ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার ভারত সফরে রয়েছেন জো সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বৈঠকেও বসলেন মোদি ও বাইডেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ভারত-মার্কিন উভয় রাষ্ট্রের পক্ষ যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে আধুনিকতম প্রযুক্তি, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা গবেষণায় সহযোগিতা, ভারত-মার্কিন পরমাণু সুসম্পর্ক ও উন্নয়নের পাশাপাশি স্মল মডিউলার পরমাণু চুল্লী বানানোর ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বিষয়টিও যৌথ বিবৃতিতে উঠে এসেছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই যৌথ বিবৃতিতে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল, গণতন্ত্র- মানবাধিকার স্বাধীনতা এবং বহুত্ববাদ এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবাইকে নিয়ে একসাথে চলা এবং সবাইকে সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই নিজেদের অঙ্গীকারের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে আরও একবার ব্যক্ত করেছে। ভারত-মার্কিন যৌথ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্থান পাওয়া বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।কেন তাৎপর্যপূর্ণ তা বুঝতে গেলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২৩ জুন তাঁর ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফরে যখন আমেরিকা যান, তখন ঠিক সফরের প্রাক্কালে প্রভাবশালী মার্কিন ওয়াল স্ট্রীট জার্নালকে প্রধানমন্ত্রী মোদি এক সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারের সময় তাকে ভারতের নাগরিক সমাজ, সংখ্যালঘু, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সংবাদ মাধ্যম সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোরতা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। পরে ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে কোন মন্তব্য জানাতে চাননি। শুধু তাই নয়, বহুত্ববাদ, মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে মোদি সরকারের শাসন আমলে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমী দুনিয়া একাধিকবার সংশয় প্রকাশ করেছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিপুল সংর্ধনা পেয়েছিলেন, তখনও বেশকিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। খোদ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গলায় ও এই ইসগুলো নিয়ে সমালোচনার সুর ধ্বনিত হতে শোনা গিয়েছিল। দেখা গেছে, মোদির তৎকালীন মার্কিন সফর চলাকালীন সময়েই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের সদস্যরা ‘কংগ্রেস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’-এর প্যাডে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে মূল স্বাক্ষরকারী ছিলেন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং প্রমীলা জয় পাল। ওই চিঠিতেই আরও সই করেছিলেন উচ্চকক্ষ সিনেটের ১৮ জন সদস্য এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৫৭জন সদস্য। লক্ষণীয় বিষয়টি হলো, চিঠিতে সেদিন যারা স্বাক্ষর করেছিলেন তারা সবাই হলেন শাসক ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য। চিঠিতে সেদিন স্বাক্ষরকারীরা বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সুসম্পর্ক এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা তাকে পূর্ণভাবে সমর্থন করে মার্কিন কংগ্রেস। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর কথাবার্তা হওয়া উচিত সবসময় খোলামেলা, স্পষ্ট এবং ভনিতাহীন।এই প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সেদিন মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ধর্মীয় ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধিকার, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বহুত্ববাদ হল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল ধারক, তাই এই সমস্ত মূল্যবোধকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই হল মার্কিন সরকারের মূল লক্ষ্য। এখানে শত্রু কিংবা মিত্র কোন ভেদাভেদ থাকা বাঞ্ছিত নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তিকে দুই দেশের সুসম্পর্ক দৃঢ়, মজবুত এবং স্থায়ী করার প্রশ্নে খোলামেলাভাবে উত্থাপন করতে হবে। তাই আগামীদিনে যখনই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন আলোচনায় সুযোগ-সময় হবে তখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি যেন এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের প্রথম ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করেন। লক্ষণীয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিকটি হলো, মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথমবারের মতো ভারতে পা রেখেই জোবাইডেন শুক্রবার রাতে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর ভারত-আমেরিকার যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ— এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া দুই দেশের সাফল্যের জন্য জরুরি এবং উভয় দেশের সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত করার লক্ষ্যে এই বিষয়গুলির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জি-২০ সম্মেলনে এসে ভারত-মার্কিন যৌথ বিবৃতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি স্থান পাওয়া যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত অর্থপূর্ণ ঘটনা সেদিকেই ইঙ্গিত করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কার্যত বহুত্ববাদ, অসহিষ্ণুতা এবং মানবাধিকারের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে যা বরাবরই একাংশ পশ্চিমী রাষ্ট্রের চোখে মোদির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই বিষয়টিই বাইডেনের উপস্থিতিতে ভারত-মার্কিন যৌথ বিবৃতিতে স্থান পাওয়া যে একটা ভনিতাহীন, অর্থপূর্ণ,ইঈিতবাহী র্বাতা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ভারতীয় সেনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের…

15 hours ago

বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক মোদী সরকারের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র।২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা পরপাকিস্তানের বিরুদ্ধে…

15 hours ago

শূন্য কলস!!

শূন্য কলসি বাজে বেশি,আশৈশব এই বাক্যটি পাঠ্যে পড়ে বেড়ে উঠেছি আমরা সকলে।এখন পাক ফৌজির হম্বি…

20 hours ago

বাতিল করলেন তিন দেশের সফর প্রধানমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মে মাসের মাঝামাঝি ক্রোয়েশিয়া, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র…

21 hours ago

পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানে ভারতের হামলায় মৃত বেড়ে ২৬। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জানিয়েছেন,…

21 hours ago

কৃষকের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান: রতন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :;মঙ্গলবার সারা রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের…

22 hours ago