ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা!!
গত আগষ্ট মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগষ্ট থেকে ২২ অক্টোবর এই প্রায় তিন মাসে, সংখ্যালঘুদের প্রধানত হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় হিংসা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও সরকারীভাবে এ পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৮৮টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ৭০ জনকে। এই ছোট পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত হামলা ও নির্যাতনের বাস্তব চিত্র আর সরকারী নথিবদ্ধ ঘটনার মধ্যে ব্যবধান কতটা।কারণ এই পরিসংখ্যানটি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মর্জিমাফিক তথ্য নয়।এ হল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দেওয়া তথ্য।স্বাভাবিক কারণেই এই পরিসংখ্যানকে কোনভাবেই অস্বীকারের সুযোগ নেই। একদিকে সেদেশের মাটিতে বাস্তবে সংঘটিত অপরাধের তুলনায় সরকারী নথিতে ঘটনাক্রম যখন অনেকটাই নিম্নমুখী, ততোধিক উদ্বেগের বিষয় হলো,৮৮টি হিংসা ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের সংখ্যাটা হলো ৭০ জন।এই যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র, তখন গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।সেই বৈঠকে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিক্রম মিশ্রি।কিন্তু তাতেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির যেমন বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি,তেমনি সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত নির্যাতন বন্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তরফেও কোন ধরনের কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।এই পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার দিল্লীতে সংসদের অধিবেশনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে যে বার্তা দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। জয়শংকর সংসদে বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের প্রতি সেই দেশের আচরণ নিয়ে শুধু উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথাই শুধু প্রকাশ করেননি, পাশাপাশি এই বার্তাও রেখেছেন যে,বাংলাদেশ নিজের প্রয়োজনেই সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে ভারত সরকার বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের নদী সাঁতার কেটে পার হয়ে একজন ছাত্রী বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশের ঠিক দুইদিনের মাথায় বিদেশমন্ত্রীর সংসদে
এই বক্তব্য যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।কারণ কয়েকদিন আগে বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশ সফর এবং বৈঠককালে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও এতটুকুও বদলায়নি পরিস্থিতি।মন্দিরে হামলা ভাঙচুর থেকে হিন্দুদের উপর নির্যাতন কোন কিছুই থামেনি।মিশ্রির সঙ্গে বৈঠকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হামলার বিষয়টি বেমালুম অস্বীকারই করে গিয়েছিল বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।কিন্তু বিদেশ সচিবের সফরের পরই সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার কথা স্বীকার করে তথ্য পরিসংখ্যান জানায় বাংলাদেশ।এবার সংসদে জয়শংকরের বক্তব্য সেইদিক থেকে যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী তা বলা যায়।কারণ বাংলাদেশের
মানুষের সঙ্গে ভারত সরকার সুসম্পর্ক গড়তে চায় এই কথাটা নয়াদিল্লী বারবার ঢাকাকে বলার চেষ্টা করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে কোন ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা কিংবা কোন নির্দিষ্ট সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না সেকথাও দিল্লী বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু ঢাকায় ভারত বিদ্বেষের হাওয়া থামার নাম তো দূরের কথা বরং দিন যত যাচ্ছে সেই বিদ্বেষ ও বিষ বাতাস আরও তেজি হচ্ছে।লক্ষণীয় হল, ও পারের কিছু রাজনৈতিক দল এই হাওয়াকে যেমন ইন্ধন দিচ্ছে তেমনি ক্রমাগত আক্রমণের নিশানা হিসাবে দিল্লীকে বেছে নিচ্ছে।তাই এখনও নয়াদিল্লী বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্যা ও দূরত্বকে কূটনৈতিক স্তরেই যে সমাধান করতে চায় সেটারই বারবার চেষ্টা করে চলেছে ভারত।তাই সংখ্যালঘুদের
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি সেখানে শান্তি স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের উপরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জোর দিয়েছে দিল্লী।আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের তরফে
একচেটিয়া তিক্ততা সৃষ্টি করে চললেও ভারত কিন্তু এখনও বাংলাদেশের জন্য দরজা যেমন খুলে রেখেছে, বাণিজ্য যেমন জারি রেখেছে, তেমনি সহিষ্ণুতার মধ্য দিয়েই পরিস্থিতি ও পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে চলেছে।তাই নিজের স্বার্থেই যে ইউনুস সরকারকে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করে দ্রুত পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ। আরোপ করতে হবে-তারই বার্তা দিল দিল্লী।এই বার্তার একটাই অর্থ আগামীদিনে বাংলাদেশের উপর দিল্লীর নজর আরও সজাগ থাকবে। তাই বাংলাদেশকেই স্থির করতে হবে,তার আগামী পথ চলা কী হবে।