উচ্চশিক্ষায় বেহাল অবস্থা।

 উচ্চশিক্ষায় বেহাল অবস্থা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

খবরে প্রকাশ, রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় বেহাল দশা চলছে।কলেজগুলিতে ফ্যাকাল্টি নেই, পরিকাঠামোর বড়ই অভাব। ফলে স্বভাবতই রাজ্যে উচ্চশিক্ষার হাল বেহাল তা বলাই বাহুল্য।এ বছর থেকে রাজ্যে নয়া শিক্ষানীতি চালু হচ্ছে কলেজগুলিতে।নয়া শিক্ষানীতি দেশে ২ বছর আগেই চালু হয়েছে। তবে এতদিন এ নিয়ে নানা আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেমিনার, মতামত, স্কুল কলেজগুলিতে পরিকাঠামো বৃদ্ধি, ফ্যাকাল্টি নিয়োগ, নতুন নতুন বিভাগ চালু ইত্যাদি নিয়ে নানা কথা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডাররা তা জেনেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু সমস্যা হলো দুর্বল পরিকাঠামো ব্যবস্থায় জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগ কতখানি ফলপ্রসূ হবে। রাজ্যের কলেজগুলির কথা ধরলে কোথাও ফ্যাকাল্টি নেই প্রয়োজন অনুসারে।ইউজিসির গাইডলাইন অনুযায়ী তো নেই-ই।তাহলে স্বভাবতই বোঝা যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রাজ্যে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে রাজ্যের অগণিত উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীকে। ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী পিছু একজন অধ্যাপক/অধ্যাপিকা থাকার কথা। অথচ সেই জায়গায় ১৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্যও একজন অধ্যাপক/অধ্যাপিকা নেই।এমন অবস্থা চলছে রাজ্যে।এই অবস্থায় নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে রাজ্যে এবং খুব শীঘ্রই রাজ্যের সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে পঠনপাঠনও শুরু হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বর্তমানে ২৫টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে।নয়া শিক্ষানীতি চালু হলে ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি অর্জনের সময়সীমা থাকছে চার বছরের। তবে চতুর্থবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী পড়বে কি না তা নির্ভর করছে পরপর তিন বছর তারা কী রকম ফলাফল করছে তার উপর।তিন বছরে ন্যূনতম ৭৫% নম্বর না পেলে চতুর্থবর্ষের জন্য তারা ছাড়পত্র পাবে না ।এই অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য দরকার ভালোভাবে পড়াশোনা। আর তার জন্য প্রয়োজন প্রয়োজনীয় সংখ্যক অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। কিন্তু সেই পরিকাঠামোর বড়ই অভাব রাজ্যে। গত কয়েক বছরে শুধু কলেজই বেড়েছে। কিন্তু সেই অর্থে অধ্যাপক/অধ্যাপিকা নিয়োগ নেই। নেই অন্যান্য সহযোগী কর্মী নিয়োগও। ফলে কলেজগুলিতে নেই আর নেইর তালিকা ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে। সরাসরি এর প্রভাব এসে পড়ছে উচ্চশিক্ষায়।শুধু কলা কিংবা বাণিজ্য বিভাগই নয়, বিজ্ঞান বিভাগও বেহাল হয়ে পড়ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু প্র্যাকটিকেল করার পরিকাঠামোর অভাব কলেজগুলিতে। প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান বিভাগের কলেজ শিক্ষক/শিক্ষিকাও নেই। নেই-এর তালিকায় রয়েছে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক পাখা, লাইট ইত্যাদিও।
পরিকাঠামোগত এই সমস্ত ত্রুটি থাকলেও কলেজগুলি কিন্তু ভর্তি ফি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ঠিকই আদায় করে ছাড়ছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে,একদিকে রাজ্যের কলেজগুলিতে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করা হচ্ছে, ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ নেই। অথচ রাজ্যে নেট, সেট, পিএইচডি করা উচ্চশিক্ষিত যুবক/যুবতীর অভাব নেই। সেই তুলনায় নিয়োগ নেই। ছাত্র-ছাত্রী যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক তাদের ভবিষ্যৎ এক অজানা আশঙ্কার দিকে যাচ্ছে।উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতি অবিলম্বে প্রণয়ন করা দরকার রাজ্যে। বর্তমানে রাজ্যে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে সবসময়ের মন্ত্রী নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী।
তার নানা ব্যস্ততা রয়েছে। ফলে তিনি এই দপ্তরে ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে হয়তো পারছেন না। ডিরেক্টর যিনি রয়েছেন তিনিও পুনর্বহাল হয়েছেন। অর্থাৎ চাকরির পরবর্তীতে তিনি এক্সটেনশনে রয়েছেন।এই অবস্থায় পূর্ণ সময়ের যেমন মন্ত্রী প্রয়োজন দপ্তরে সঠিকভাবে দেখভালের জন্য, তেমনি উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। কেননা এর সাথে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ জড়িত।
ফ্যাকাল্টি নিয়োগ থেকে শুরু করে কলেজগুলির পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে সরকারকে অধিক মনোনিবেশ করতে হবে।কেননা শিক্ষার সঙ্গে কোনও আপস নয়। যেখানে দীর্ঘদিন পরে দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।জাতীয় শিক্ষানীতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটাতে গেলে সর্বক্ষেত্রেই সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষাকে বাদ দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সরকারকে
এদিকে অবিলম্বে নজর দিতে হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.