ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!
দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির সাথে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। গত ১০ বছর ধরে দিল্লীতে ৫ বছর আগের আম আদমি পার্টির সরকার। এর আগে টানা পনেরো বছর দিল্লীতে রাজত্ব করেছে কংগ্রেস। এর আগে ছিল বিজেপি। সেই নিরিখে বিজেপি ২৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। তাই এবার বিজেপি কোমর বেঁধে ভোটের ময়দানে নেমেছে আপ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে। এই আপ সরকারকে নাস্তানাবুদ করতে গত পাঁচ বছর ধরে কম চেষ্টা করেনি বিজেপি। কখনও লে. গভর্নরকে দিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা, তো কখনও দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নেবার কেন্দ্রের অপচেষ্টা, সর্বশেষ আবগারি দুর্নীতি মামলায় একের পর এক আপ নেতাকে গ্রেপ্তার। আপের মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন থেকে মণীশ সিসোদিয়া, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরও আগে গ্রেপ্তার করা হয় আপের অপর সাংসদ সঞ্জয় সিংকে। কিন্তু কাউকেই জেলে বন্দি রাখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গত লোকসভা ভোটের মুখে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও নির্বাচন চলাকালীন তাকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সাময়িক ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কিছুদিন আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। এরপর মুখ্যমন্ত্রী হন আপ নেত্রী অতীশী যার নেতৃত্বে এবার দিল্লীতে ভোটে লড়ছে আপ। সুতরাং আপ এবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির যে বর্শাফলার মুখে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজেপি এবার বিধানসভা নির্বচনের মুখে আপকে দুর্নীতি সহ নানা ইস্যুতে চেপে ধরেছে। অন্যদিকে, তৃতীয় শক্তি হিসানে রয়েছে কংগ্রেস। গত লোকসভা নির্বাচনে এই দিল্লীতে সাতটি আসনে কংগ্রেস এবং আপ জোট করে ইন্ডিয়া ব্লকের ব্যানারে ভোটে লড়েছিল কিন্তু ফলাফল বিজেপির অনুকুলে গেছে।বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লীর সাতটি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জয়ী হয়েছে। পরবর্তীতে ইন্ডিয়া জোটের ২ শরিক কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং শেষপর্যন্ত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। দু’দলই আলাদা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে শেষপর্যন্ত বিজেপির সুবিধা হয় কিনা তাই দেখার এখন। এদিকে, আপ এই অবস্থায় কংগ্রেসকে বিজেপির দোসর হিসাবে চিহ্নিত করেছে। কংগ্রেস এবারের নির্বাচনে বেজায় আক্রমণ করছে আপ সরকারকে। তেমনি কংগ্রেস আক্রমণ করছে বিজেপিকেও। এই অবস্থায় দিল্লীতে এবার ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে উঠেছে। সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বেজায় আক্রমণ করেছেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তার ভাষায় নরেন্দ্র মোদি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালে মধ্যে মিল রয়েছে। ২ জনই মিথ্যা কথা বলতে সিদ্ধহস্ত। তারা উভয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন। পরে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেন না।দিল্লীতে ভোট জমে ওঠার আরও একটি কারণ রয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য শরিক যেমন তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা আম আদমি পার্টিকে সমর্থন করেছে। আপ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপিকে সাহায্য করার অভিযোগ তুললেও কংগ্রেস তাতে আমল দিচ্ছে না। কংগ্রেস এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ এবারের নির্বাচনে।একসময় শীলা দীক্ষিতকে দিল্লীতে মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছিল। শীলা দীক্ষিত দিল্লীতে যে উন্নয়ন যজ্ঞ করেছিলেন তাতে বেশ বাহবাও কুড়িয়েছিলেন। শীলা দীক্ষিতের সেই মডেলকে এরপর আপ গ্রহণ করে দিল্লীতে। গত দশ বছরে দিল্লীতে আপ স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ব্যাপক পরিকাঠামো গড়েছে। দিল্লীর শিক্ষা ব্যবস্থা গোটা দেশে মডেল। কিন্তু এরপরও বারবার আপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিজেপি। আবগারি দুর্নীতি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি শিসমহল নির্মাণ সব ক্ষেত্রেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিতে কোনও কসুর বাকি রাখেনি বিজেপি। এই অবস্থায় আপ এরপরও দিল্লীর ভোটে বাজিমাত করতে পেরে পরপর তিনবার জয়ী হয় তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে দিল্লীর মানুষ সত্যিকার অর্থে বাহাদুর। অন্যদিকে, বিজেপি এবার আপকে হটাতে চাণক্য নীতি গ্রহণ করেছে। শ্যাম, দাম, দণ্ড ভেদ- সব নীতিই গ্রহণ করে চলেছে বিজেপি। তাই এবার দেখার, বিজেপি দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে পারে কিনা। অন্যদিকে, কংগ্রেসেরই বা ভূমিকা থাকে। কংগ্রেস কি দিল্লীতে কিংমেকার হতে যাচ্ছে?