ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা
সন্ত্রাস ও পাকিস্তান আগামীদিনে এই ইস্যুতে দিল্লীর অবস্থান কি হতে চলেছে, সেটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল গতকাল। আরব সাগরের উপকূলে গোয়ায় সাংহাই সমন্বয় মঞ্চে প্রথমে পাক বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সম্ভাষণ বিনিময়ের শরীরী ভাষা এবং পরে মঞ্চে সমস্ত বিদেশি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কূটনৈতিক শেল নিক্ষেপ করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী তা নানা দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ সম্মেলনে আয়োজক দেশ হিসাবে ভারত, আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে যে কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বিনিময় করেছেন তাতে পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময়ের যে ভঙ্গি সেটা ছিল লক্ষণীয়। অন্যদের বেলায় যেটা দেখা গেছে, সেটা পাক বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন করতে দেখা যায় নি ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে। বরং বিলাওয়ালকে মঞ্চে আসতেই দেখেই দূর থেকে হাতজোড়া করার ভঙ্গিতে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অনেকটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাধ্যবাধকতার মতোই নিয়ম রক্ষার দায়িত্ব পালন করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। শুধু তাই নয়, বিলাওয়ালের প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রীর শরীরী ভাা। এবং মুখাবয়বের যে ছবি ভাইরাল হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট, পাক বিদেশমন্ত্রীকে ভারতের তরফে কোন গুরুত্ব দিতেই রাজি ছিলেন না জয়শংকর। উভয়ের সাক্ষাতের এই প্রথম পর্বের পর সম্মেলন মঞ্চেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের নাম না করে যে নিরবচ্ছিন্নভাবে একের পর এক শব্দবাণ বিলাওয়ালকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে গেছেন তা সাম্প্রতিক কালে কূটনৈতিক মঞ্চে সচরাচর দেখা যায়নি। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সময় সুযোগ পেলেই ভারত যে কোন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে একহাত নেয় এটা নতুন কোন বিষয় নয়। শুক্রবার গোয়ায় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মঞ্চেও আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে, সন্ত্রাসবাদের রাস্তা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যে আর মেনে নেওয়া হবে না সেটা বলতে গিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এসসিও’র মূল আদেশ নামায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাড়াইয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আফগানিস্তানে মাদকের চোরা কারবার থেকে শুরু করে মহিলা ও শিশু পাচারের বাড়বাড়ন্তের উপর দিল্লী যে এখন কড়া নজরদারি রাখছে সেটাও জানিয়ে দিলেন। আর তা বলতে গিয়ে ভুট্টো কিংবা পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ না করেই সরাসরি চিরশত্রুর দিকেই ইঙ্গিত করে সন্ত্রাসের মুখপাত্র হিসাবে তাদের চিহ্নিত করেন। পাল্টা বিলাওয়াল অবশ্য কাশ্মীর থেকে ২ বছর আগে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে দিল্লীর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। লক্ষণীয় হল, বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলন ও বৈঠক শেষ হওয়ার পর ফের সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় আক্রমণে নামলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, আর ঘুমোনোর সময় নেই। এবার ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। ৩৭০ এখন ইতিহাস। যারা এটা এখনও হজম করতে পারছে না তারা যত তাড়াতাড়ি এটা মেনে নেবে ততই তাদের মঙ্গল। এরপরই সুর চড়িয়ে জয়শংঙ্কর পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলে বললেন, কাশ্মীর নিয়ে ওদের সাথে কথা বলার আর কিছু নেই। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হলে একটা ইস্যুই এখন শুধুমাত্র বাকি। সেটা হল পাকিস্তান কত তাড়াতাড়ি অধিকৃত কাশ্মীর থেকে তাদের দখলদারি হটাবে। এটা এখন দিনের আলোর মতোই সত্য, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গোটা বিশ্বে পাকিস্তানের উপর আর কেউ ভরসা রাখতে চায় না, যেমনটা বর্তমানে তলানিতে গেছে পাকিস্তানের জমানো বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারের অবস্থা, ঠিক তেমনটাই সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান নড়বড়ে। আর দিল্লী এই মুহূর্তে এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই আরও দুর্বার গতিতে পাকিস্তানকে বিশ্বের মঞ্চে একঘরে করতে চাইছে। এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বিগত বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। যে কারণে ভারত এখন যে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে জোর গলায় বলে চলেছে, সন্ত্রাসবাদের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা কখনই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করতে বসে না। হয় সে নিজেই নিজের আত্মরক্ষা করে নয়তো, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দিল্লীর এই অবস্থান যে আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।