Categories: দেশ

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি মিলতেই কলকাতার পুজোয় থিমের ছড়াছড়ি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বেহালা নতুন দলের এবারের থিম ‘ আশ্রয় ‘ । কর্মকর্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান , ” এবছর ৫৭ বছরের পুজো । থিমশিল্পী অয়ন সাহা । চারদিকের অশান্তি , হানাহানি , যুদ্ধ – বিগ্রহের নিশ্চিত আশ্রয় হচ্ছে মায়ের আঁচল । শৈল্পিক মাটির ঠাকুর হচ্ছে । মণ্ডপসজ্জায় কংক্রিটের টুকরো , কয়লা , কাচ ব্যবহার করা হয়েছে । ‘ শিল্পী অয়ন সাহা জানান , ‘ করোনা অতিমারি আর যুদ্ধর পরের টুকরো হয়ে যাওয়া জীবনকে একসঙ্গে করছি উৎসবের মাধ্যমে । ব্রাত্য ফেলে দেওয়া রাবিশ দিয়ে মণ্ডপ গড়ছি । আত্মপরিচয়কে ফের আবিষ্কার করা বোঝাতে দর্পণের ব্যবহার করছি । বাখারি আর কাপড়ের ব্যবহার করছি । মা দুটো আঁচল ধরে আশ্রয়ের খোঁজ দিচ্ছেন । খোলা মণ্ডপ হচ্ছে । প্রতিমার সাজসজ্জা ও গয়নায় লোহা , টালি আর ইটের ব্যবহার করা হচ্ছে । ‘ শিবমন্দির সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির ৮৬ তম বছরের থিম বিশ্বাস ‘ ।

কর্মকর্তা পার্থ ঘোষ জানান , আমাদের ভাবনা , ‘ তাঁর কৃপাতে বিনাশ হবে সমাজের অসুর । বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর । দেবদূতের নিবেদনে সমর্পণের সুর । বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর । প্রতিমাশিল্পী দীপেন মণ্ডল । আলো প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী । আলো সহযোগী সুশান্ত হালদার । গ্রন্থনা দেবদূত ঘোষঠাকুর আর সৃজনে সৌরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় । ৮১ তম বছরে সিংহী পার্কের এবারের ভাবনা ‘ নারায়ণে নারায়ণী ’ । কর্মকর্তা অভিজিৎ মজুমদার জানান , ‘ এবছর কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথকে শ্রদ্ধা জানিয়ে থিম করেছি নারায়ণে নারায়ণী । নারায়ণ দেবনাথের অসাধারণ সব কার্টুন চরিত্র হাঁদা ভোঁদা , বাঁটুল দ্য গ্রেট , নন্টে – ফন্টে দিয়ে মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে । চন্দননগরের লাইটের মাধ্যমে কার্টুন চরিত্র তুলে ধরা হবে । সাবেকি একচালা প্রতিমা গড়ছেন প্রদীপরুদ্র পাল । মণ্ডপ পরিকল্পনা মিঠুন দত্তের । কাঁকুরগাছি মিতালি সংঘের ৮৬ তম বছরের থিম ‘ দুর্গোৎসব ‘ । কর্মকর্তা নীলকমল পাল জানান , ‘ কাঠামো পুজো থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গাপুজোর প্রতিটি আচার অনুষ্ঠান পটচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে । মণ্ডপের ঢোকার মুখে থাকবে কাঠের বাক্সের তৈরি ২ টো তোরণ , তার মধ্যে খড়ের তৈরি ১ টা দেবীমূর্তি ।

শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায় দুর্গাপুজোর আভিজাত্য ও জৌলুসের বার্তা পৌঁছে দিতে প্রচুর শঙ্খ ও ঘণ্টার ব্যবহার করছেন । সনাতনী ডাকেরসাজের প্রতিমা । বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির ২২ বছরের নিবেদন ‘ চুপকথা ’ । কর্মকর্তা পরিমল দে কাব্য করে বলেন , দেখুন দেখুন সবই দেখুন / চোখ দুখানি খুলে । বললে কথা বিপদভারি চড়িয়ে দেবে শূলে । অনেক কথা যায় না শোনা ফিসফিসিয়ে বলা / যদি তুমি চেঁচিয়ে ওঠো ধরবে টিপে গলা । যেই না তুমি রোলার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলে সব / আমরা সে শব টানিয়ে দিয়ে সাজাবো উৎসব । / মুখে কোনো রা করি না / বুকে রাখি তেজ । / চুপের ওজন বড্ড বেশি / নাড়িও না লেজ । / খেলতে পারি খেলাতে পারি উঁচু থেকে নীচু , মুখে এবার আঙুল রেখে বলব না আর কিছু / বাকিরা সব বলুক কথা আমরা এবার চুপ । / কুলুপ এঁটে দেখতে এসো চুপকথাদের রূপ । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের ৮০ তম বছরের থিম ‘ তাণ্ডব ’ । কর্মকর্তা সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় জানান , সমুদ্রের ঢেউ যেমন প্রতিনিয়ত ধাক্কা খায় বালির চরে তেমনই মানুষের জীবনও নিয়ত ভাঙাগড়ার পাকেচক্রে আটকে রয়েছে । হিন্দুশাস্ত্রে বর্ণিত তাণ্ডব এমনই এক বৈজ্ঞানিক সত্য , মহাবিশ্বের নিরন্তর প্রক্রিয়া যা অনবরত ঘটে চলেছে দৃষ্টির অগোচরে আর আমরা তা জানছি ঐশ্বরিক প্রেক্ষিতে । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের থিমশিল্পী কৃশানু পাল , আলোকশিল্পী আশিস সাহা , আবহ আশু চক্রবর্তী । রাজডাঙা নব উদয় সংঘ এবার দূষণরোধের বার্তা দিচ্ছে ‘ অশনি সংকেত ‘ থিমের মাধ্যমে । শিল্পী মলয় শুভময় ।

কর্মকর্তা সুশান্তকুমার ঘোষ জানান , ‘ প্রত্যেক বছর সমুদ্রে বিশাল পরিমাণে টন টন প্লাস্টিক জমা হচ্ছে । এটা সারা বিশ্বের সামনে বিশাল এক সমস্যা । প্রায় ৮০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে গেছে । মূলত প্লাস্টিক বন্ধ করার বার্তা দিচ্ছি । চট্ট , বাঁশ , বাখারি , হোগলার মতো ইকো ফ্রেন্ডলি জিনিস দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে । মাটির সাবেকি প্রতিমা , চালচিত্র ও সাজসজ্জা , অস্ত্র সব পাটের হচ্ছে । ‘ বড়িশা ক্লাবের এবারের নিবেদন সাঁঝবাতি ’ । কর্মকর্তা অনিমেষ চক্রবর্তীর কথায় , ‘ অমঙ্গলের কালো মেঘ আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে । অতিমারির বিপন্নতার মাঝেই বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা । চলছে প্রাণহানি ও সম্পদের বিনাশ । লোভ , হিংসা , মিথ্যা রেষারেষিতে জড়িয়ে মানুষ আজ বিবেকহীন । তাই এই চরম দুর্গতি থেকে মুক্তি পেতে আজ আমরা দেবী দুর্গার শরণাপন্ন । সংসারে সবার মঙ্গল কামনায় মা যেমন সন্ধেয় সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে গৃহদেবতার কাছে প্রার্থনা জানান তেমনই হৃদয়ের পূর্ণ আকুতি দিয়ে মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা পাপমুক্ত পৃথিবী । পুরো পরিকল্পনা ও সৃজনে শিল্পী রিন্টু দাস । ” ৭৮ তম বছরে খিদিরপুর ২৫ পল্লি ক্লাবের পুজোর এবারের ভাবনা নিরন্তর ‘ । কর্মকর্তা কালী সাহা জানান , ‘ মানুষের জীবন এক বয়ে যাওয়া নদীর মতো । সময়ের হাত ধরে জীবন নদীর দু’পাড়ে স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার পলি জমা হতে থাকে । এরমধ্যে দিয়েই বয়ে চলে জীবননদী ।

চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছনোই লক্ষ্য আমাদের প্রত্যেকের । এই যাত্রাপথে আমরা নিরন্তর খুঁজে চলেছি সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে । আমরা দেখতে পাই জড় ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে বারবার প্রাণশক্তি আসে আবার সময়ের সঙ্গে ফিরে যায় । এই নিরন্তর যাত্রাকে মণ্ডপে তুলে ধরেছেন দীপ দাস ও ঈশিকা চন্দ্র । প্রতিমাশিল্পী সৈকত বসু । ‘ . ‘ খিদিরপুর পল্লি শারদীয়া’র এবারের ভাবনা ‘ ব্ল্যাকহোল ‘ । কর্মকর্তা সুদীপ রায় জানান , ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে অপার বিস্ময় হল কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল। রহস্যময় কৃষ্ণগহ্বরে লুকিয়ে আছে সৃষ্টির আদি রহস্য। সবকিছুকে মুহূর্তের মধ্যে গ্রাস করে নেয় সেই কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে বিরাজকরা আদিশক্তি মহামায়া । আমাদের জীবনেও নৈরাশ্যের অন্ধকার কখনোসখনো চেতনাকে গ্রাস করতে চায় । অথচ আত্মশক্তির আলোয় সেই আঁধার দূর করা সম্ভব । আমাদের শিল্পী বিশ্বনাথ দে । মেকানিজম বিশেষত যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ওপর কাজ হচ্ছে । অফ হোয়াইট রঙের প্রতিমা । ৭৮ বছরে বেহালা ক্লাব সর্বজনীন দুর্গোৎসবের নিবেদন ‘ আবুলিশ ‘ । সৃজনে অদিতি , প্রতিমাশিল্পী দীপেন মণ্ডল ও অদিতি , আবহ অর্পণ ঠাকুর চক্রবর্তী । কর্মকর্তা সায়ন্তন ভট্টাচার্য জানান , ‘ আমরা আমাদের ছোটোবেলায় বাড়ির , বয়োজ্যেষ্ঠদের মিঠেকড়া শাসন এড়িয়ে থেকে ফিরেই মাঠে খেলতে চলে যেতাম । প্রতিটি বিকেল উঠত কচিকাঁচাদের কলরবে ।

কিন্তু আজকের শিশুদের শৈশব বড্ড বেশি যান্ত্রিক , নিয়মের বেড়াজালে বন্দি । ওরা বাঁধা পড়েছে মা – বাবার ইচ্ছেপূরণের গণ্ডিতে । অর্ধচন্দ্রাকার মণ্ডপ হচ্ছে । ঝাড়গ্রাম থেকে আনা বিশেষ ধরনের ঘাস দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে । মণ্ডপের ভেতরে শিশুদের নানান মডেল থাকবে । শিশুরা যেমন বাবা মায়ের ইচ্ছার বোঝা টেনে চলেছে তা ফুটিয়ে তোলার জন্য মণ্ডপের বাইরে ১ টা ভ্যান থাকবে । মা দুর্গা বসে থাকবেন । মা যেন সন্তানদের গল্প শোনাচ্ছেন এমন ভঙ্গিমায় বসে থাকা মা দুর্গার কোলে থাকবে গণেশ ও কার্তিক । দু’পাশে লক্ষ্মী ও সরস্বতী দাঁড়িয়ে থাকবে । ট্যাংরা ঘোলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের নিবেদন ‘ সৃষ্টির জন্যই ধ্বংস ‘ । কর্মকর্তা সমীর ঘোষ জানান , “ পুরাণমতে দেবাদিদেব মহাদেব হলেন স্বয়ম্ভু । একাধারে সৃষ্টিকারী অন্যদিকে ধ্বংসকারী হলেন শিব । মণ্ডপের ঢোকার মুখে দ্বিখণ্ডিত পৃথিবীর মাঝে শিবের তাণ্ডবনৃত্য ও ধ্বংসের ছবি ফুটে উঠবে। মূল মণ্ডপে শঙ্খশোভিত শিবলিঙ্গ । কমলেশ সেনগুপ্ত , প্রতিমাশিল্পী পরিমল পাল । ‘ সেলিমপুর পল্লির এবারের থিম বন্ধন । কর্মকর্তা পার্থ রায় জানান , ‘ মানুষের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগ এখন কমে গেছে । বিষয় ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপে । শৈল্পিক ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা হচ্ছে । ভাবনা অনির্বাণ দাস , প্রতিমা গড়ছেন নব পাল । ‘

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

16 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

16 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

17 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

2 days ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

2 days ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

3 days ago