ইনসাফ নেহি মিলা!!

 ইনসাফ নেহি মিলা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নবইয়ের দশকে বলিউডে একটি হিন্দি ছবি রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত ‘দামিনী’।সেই ছবিতে আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল। সেই আইনজীবী চরিত্রের একটি বিখ্যাত সংলাপ ছিল- তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ মিলতি রহি হ্যায়।লেকিন ইনসাফ নেহি মিলা মাই লর্ড।
প্রায় ৩৫ বছর আগের হিন্দি সিনেমার একটি সংলাপ, আমাদের দেশে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার ঘটনা এখনও এতটুকুও যে হেরফের হয়নি সেটা নতুন করে বলার অবকাশ নেই। আদালতের মামলার এই দীর্ঘসূত্রী পরিণামের কারণে এক-একটি মামলা প্রায় ২০ বছর, ২৫ বছর ধরে চলছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের তথা দেশের বিচার ব্যবস্থার নট নড়নচড়ন।মাত্র কিছুদিন আগেই গত জুন মাসের শেষ দিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় কলকাতায় এসেছিলেন হাইকোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষের একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে। তখন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন- এলাহাবাদে হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে আমি এটা দেখেছি, একজন বার সদস্যের মৃত্যু হলে তার জন্য আদালতের সারাদিনের মতো কাজ বন্ধ রেখে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।কখনও কখনও এও দেখতাম, বারের সদস্যরা বলতেন, কোনও বিচারবিভাগীয় কাজও নাকি সেদিন করা যাবে না।প্রধান বিচারপতি আক্ষেপ করে বলেন- কেন এ রকমটা হবে? বারের একজন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে তার জন্য গোটা সমাজকে তো ভুক্তভোগী করা ঠিক না। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সবার ভেবে দেখা দরকার।
দেশের প্রধান বিচারপতি বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা সম্পর্কে যে প্রসঙ্গটির কথা উল্লেখ করেছিলেন, তা শুধু একটা দিক মাত্র।এর বাইরেও নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ প্রলম্বিত করা হয়। কখনও আইনজীবীর অনুপস্থিতি, কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে মামলাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় দিনের পর দিন মামলা মুলতবি হচ্ছে।এর ফলে মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক বিচার পাচ্ছেন না।আর সঠিক সময়ে সঠিক বিচার না পাওয়া গেলে তা কার্যত বিচারের নামে আরেক ধরনের প্রহসনেই পরিণত হয়।আসলে তারিখের ফাঁসে দেশের বিচারব্যবস্থা যে বন্দি হয়ে আছে, আর এর কারণে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের যে দমবন্ধকর অবস্থা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের জন্য অনেক উপায়, উদ্যোগ, কৌশল অবলম্বন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।যদিও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল দেশের বিচারব্যবস্থার দুর্নাম ঘোচাতে, আদালতের মামলার পাহাড় কমাতে অনেকগুলো দাওয়াইয়ের কথা বলেছেন।কিন্তু মন্ত্রীর এই উদ্যোগের মধ্যেই দেশের সামনে এলো বিচারব্যবস্থার উদ্বেগজনক এক পরিসংখ্যান।এই পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে এমন প্রায় ৬২ হাজার মামলা জমে আছে যেগুলি অন্তত ৩০ বছরের পুরনো।এর মধ্যে এমন চারটি মামলা এখনও আদালতে ঝুলে আছে যেগুলি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫ বছরের মাথায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।অর্থাৎ ১৯৫২ সাল থেকে ঝুলে থাকা এই চারটি মামলার বয়স এখন ৭২ বছর।এই পরিসংখ্যান দেখে একবার ভেবে দেখা দরকার দেশের বিচারব্যবস্থার গতি কোন্ মাত্রায় এগোচ্ছে।আর গোটা দেশে সব হাইকোর্ট মিলিয়ে যদি মোট মামলার সংখ্যা উল্লেখ করতে হয় তবে তা ৫৮ লক্ষ ৫৯ হাজার।এর মধ্যে ৪২ লক্ষ ৬৪ হাজার দেওয়ানি মামলা।আর ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার।আর সুপ্রিম কোর্ট, সমস্ত হাইকোর্ট এবং দেশের সব জেলা আদালত মিলিয়ে যদি মামলার সংখ্যা ৫ কোটির বেশি।এতগুলো কথা বলতে হলো একটাই কারণে, মাত্র গত সপ্তাহে দিল্লীতে জেলাস্তরের বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত এক জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু যখন একদিকে দেশে জমে থাকা মামলার এই এভারেস্ট উচ্চতার স্তূপীকৃত পাহাড় সংস্কৃতি বদলের কথা বলছেন, তখনই প্রকাশিত বিচারব্যবস্থার মামলার এই সর্বশেষ পরিসংখ্যানের পরিণতি কী হবে সেটা ভেবে ভেবেই দেশবাসীর আঁতকে ওঠার অবস্থা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.