানে এক থেকে দুই শতাংশে নেমে গিয়েছিল। প্রদ্যোত কিশোর সেই ভোটকে ১৯ শতাংশে তুলে আনতে সক্ষম হন। কিন্তু দলটার নাম যে কংগ্রেস। তাই বেশিদিন কংগ্রেসে থাকতে পারলেন না প্রদ্যোত কিশোর। তাঁকে সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্য উঠে পরে লাগে, কংগ্রেসের তৎকালীন কলাকুশলীরা। ক্ষোভে, দু:খে শেষপর্যন্ত কংগ্রেস দলটাই ছেড়ে দেন প্রদ্যোত কিশোর। এরপর হাওড়া, গোমতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।

গত দুই বছর আগে তিপ্রামথা নামক নতুন জনজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল গঠন করে, রাজ্যের জনজাতিদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হন প্রদ্যোত। অল্প সময়ের মধ্যে পাহাড়ে একছত্র আধিপত্য কায়েম করতে সক্ষম হন। পরিনাম সকলের সামনে। পাহাড়ে বাম দুর্গকে তছনছ করে এডিসির ক্ষমতা দখল করে প্রদ্যতের তিপ্রামথা। শুধু তাই নয়, এই কম সময়ের মধ্যে, গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় তিপ্রামথা প্রদ্যোতের নেতৃত্বে।

অন্যদিকে, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, রাজ্য রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তাঁর সাফল্য কতটুকু? বলা যায় শূন্য। কংগ্রেস থেকে তৃনমুল হয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর, জীবনে প্রথম মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। কংগ্রেস বা তৃনমূলে থাকলে আজও সেই সৌভাগ্য হতো না। কিন্তু পদ্মবনেও বেশিদিন কাটতে পারলেন না। কেননা, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। কিন্তু, দলটার নাম যে বিজেপি, সেটা হয়ত ভুলে গিয়েছিলেন। মনে মনে হয়ত ভেবেছিলেন, কংগ্রেসের কাঁকড়া সংস্কৃতির প্রসার পদ্মবনেও ঘটাতে পারবেন। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন আর সফল হয়নি। দের বছরের মধ্যেই মন্ত্রী পদ খুইয়েছেন।

শেষে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করার আগেই, অনুগামী আশিষ কুমার সাহাকে নিয়ে ফিরে এলেন ফের কংগ্রেসে।কংগ্রেসে ফিরেই সেই পুরোন খেলায় মাতলেন। দুর্দিনে কংগ্রেসকে আগলে রাখা বীরজিৎ সিনহাকে কলকাঠি নেড়ে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে, ওই পদে বসালেন নিজের অনুচর, বলতে গেলে ছায়াসঙ্গী আশিষ কুমার সাহাকে। গোটা কংগ্রেস দলটাকেই একপ্রকার নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন সুদীপ বাবুরা। তার আগে গত বিধানসভা নির্বাচনে অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। একবার সুযোগ দেয়ার জন্য জনগনের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। এরপর তিনি রাজনীতি থেকে সন্যাস নেবেন। কিন্তু রাজ্যের জনগন তাঁর আবেদনে সারা দেয়নি। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর তিন চার মাস ঘরেই নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেন। গোটা রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীরা সন্ত্রাসের শিকার হলেও, সেই সব কর্মীদের পাশে তাঁকে আর দেখা যায়নি।

সেই সুদীপবাবু সোমবার কংগ্রেস ভবনের সামনে একটি যোগদান সভায়, প্রকাশ্যে প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মনকে তাঁর দলবল নিয়ে, কংগ্রেস দলে ফিরে আসার আহবান জানান। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসে ফিরে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ারও আহবান জানান তিনি। সুদীপের এই বক্তব্যের পর স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য রাজনীতির অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। নিজের অনুগামী এবং নিজের হাতে যাকে প্রদেশ সভাপতির পদে বসালেন, সেই আশিষ সাহার নেতৃত্বের উপর কি তাহলে সুদীপ বাবু আস্থা রাখতে পারছেন না? শুধু তাই নয়, সুদীপ বাবু নিজের ক্ষমতা এবং নিজের নেতৃত্ব নিয়েও কি তাহলে সন্দীহান?

শেষ পর্যন্ত প্রদ্যোত কে ভর করে যদি কিছু একটা হয়, এমন স্বপনই কি দেখছেন? তা না হলে, প্রদ্যোত কে কংগ্রেসে ফিরে নেতৃত্ব দেওয়ার আহবান জানালেন কেন? এই নিয়েই এখন জোর চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.