গত এক পক্ষকালের দুইটি ঘটনা ভারত দেশের মানুষের – আত্মঅহমিকা , আত্মমর্যাদার সামনে দুইটি বিপরীত পথ দর্শাইতেছে । আমরা কোন দিকে যাইতেছি , কোন পথে আগাইতেছি এই লইয়া প্রশ্ন আসিয়া দাঁড়াইতেছে । এই প্রশ্ন বড় গভীর , বড় উদ্বেগের । আমরা সতত বিশ্বাস করি -ভারত আমার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে । আজ হইতে আট বৎসর আগে এই প্রতিশ্রুতিতে মোদি বলিয়াছিলেন , হামে ঝুকনে নেহি দুঙ্গা । আজ তাহার প্রধানমন্ত্রিত্বের আট বর্ষ পূর্তি চলিতেছে দেশ জুড়িয়া , ইহা যেন স্বাধীনতার অমৃত উৎসবের সূচনা বা কোনও রাজসূয় যজ্ঞের প্রস্তুতি । এই প্রস্তুতিপর্বে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের যে অবস্থা তাহাতে মোদির প্রতিশ্রুতি ‘ হামে ঝুকনে নেহি দুঙ্গা’র ব্যঞ্জনা হারাইয়া গিয়া যেন ‘ হাম ঝুকেঙ্গে নেহি’র সমতুল রসাত্মক প্রহসন ধর্মী বিনোদন তৈয়ার করিতেছে দেশবাসীর জীবনে । প্রথম ঘটনা কোয়াড বৈঠকের । আন্তর্জাতিক সহযোগের এই বৈঠকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উপেক্ষা করিতে চাহিয়াছিলেন সর্বসমক্ষে । ইহার কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান আমেরিকার পছন্দ নহে ।
আমেরিকা চাহিয়াছিল , ভারত এই যুদ্ধে রাশিয়ার হামলাবাজির নিন্দা করে , রাষ্ট্র সঙ্গে নিন্দা প্রস্তাবে সমর্থন জানায় । কিন্তু ভারতের চরিত্রগত এবং পরীক্ষিত বন্ধু দেশ রাশিয়ার প্রতি নিন্দা যেমন নয়াদিল্লীর পক্ষে সম্ভব নহে তেমনি ভারত তাহার জোট নিরপেক্ষ চরিত্রে কখনই যুদ্ধের পক্ষে নহে । দেশের অভ্যন্তরে মোদি জমানা ভারতকে মারকূটে চরিত্রের বীররসে রাঙ্গাইতে চাহিয়া বরাবর নেহরু ইন্দিরার কূটনীতির সমালোচনা করিলেও ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে শ্যাম কূল রাখিতে যাইয়া শেষ অবধি বরাবরের জোট নিরপেক্ষতার পথই ধরিতে হইলো । এই পথেই বিশ্বের সামনে গ্রহণযোগ্যতাও পাইলো ।পূর্বসূরীদিগের এই রক্ষাকবচেই কোয়াড সম্মেলনে আপাত উপেক্ষা আর অপমানের জবাব দিতে পারিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । আমেরিকার দাদাগিরিকে অস্বীকার আর ইউরোপকে দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়া মোদি দেশের সম্মান বাড়াইয়াছেন , স্বাভিমানী ভারতবাসীর সম্মান বাড়াইয়াছেন । কিন্তু হায় , সেই আত্মপ্রসাদ লইয়া আমাদের মাতামাতি করিতে সময় দেওয়া হইলো না ।
ক্ষণিকের মধ্যে আরব , উপসাগরের এক নিকষ কালো মেঘ আসিয়া আমাদের সহাবস্থান আর সৌভ্রাতৃত্বের গৌরবকে আচ্ছন্ন করিল । দেশে গত আট বৎসর কাল ধরিয়া ইসলামফোবিয়া যে মতে ঝাকিয়া বসিয়াছে এবং দাঁত নখ খিঁচিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লইয়াছে , ইহাকে সাধারণ ভারতবাসী হিন্দুরাষ্ট্র বানাইবার প্রয়াস বলিয়াই ভাবিতেছি । আমাদের এই ভাবনা লইয়া ভিন দেশের তেমন কিছু বলিবার নাই । যে সকল ভিন দেশে মুসলিম ধর্মের প্রভাব রহিয়াছে তাহাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য রহিয়াছে পরম্পরায় । অর্থনীতির যেহেতু রাম রহিম নাই , কেবল ডলার দিনার রুপি রুবল তাই ভারত দেশ হিন্দু থাকিল কি সহাবস্থানের ধর্ম নিরপেক্ষ থাকিল তাহাতে ভিন দেশের বাণিজ্য প্রভাবিত হয় নাই । তবে মাঝে মাঝে আমেরিকার সংসদে ভারত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হইতেছেন বলিয়া কথাবার্তা হইতো । তবে নয়া দিল্লী এই সকল বিষয় কখনই গায়ে মাখে নাই । কিন্তু ইদানীং মধ্য প্রাচ্যে বা আরবে যাহা শুরু হইয়াছে তাহা কি গায়ে না মাখিয়া থাকা সম্ভব হইবে মোদি কিংবা ভারত সরকারের জন্য ? গত আট বৎসরে আমরা দেখিয়াছি বিজেপির প্রবক্তা যাহারা নানান টিভি শোগুলিকে আলোকিত করিয়া থাকেন তাহারা বরাবর ইসলামফোবিয়ায় ভুগিতে থাকেন ।
কিন্তু নবি লইয়া অপবাক্যে ইরানও এইবার ভারত বিরোধিতায় আমিরশাহি , লিবিয়া , কাতার , কুয়েত , ওমান , সৌদি আরব , বাহরিন সকলেই প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়াছে । দাবি করিয়াছে এই ধরনের কুবাক্য ব্যবহারের কারণে ভারতকে ক্ষমা চাইতে হইবে ।এইবার প্রশ্ন আসিতেছে , বিজেপির বক্তব্য তো ভারত দেশের বক্তব্য নয় । বিজেপির দুই মুখপাত্র যাহা বলিয়াছেন তাহা সেই দলের নীতি অনুযায়ীই বলিয়াছেন , তাহাতে সন্দেহ নাই । কিন্তু এই বক্তব্যের সহিত দেশের সিংহভাগ মানুষের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ নাই । বিজেপি এই দেশে মারাত্মক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লইয়া সরকার গড়িলেও শতকরা হিসাবে তাহাদের প্রাপ্ত ভোটের হার নিতান্তই কম । তাছাড়া এই বক্তব্য যেহেতু ভারত সরকারেরও নহে তাই সরকার এই ক্ষেত্রে ইচ্ছা করিলেও ক্ষমা চাইতে পারিবে না । তবে এই ক্ষেত্রেও দেখা গেছে নবি লইয়া অপমানজনক বক্তব্যের দশদিন পরেও প্রধানমন্ত্রীর কিন্তু কোনও বক্তব্য নাই । বিদেশে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দলের দুই মুখপাত্রের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা লওয়া হয় । কিন্তু আইনি ব্যবস্থা লওয়ার পরিবর্তে দুই জনকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিয়াছে সরকার । এই ঘটনায় সেই সকল দেশে ভারতীয় পণ্যের বিক্রয় যেমন কমিতে থাকিবে বা বন্ধ হইবে তেমনি আশঙ্কা রহিয়াছে সেই সকল দেশে চাকরি , ব্যবসার সহিত জড়িত লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের ভবিষ্যৎ লইয়া । তাহাদের কথা কে ভাবিবেন ?
প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…
অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেররাজধানী শহর আগরতলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উড়াল সেতু। শহরের পশ্চিম…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেরসরকারী স্কুলে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ হতেই রাজ্যের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উপর জুলুমের অভিযোগ উঠেছে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একটি প্রতীককে ত্রিপুরা সরকারের রাজ্য প্রতীক/লোগো হিসেবে ব্যবহারের…
অনলাইন প্রতিনিধি :-সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই বিজেপির দশটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নামে চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে।…