এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

উৎসব আসিয়া দরজার কড়া নাড়িতেছে কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় বিপন্ন মানুষগুলিকে ঘরে ফিরাইবার কোনও আয়োজন কিন্তু দেখা যাইতেছে না।অর্থ এই নয় যেসকল মানুষ বন্যায় ঘরদুয়ার ছাড়িয়াছিলেন তাহারা এখনও শিবিরেই রহিয়াছেন।তাহারা বাড়ি ফিরিলেও সকলে ঘরে ফিরিতে পারিয়াছেন এই কথা বলা যাইতেছে না। অস্থায়ী ঘরদুয়ার বানাইতে হইলে দরকার হয় জিসিআই শিট,পলিথিনের।দেখা গেলো সরকারীভাবে এই সাহায্যটুকুও এখনও পর্যন্ত জুটে নাই।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় লক্ষ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা নিরুপণ করা হইয়াছে চৌদ্দ লক্ষ।রাজ্য সরকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করিয়া দিলে দিল্লী হইতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা আসিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফর করিয়া গিয়াছে।আশা করা যায় তাহারাও কেন্দ্রীয় সরকারকে ত্রিপুরার ক্ষয়ক্ষতি লইয়া সার্বিকভাবে রিপোর্ট দিয়াছেন।কিন্তু মাস গড়াইয়া গেলেও বন্যা পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় কোনও অর্থ রাজ্যে আসিয়া পৌছায় নাই। অন্তত রাজ্য সরকারের তরফে এই রকম কোনও কথা কেউ শুনিতে পায় নাই।
অন্যদিকে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ হইতে আর্থিক সহায়তার সবুজ সঙ্কেত পাইয়াছে বলিয়াও শোনা বা বুঝা যাইতেছে না।রাজ্য সরকার ঘোষণা দেয় নাই বলিয়া শোনা যাইতেছে না। রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত পুনর্বাসনে কোনও কাজ শুরু করে নাই বলিয়া বুঝাও যাইতেছে না।যদিও এমন হইবার নহে।বন্যার ঘটনার পরপরই কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরাকে বন্যা পীড়িত বলিয়া ঘোষণা দিয়াছে।ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে সকল সহযোগিতায় আশ্বাস দিয়া প্রয়োজনীয় কপ্টার ও প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী এনডিআরএফের দল পাঠাইয়াছে।প্রাকৃতিক বিপর্যয় তহবিল হইতে রাজ্যকে চল্লিশ কোটি টাকা সহযোগিতাও দিয়াছে।কিন্তু এরপর আর কোনও অর্থ রাজ্যের হাতে আসে নাই, রাজ্য সরকারও কোনও কাজ শুরু করে নাই। প্রাথমিকভাবে বন্যার পর সড়কগুলিকে ধসমুক্ত করিয়া জাতীয় সড়ক সহ মাঝারি রাস্তাগুলিকে যান চলাচলের উপযোগী করিয়া হাঁফ ছাড়িয়াছে পূর্ত দপ্তর।কৃষি দপ্তরের আধিকারিকেরা দীর্ঘ সময় মাঠে কাটাইয়া অনুপুঙ্খ গ্রাউন্ড রিপোর্ট বানাইয়া ও জমা করিয়া তাহাদের দায়িত্ব শেষ করিয়াছেন।এরপর আর অগ্রপশ্চাৎ কোনও অবস্থাতেই তাহাদিগকে পাওয়া যাইতেছে না। প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহতায় সর্বাধিক ক্ষতি হইয়াছে কৃষি এবং পূর্ত দপ্তরের।
দক্ষিণ, গোমতী এবং সিপাহিজলার একাংশে ধান চাষ এই মরশুমের জন্য শেষ হইয়া গিয়াছে।এই সকল জমি ব্যাতিরেকে রাজ্যের সব কয়টি জেলাতেই জমির উর্বরা ক্ষমতার স্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়াছে।যে সকল জমি জলমগ্ন হইয়াছিল সেইগুলির জল নামিয়া গেলে দেখা গেল বালি কিংবা পলির চরা পড়িয়া জমির উপরিভাগ দুই হইতে চার ফুট নিচে হারাইয়া গিয়াছে। এই জমির উর্বরা শক্তি বা উৎপাদন ক্ষমতা ফিরাইয়া আনা এক ব্যয়সাধ্য এবং কষ্টসাধ্য কাজ।এই কাজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের একার পক্ষে সম্ভব নহে।এই কাজ করিতে হইলে সরকারের কাছ হইতে আর্থিক সহায়তা দরকার।এই সহায়তা এখনই দরকার।কারণ কাজটি জমির চরা বা বালি তুলিবার কাজ এখন হইতে শুরু না করিলে দুই মাস পর রবি শস্যের জন্যও জমি প্রস্তুত করিয়া তোলা সম্ভব হইবে না। অর্থাৎ আমন এবং রবি দুইটি
মরশুমেই কৃষককে হাত গুটাইয়া থাকিতে হইবে।
দীর্ঘ সময় জমির সহিত কৃষকের সংস্রবহীন থাকিবার অর্থ হইতেছে,কৃষক তার রোজগারের জন্য অন্য রাস্তা খুঁজিবে।যাহা রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সঙ্কেত হইতে পারে।ভারতের মতন দেশে গ্রামীণ মানুষের কৃষি ছাড়িয়া কাজের আশ্রয়ের জন্য নগরে আসিয়া ভিড় করিবার ছবি যথেষ্ট প্রাচীন।উৎপাদিত শস্যের দাম না পাইয়া কৃষক কৃষি ছাড়িতেছে।কিন্তু এই ধরনের জাতীয় চিত্রের মধ্যেও এক খন্ড ব্যতিক্রম আমরা দেখিয়াছি ত্রিপুরায়। এফসিআই কৃষকের নিকট হইতে সহায়ক মূল্যে ধান কিনিতে আসায় কৃষকেরা ক্রমে জমিতে ফিরিতে শুরু করে।ত্রিপুরার কৃষকের জমির ধান কিনিতে উৎসাহ দেখায় বেসরকারী চালকলগুলি।অর্থাৎ ত্রিপুরার ধান এক বাজার পাইয়া যায়। স্পষ্টতই কৃষি এই রাজ্যে কর্মসংস্থানের এক পথ খুলিয়া দেয়,যাহা কয়েক বছর আগেও ক্রমে সংকীর্ণ হইয়া পড়িয়াছিল।
এক সময় সমতল জমিতেও, ধানের খেতে বাবাবের চারা পতিয়া দিয়াছিল ধানচাষি। সেই অবস্থা হইতে গ্রামীণ মানুষ আবার ধান চাষে, চাষবাসে উৎসাহ দেখাইতে থাকে।কিন্তু এই বছরের বন্যা সেই কৃষি চক্রে এক বিরতি চিহ্ন দিয়া গেল।এই বিরতি যত দীর্ঘ হইবে ততই ক্ষতির সম্মুখীন হইতে হইবে রাজ্যকে।বন্যার ক্ষতচিহ্ন রাজ্যের অর্থনীতিতে স্থায়ী ক্ষতচিহ্ন আঁকিয়া দিতে পারে।অতীব সত্য এবং একই সঙ্গে নৈরাশ্যজনক ঘটনা হইলো, রাজ্যে বন্যার্ত মানুষগুলির প্রতি যদি বেসরকারী ত্রাণ বন্ধ হইয়া যায় তাহা হইলে এই পরিবারগুলির দুর্দশা আরও হাজারগুণ তীব্র হইবে। উৎসবের এই মরশুমে মানুষ যদি বন্যার্তদের ত্রাণ পাঠাইতে ভুলিয়া যায় তাহা হইলেই সমস্যা বাড়িবে।কিন্তু এই ত্রাণ তো অনেকাংশেই আবেগের এবং তাৎক্ষণিক। ইহার উপর কাঁহাতক চলিতে পারে?দরকার এখনই সরকারী ব্যবস্থা গ্রহণ। আবার ঘাটতি বাজেটের ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে একা এই কাজ কীভাবে টানিয়া লইয়া যাওয়া সম্ভব?দরকার কেন্দ্রীয় সরকারের দান, অনুদান।ত্রিপুরায় ডবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রতি মানুষের এই আশা আকাঙ্ক্ষা কিন্তু বিশাল, সহসাই আসিবে কেন্দ্রীয় দান, অনুদান।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

7 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

7 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago